যুক্তরাষ্ট্র যখন ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশে উন্নীত করল, তখন থেকেই ভারতীয় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বিকল্প খুঁজতে শুরু করেছে। বিশেষ করে যেসব ব্যবসার মার্কিন বাজারে উল্লেখযোগ্য রপ্তানি রয়েছে, তারা এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন বা স্থানান্তরের পথে এগোচ্ছে।
প্রথম ধাপে ২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণার পরও অনেক ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ভেবেছিল এটি কেবলমাত্র এক ধরনের রাজনৈতিক কৌশল। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপের শুল্ক ঘোষণার পর পরিস্থিতি আরও স্পষ্ট হয়ে যায়। কোনো সমঝোতা না হওয়ার কারণে এখন তারা ইউএই-তে যৌথ বিনিয়োগ ও উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য আলোচনা শুরু করেছে।
সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে স্বর্ণালংকার রপ্তানি
ভারতের গহনা রপ্তানি খাতই সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত শুল্কের কারণে তাদের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিযোগিতার বাইরে চলে যেতে পারে। অনেক প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে দুবাইয়ে নকশা ও উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
তবে দুবাইয়ের কঞ্জ জুয়েলার্সের মালিক অনিল ধানক মনে করেন, সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তার ভাষায়, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দ্রুত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারেন। তাই অন্তত এক মাস অপেক্ষা করে পরিস্থিতি বোঝাই ভালো।”

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
এসপিআই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ম্যানেজিং পার্টনার স্টিফেন ইনেস বলেন, “এটি শুধু শুল্ক নয়, বরং ভারতীয় রপ্তানির জন্য দীর্ঘদিনের বাজার থেকে উচ্ছেদের মতো।”
তবে ফার্মাসিউটিক্যালস এবং প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট পণ্য এই শুল্কের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, ভারতের অ্যাপল ফ্যাক্টরিতে তৈরি আইফোন যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠাতে কোনো বাড়তি শুল্ক দিতে হবে না।
শুল্ক ঘোষণার পর ভারতীয় রুপির দরপতন হয়েছে এবং সেনসেক্স সূচকও ১ শতাংশের বেশি কমেছে।
ইউএই বিকল্প কেন্দ্র হিসেবে
যদি ভারতীয় কোম্পানিগুলো ইউএই-তে উৎপাদন স্থানান্তর করতে পারে, তবে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ক ১০ শতাংশে সীমাবদ্ধ থাকবে। তবে শর্ত হলো, উৎপাদন ও মূল্য সংযোজনের কাজ ইউএই-তেই হতে হবে।
বারজিল জিওজিট ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের প্রধান নির্বাহী কৃষ্ণন রামচন্দ্রন বলেন, “যদি সঠিকভাবে উৎপাদন প্রক্রিয়া এখানে সম্পন্ন হয়, তাহলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্রে অনেক সুবিধাজনক শুল্কহার পাবে।”

ইউএই-তে ভারতীয় আগ্রহ বাড়ছে
সোভেরেইন গ্রুপের সিনিয়র বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার অকসানা সুকহার জানান, “ইতিমধ্যে ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠার মোট অনুসন্ধানের প্রায় ৫ শতাংশ এসেছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান থেকে। এখন শুল্ক বৃদ্ধির কারণে তাদের মধ্যে নতুন করে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।”
ভেঙ্কটেশ সান্থানাম, এমসিএ গালফের ম্যানেজিং পার্টনার এবং আইবিপিসি দুবাইয়ের সাবেক সমন্বয়ক বলেন, “টেক্সটাইল, ধাতু, প্রকৌশল পণ্য, কেমিক্যাল, ওষুধ এবং আইটি-সেবা খাতে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর ইউএই-তে আগেই উপস্থিতি আছে। তারা এ পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে।”
উৎপাদনের শর্ত ও কৌশল
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক এড়াতে ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে স্থানীয় উৎপাদনে অন্তত ৩৫-৪০ শতাংশ মূল্য সংযোজন দেখাতে হবে। অর্থাৎ, শেষ ধাপের উৎপাদন, অ্যাসেম্বলি বা প্যাকেজিংয়ের মতো কাজগুলো ইউএই-তেই সম্পন্ন করতে হবে। এজন্য অনেকে এখন সরবরাহ চেইন পুনর্গঠন করছে এবং স্থানীয় যৌথ উদ্যোগ গড়ার পরিকল্পনা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বাড়ানোয় ভারতীয় রপ্তানি খাতে বড় ধাক্কা লেগেছে। তবে ইউএই বিকল্প উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে তাদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোচ্ছে, যাতে মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতা ধরে রাখা যায়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















