০৩:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বিশ্ব সঙ্গীতে এআই-এর সৃজনশীল ঢেউ আইএফএ বার্লিন ২০২৫: যে গ্যাজেটগুলো নিয়ে সবার আলোচনা এআই প্রশিক্ষণে আইনি নজির: লেখকদের সাথে Anthropic-এর $১.৫ বিলিয়ন সমঝোতা যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় আকাশ হামলা লন্ডনের ডানপন্থী সমাবেশে সহিংসতা, রেকর্ড সমাগমে উত্তেজনা দোহায় হামাস নেতাদের ওপর হামলা, যুদ্ধবিরতির আলাপ জটিলতায় নতুন গবেষণা: আটলান্টিক প্রবাহ ভাঙার ঝুঁকি এখন অনেক বেশি” ডাকসু ও জাকসুতে বৈষম্যবিরোধীদের বিপর্যয়, চ্যালেঞ্জের মুখে এনসিপি? জাতীয় নির্বাচনকে ডাকসুর সঙ্গে মেলানো যাবে না, মডেল হিসেবে কাজ করবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হার – আকাশ চোপড়া-অশ্বিনকেই ‘সঠিক’ প্রমাণ করছে বাংলাদেশ?

এ.আই. দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পকর্মে নতুন জীবন

ইতালির এক ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যাওয়া গির্জার চিত্রকর্ম পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় যুক্ত হয়েছেন প্রযুক্তি গবেষক অ্যালেক্স কাচকিন। তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এ.আই.) ব্যবহার করে এমন এক পদ্ধতি তৈরি করেছেন যা চিত্রকর্মকে নতুনভাবে জীবন্ত করে তুলতে পারে, অথচ মূল কাজের উপর স্থায়ী কোনো প্রভাব ফেলে না।

ক্ষতির ইতিহাস
২০১৬ সালে ইতালির কাম্পি শহরে ভূমিকম্পে সান সালভাতোরে চার্চ প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। এর ১৫শ শতাব্দীর ফ্রেস্কোচিত্র ভেঙে অসংখ্য টুকরোয় পরিণত হয়। ইতালির সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সংরক্ষণবিদরা তখন থেকে এসব টুকরো জোড়া লাগানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু অধিকাংশ জায়গায় ছবি নেই, কেবল বিচ্ছিন্ন অংশ রয়ে গেছে। তাদের কাজ হলো, যা অবশিষ্ট আছে এবং যা চিরতরে হারিয়ে গেছে—তার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করা।

এ.আই. প্রযুক্তির আগমন
২৫ বছর বয়সী এমআইটির গবেষক অ্যালেক্স কাচকিন হঠাৎ করেই শিল্প জগতে আলোচনায় আসেন। তিনি এক প্রোগ্রাম তৈরি করেন যা ক্ষতির ধরন বিশ্লেষণ করে এবং একটি অতি পাতলা মুখোশ বা মাস্কে পুনর্গঠিত অংশ মুদ্রণ করে। এই মাস্ক মূল ছবির উপর রাখা যায়, ফলে কাজটি সম্পূর্ণ দেখায়, আবার সহজেই সরিয়েও ফেলা যায় যাতে আসলটি অক্ষত থাকে।

এই মাস্ক তৈরি করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কয়েক ঘণ্টায় ৫৫ হাজার রঙ ব্যবহার করে এবং প্রচলিত পুনর্গঠনের চেয়ে প্রায় ৬৫ গুণ দ্রুত কাজ করে। এ প্রকল্পটি ছিল তাঁর একধরনের শখ, কিন্তু তা দ্রুত বিশ্বজুড়ে সংরক্ষণবিদদের দৃষ্টি কাড়ে।

প্রযুক্তি থেকে শিল্পে প্রয়োগ
কাচকিন সাধারণত মাইক্রোচিপ তৈরির জন্য ইলেকট্রন বিম প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেন, যেখানে উচ্চমাত্রার নিখুঁততা জরুরি। তিনি জানান, এই নির্ভুলতার কৌশলগুলো শিল্প সংরক্ষণেও কার্যকর হতে পারে।

সংরক্ষণের দৃষ্টিভঙ্গি
বিশ্বজুড়ে সংরক্ষণবিদদের মধ্যে সবসময় দ্বন্দ্ব থাকে—কেউ চান মূল কাজ অক্ষত রেখে হালকা হাতের ছোঁয়া, কেউ আবার চান পুরনো শিল্পকে পূর্ণ জৌলুসে ফিরিয়ে আনা। নরওয়ের অসলো সাংস্কৃতিক ইতিহাস জাদুঘরের রসায়নবিদ হার্টমুট কুটজকের মতে, কাচকিনের পদ্ধতি দুই ধারার মধ্যে এক সেতুবন্ধন তৈরি করতে পারে, কারণ এটি সম্পূর্ণ পুনর্গঠন করলেও তা অপসারণযোগ্য। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ আবার বলেন, শিল্পকর্ম বয়সের ছাপ বহন করবে, সেটিও তার প্রকৃত সৌন্দর্যের অংশ।

