আরাকানে তীব্র খাদ্য সংকট
মিয়ানমারের আরাকান অঞ্চল বর্তমানে তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সংঘাত এবং সীমান্তে কড়া নিয়ন্ত্রণের কারণে সাধারণ মানুষের জন্য খাদ্য সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাজারে চাল, ডাল, তেল, লবণ ও শুকনো খাদ্যদ্রব্যের দাম আকাশচুম্বী। এমন পরিস্থিতিতে আরাকানের মানুষ প্রতিদিন অনাহার ও অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে।
সীমান্তপথে রাতের চোরাচালান
বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কিছু এলাকায় এ সংকটকে কাজে লাগাচ্ছে চোরাকারবারিরা। দিনে সীমান্তে কড়া নজরদারি থাকলেও রাত নামলেই পরিস্থিতি বদলে যায়। অন্ধকারের আড়ালে বাংলাদেশের ভেতরের দালাল-চক্র সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম থেকে খাদ্যপণ্য সংগ্রহ করে। এরপর ছোট নৌকা, ভেলা কিংবা গোপন বনপথ ব্যবহার করে খাদ্য সামগ্রী সীমান্ত পার করে আরাকানে পাচার করা হয়।

বাংলাদেশি ও আরাকানি দালালের যোগসাজশ
চোরাচালান প্রক্রিয়ায় দুই দেশের দালাল চক্র একসঙ্গে কাজ করে। বাংলাদেশি দালালরা চাল, আটা, ডাল, ভোজ্যতেল, শুকনো মরিচ, নুডলস, বিস্কুট ও লবণ সরবরাহ করে। সীমান্ত পেরিয়ে এগুলো গ্রহণ করে আরাকানি দালালরা। পরে তারা দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণ দামে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে। ফলে আরাকানের দরিদ্র মানুষের পক্ষে খাবার কেনা আরও কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।
ঝুঁকি ও গোপন কৌশল
চোরাচালানকারীরা ধরা পড়ার ঝুঁকি এড়াতে নানা কৌশল ব্যবহার করে। কেউ রাতের আঁধারে সীমান্ত নদীতে ভেলা চালায়, কেউ গরু-ছাগলের পাল নিয়ে যাওয়ার আড়ালে খাদ্যের বোঝা লুকিয়ে রাখে। অনেক সময় সাধারণ যাত্রী সেজে পরিবার-পরিজনকে সামনে রেখে সীমান্ত পাড়ি দেওয়া হয়। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নজরদারি ফাঁকি দিতে তারা বড় অঙ্কের ঘুষও দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় মানুষের সাক্ষ্য ও কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া
সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে বসবাসকারী মানুষ বলছেন, আরাকানের মানুষের দুর্দশা এতটাই তীব্র যে তারা প্রায়ই খাদ্যের জন্য আকুতি জানায়। স্থানীয় এক কৃষক বলেন, “ওরা নদীর ওপার থেকে সিগনাল দেয়, কখনো টর্চ জ্বালায়। বুঝতে পারি খাবারের জন্য মরিয়া হয়ে আছে। অনেক সময় মানবিক কারণে লোকজন চাল বা লবণ দিতেও বাধ্য হয়।” আবার এক সীমান্ত ব্যবসায়ী দাবি করেন, “আমাদেরও পরিবার চালাতে হয়। সরকার যদি বিকল্প আয়-রোজগারের ব্যবস্থা করত, আমরা এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নামতাম না।”

অন্যদিকে সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) বলছে, তারা প্রতিদিনই খাদ্যপণ্য চোরাচালান রোধে অভিযান চালাচ্ছে। বিজিবির এক কর্মকর্তা জানান, “মানবিক সংকট আমরা বুঝি, কিন্তু খাদ্য চোরাচালান সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য হুমকি। আমরা চেষ্টা করছি মানবিক দিক বিবেচনা করেও চক্রগুলোকে দমন করতে।”
মানবিক সহায়তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ সমস্যার সমাধান একা সীমান্ত কঠোর করে সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বাংলাদেশের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম আরাকানে পৌঁছাতে পারলে খাদ্য সংকট কিছুটা হলেও কমতে পারত। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে এই সহায়তা সীমিত রয়েছে। এর সুযোগেই চোরাচালানকারীরা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
মানবিক সংকটের সুযোগ নেওয়া
এভাবে আরাকানের মানবিক বিপর্যয়ের সুযোগ নিচ্ছে সীমান্ত পারের দালাল-চক্র। একদিকে আরাকানের জনগণ অনাহারে কষ্ট পাচ্ছে, অন্যদিকে দালালরা রাতের অন্ধকারে লাখ লাখ টাকার ব্যবসা গড়ে তুলছে। সীমান্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ বলছে, সরকার যদি সীমান্তে কঠোর ব্যবস্থা নিত এবং মানবিক সহায়তা বাড়াত, তবে এই চোরাচালান বন্ধ করা যেত।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 






















