আদালতের শুনানি ও রায়ের অপেক্ষা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ফেডারেল রিজার্ভ গভর্নর লিসা কুককে বরখাস্ত করার প্রচেষ্টা নিয়ে ওয়াশিংটন ডিসির আদালতে শুক্রবার অনুষ্ঠিত শুনানি কোনো তাৎক্ষণিক রায় ছাড়াই শেষ হয়েছে। ফলে আপাতত কুক তাঁর পদে বহাল থাকছেন।
দুই ঘণ্টার মৌখিক যুক্তিতর্ক শেষে জেলা আদালতের বিচারক জিয়া কাব্ব কুকের আইনজীবীদের আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে বিস্তারিত লিখিত যুক্তি জমা দিতে নির্দেশ দেন।
ফেডের স্বাধীনতা নিয়ে শঙ্কা
এই মামলার পরিণতি শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে গড়াতে পারে। এর মধ্য দিয়ে ফেডের নীতি নির্ধারণে হোয়াইট হাউসের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা দেখা দিলে তা শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
ফেড বলেছে, আদালতের যেকোনো সিদ্ধান্ত তারা মেনে নেবে। এখনো কুককে তাদের ওয়েবসাইটে সক্রিয় গভর্নর এবং বিভিন্ন কমিটির সদস্য হিসেবে তালিকাভুক্ত রাখা হয়েছে।
ট্রাম্প কুককে অপসারণের ঘোষণা দেওয়ার পর মার্কিন ডলারের মান প্রধান মুদ্রাগুলোর বিপরীতে কিছুটা নেমে যায়।

কুকের মামলা ও অভিযোগের জবাব
কুক বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ও ফেডের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ট্রাম্প যে মর্টগেজ জালিয়াতির কথা বলছেন, তা তাঁর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যোগদানের আগের সময়ের এবং সেটি অপসারণের বৈধ কারণ হতে পারে না। বরং সুদের হার কমানো নিয়ে ভিন্নমতের কারণে তাঁকে সরানোর চেষ্টা হচ্ছে।
শুনানিতে কুকের আইনজীবী অ্যাবে লোয়েল বলেন, “প্রেসিডেন্টের কাছে ‘কারণ’ মানে হলো, তিনি সুদের হার কমানোর প্রস্তাবে সায় দিচ্ছেন না।” কুক সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এগুলো ভিত্তিহীন এবং প্রমাণহীন।
ট্রাম্প ও ফেডের নীতি দ্বন্দ্ব
ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদ থেকেই ফেডের সুদের হার নীতি নিয়ে বিরক্ত ছিলেন এবং ২০২৫ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর আবারও তীব্র সমালোচনা শুরু করেন। তিনি ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকেও আক্রমণ করেছেন। যদিও এবার তাঁকে সরানোর হুমকি দেননি।
২০২৪ সালে ফেড তিনবার সুদের হার কমালেও ডিসেম্বরের পর থেকে স্থিতিশীল রেখেছে। কারণ ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক বাণিজ্যনীতি মুদ্রাস্ফীতি বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল। কুক প্রতিবারই পাওয়েল ও অন্য সদস্যদের সঙ্গে একমত হয়ে ভোট দেন।

আগামী ১৬-১৭ সেপ্টেম্বরের বৈঠকে ফেড আবারও সামান্য হারে সুদ কমাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু ট্রাম্প আরও বড় আকারে সুদ কমানোর দাবি তুলেছেন।
অপসারণের আইনগত ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন
ফেড আইন অনুযায়ী গভর্নরকে কেবল ‘কারণে’ অপসারণ করা যায়। তবে ‘কারণ’ শব্দটির স্পষ্ট সংজ্ঞা নেই। এ পর্যন্ত কোনো প্রেসিডেন্ট কখনো কোনো ফেড গভর্নরকে সরাননি, তাই বিষয়টি আদালতে নতুনভাবে পরীক্ষা হবে।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, কুক ২০২১ সালে মিশিগান ও জর্জিয়ার দুটি বাড়িকে আলাদা সময়ে ‘প্রধান আবাস’ হিসেবে দেখিয়ে মর্টগেজ আবেদন করেছিলেন, যাতে তিনি কম সুদের সুবিধা পান।
কুকের বক্তব্য, অভিযোগ সত্য হলেও সেটা তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার আগের সময়ের এবং অপসারণের কারণ হতে পারে না।

প্রশাসনের পাল্টা যুক্তি
ট্রাম্প প্রশাসনের আইনজীবীরা বলছেন, মর্টগেজ জালিয়াতির অভিযোগ নিজেই যথেষ্ট গুরুতর এবং ফেড গভর্নরকে সরানোর বৈধ কারণ হতে পারে। তাঁদের মতে, ফেড গভর্নরদের বিশেষ সুরক্ষা দেওয়া প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক ক্ষমতার পরিপন্থী।
ট্রাম্পের নিয়োগপ্রাপ্ত ফেডারেল হাউজিং ফাইন্যান্স এজেন্সির পরিচালক উইলিয়াম পুল্টে এই মাসের শুরুর দিকে কুকের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলেন এবং শুক্রবার আবার মন্তব্য করেন, “আমি বিশ্বাস করি, লিসা কুক ফেডারেল রিজার্ভ ও মর্টগেজ বাজারের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছেন।”
সুপ্রিম কোর্টে সম্ভাব্য লড়াই
কুকের আইনজীবীরা পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন, অন্যান্য সংস্থার কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে ‘কারণ’ বলতে দায়িত্বে থাকার সময়ের অবহেলা, অনিয়ম বা অদক্ষতাকে বোঝানো হয়। একই নিয়ম ফেডের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়া উচিত।
সুপ্রিম কোর্ট পূর্ববর্তী রায়ে কিছু কর্মকর্তাকে ট্রাম্পের অপসারণের অনুমতি দিলেও ফেডকে এর বাইরে রেখেছিল, কারণ এটি দীর্ঘ ঐতিহাসিক স্বাধীনতা বজায় রেখেছে।
যদি কুককে অপসারণ করা হয়, তবে সাত সদস্যের বোর্ডে ট্রাম্প তাঁর চতুর্থ নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