ইতালির অবস্থান
ইতালির সরকারি সংরক্ষণবিদরা কঠোর নিয়ম মেনে কাজ করেন। সব পরিবর্তন হতে হবে দৃশ্যমান ও প্রত্যাবর্তনযোগ্য, যাতে ভবিষ্যতের গবেষকরা বিভ্রান্ত না হন। তবে ইতালির সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট ফর রেস্টোরেশন (আই.সি.আর.) নতুন প্রযুক্তি গ্রহণেও উন্মুক্ত। তারা মনে করছে, কাচকিনের এ.আই. পদ্ধতি শুধু গবেষণায় নয়, সরাসরি পুনর্গঠনের কাজেও সহায়ক হতে পারে।

কাজের ধাপ
মাস্কটি তৈরি হলে তা বিশেষ সংরক্ষণ বার্নিশ দিয়ে ছবির উপর বসানো হয়। এটি শক্তভাবে আঁটলেও স্বচ্ছ থাকে, ফলে মূল ছবি ঢেকে যায় না। আবার সহজেই খোলা যায়। সান সালভাতোরে চার্চের মতো বৃহৎ পুনর্গঠন প্রকল্পে এটি আশার সঞ্চার করেছে।

এখন কাচকিন ইতালির নীতিমালা মেনে কোড তৈরি করছেন, যেখানে “ত্রাতেজ্জিও” কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। এই কৌশলে পুনর্গঠিত অংশ সমান্তরাল রেখায় আঁকা হয়, যাতে কাছ থেকে দেখলে বোঝা যায় কোন অংশ নতুন, কিন্তু দূর থেকে শিল্পকর্ম সম্পূর্ণ মনে হয়।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
অস্ট্রিয়ার শিল্পবস্তু ব্যবসায়ী মার্ক মেলিচ-মাউটনারের মতে, এ পদ্ধতি ভবিষ্যতে শিল্প সংরক্ষণে বিপ্লব আনতে পারে। এটি দ্রুততর, কম খরচে এবং অধিক শিল্পকর্মকে জনসাধারণের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হবে। তবে এর জন্য শিল্প বিশেষজ্ঞ ও প্রযুক্তিবিদ উভয়ের দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা প্রয়োজন।

অ্যালেক্স কাচকিনের উদ্ভাবন এখনো সূচনালগ্নে, তবে এটি শিল্প সংরক্ষণের ধারণাকে বদলে দিতে পারে। হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতির টুকরো একদিন হয়তো প্রযুক্তির হাত ধরে ফিরে আসবে নতুন আলোয়।

বিশ্ব সঙ্গীতে এআই-এর সৃজনশীল ঢেউ

এ.আই. দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পকর্মে নতুন জীবন

০২:০০:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৫

ইতালির এক ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যাওয়া গির্জার চিত্রকর্ম পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় যুক্ত হয়েছেন প্রযুক্তি গবেষক অ্যালেক্স কাচকিন। তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এ.আই.) ব্যবহার করে এমন এক পদ্ধতি তৈরি করেছেন যা চিত্রকর্মকে নতুনভাবে জীবন্ত করে তুলতে পারে, অথচ মূল কাজের উপর স্থায়ী কোনো প্রভাব ফেলে না।

ক্ষতির ইতিহাস
২০১৬ সালে ইতালির কাম্পি শহরে ভূমিকম্পে সান সালভাতোরে চার্চ প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। এর ১৫শ শতাব্দীর ফ্রেস্কোচিত্র ভেঙে অসংখ্য টুকরোয় পরিণত হয়। ইতালির সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সংরক্ষণবিদরা তখন থেকে এসব টুকরো জোড়া লাগানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু অধিকাংশ জায়গায় ছবি নেই, কেবল বিচ্ছিন্ন অংশ রয়ে গেছে। তাদের কাজ হলো, যা অবশিষ্ট আছে এবং যা চিরতরে হারিয়ে গেছে—তার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করা।

এ.আই. প্রযুক্তির আগমন
২৫ বছর বয়সী এমআইটির গবেষক অ্যালেক্স কাচকিন হঠাৎ করেই শিল্প জগতে আলোচনায় আসেন। তিনি এক প্রোগ্রাম তৈরি করেন যা ক্ষতির ধরন বিশ্লেষণ করে এবং একটি অতি পাতলা মুখোশ বা মাস্কে পুনর্গঠিত অংশ মুদ্রণ করে। এই মাস্ক মূল ছবির উপর রাখা যায়, ফলে কাজটি সম্পূর্ণ দেখায়, আবার সহজেই সরিয়েও ফেলা যায় যাতে আসলটি অক্ষত থাকে।

এই মাস্ক তৈরি করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কয়েক ঘণ্টায় ৫৫ হাজার রঙ ব্যবহার করে এবং প্রচলিত পুনর্গঠনের চেয়ে প্রায় ৬৫ গুণ দ্রুত কাজ করে। এ প্রকল্পটি ছিল তাঁর একধরনের শখ, কিন্তু তা দ্রুত বিশ্বজুড়ে সংরক্ষণবিদদের দৃষ্টি কাড়ে।

প্রযুক্তি থেকে শিল্পে প্রয়োগ
কাচকিন সাধারণত মাইক্রোচিপ তৈরির জন্য ইলেকট্রন বিম প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেন, যেখানে উচ্চমাত্রার নিখুঁততা জরুরি। তিনি জানান, এই নির্ভুলতার কৌশলগুলো শিল্প সংরক্ষণেও কার্যকর হতে পারে।

সংরক্ষণের দৃষ্টিভঙ্গি
বিশ্বজুড়ে সংরক্ষণবিদদের মধ্যে সবসময় দ্বন্দ্ব থাকে—কেউ চান মূল কাজ অক্ষত রেখে হালকা হাতের ছোঁয়া, কেউ আবার চান পুরনো শিল্পকে পূর্ণ জৌলুসে ফিরিয়ে আনা। নরওয়ের অসলো সাংস্কৃতিক ইতিহাস জাদুঘরের রসায়নবিদ হার্টমুট কুটজকের মতে, কাচকিনের পদ্ধতি দুই ধারার মধ্যে এক সেতুবন্ধন তৈরি করতে পারে, কারণ এটি সম্পূর্ণ পুনর্গঠন করলেও তা অপসারণযোগ্য। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ আবার বলেন, শিল্পকর্ম বয়সের ছাপ বহন করবে, সেটিও তার প্রকৃত সৌন্দর্যের অংশ।

ইতালির অবস্থান
ইতালির সরকারি সংরক্ষণবিদরা কঠোর নিয়ম মেনে কাজ করেন। সব পরিবর্তন হতে হবে দৃশ্যমান ও প্রত্যাবর্তনযোগ্য, যাতে ভবিষ্যতের গবেষকরা বিভ্রান্ত না হন। তবে ইতালির সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট ফর রেস্টোরেশন (আই.সি.আর.) নতুন প্রযুক্তি গ্রহণেও উন্মুক্ত। তারা মনে করছে, কাচকিনের এ.আই. পদ্ধতি শুধু গবেষণায় নয়, সরাসরি পুনর্গঠনের কাজেও সহায়ক হতে পারে।

কাজের ধাপ
মাস্কটি তৈরি হলে তা বিশেষ সংরক্ষণ বার্নিশ দিয়ে ছবির উপর বসানো হয়। এটি শক্তভাবে আঁটলেও স্বচ্ছ থাকে, ফলে মূল ছবি ঢেকে যায় না। আবার সহজেই খোলা যায়। সান সালভাতোরে চার্চের মতো বৃহৎ পুনর্গঠন প্রকল্পে এটি আশার সঞ্চার করেছে।

এখন কাচকিন ইতালির নীতিমালা মেনে কোড তৈরি করছেন, যেখানে “ত্রাতেজ্জিও” কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। এই কৌশলে পুনর্গঠিত অংশ সমান্তরাল রেখায় আঁকা হয়, যাতে কাছ থেকে দেখলে বোঝা যায় কোন অংশ নতুন, কিন্তু দূর থেকে শিল্পকর্ম সম্পূর্ণ মনে হয়।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
অস্ট্রিয়ার শিল্পবস্তু ব্যবসায়ী মার্ক মেলিচ-মাউটনারের মতে, এ পদ্ধতি ভবিষ্যতে শিল্প সংরক্ষণে বিপ্লব আনতে পারে। এটি দ্রুততর, কম খরচে এবং অধিক শিল্পকর্মকে জনসাধারণের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হবে। তবে এর জন্য শিল্প বিশেষজ্ঞ ও প্রযুক্তিবিদ উভয়ের দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা প্রয়োজন।

অ্যালেক্স কাচকিনের উদ্ভাবন এখনো সূচনালগ্নে, তবে এটি শিল্প সংরক্ষণের ধারণাকে বদলে দিতে পারে। হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতির টুকরো একদিন হয়তো প্রযুক্তির হাত ধরে ফিরে আসবে নতুন আলোয়।