১২:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
গোপন সসের নিরাপত্তায় নতুন জোর দিচ্ছে রেইজিং কেইন’স  সিডনিতে জমজমাট ২০২৫ এআরআইএ অ্যাওয়ার্ড, এগিয়ে নিনাজারাচি ও ডম ডোলা তাইওয়ানের স্যাটেলাইট যুগের সূচনা: স্পেসএক্স উৎক্ষেপণে বড় অগ্রগতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৯) শেয়ারবাজারে টানা উত্থান, বিনিয়োগকারীদের মনোভাব আরও ইতিবাচক সিরাজগঞ্জে ব্র্যাক–ফিলিপস ফাউন্ডেশনের নতুন চার হেলথ সেন্টার প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কমলেও আস্থার লড়াইয়ে এগোচ্ছে চীন কাশ্মীরি মানেই সন্ত্রাসী নন- ওমর আব্দুল্লাহ গোপন সস রক্ষায় কঠোর নজরদারি: রেইজিং কেইনসের রহস্যময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা খাশোগি হত্যাকাণ্ডে সিআইএ–এর মূল্যায়নকে অস্বীকার করলেন ট্রাম্প

রাজনীতি: তরুণদের চোখে ঝুঁকিহীন লাভের নতুন পথ

কেন তরুণরা রাজনীতিকে লাভজনক মনে করছে

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক তরুণ, বিশেষ করে ছেলেরা, রাজনীতিকে পেশা বা ব্যবসার মতো একটি লাভজনক ক্ষেত্র হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে। এর পেছনে রয়েছে কয়েকটি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কারণ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর ২০২৩ সালের এক জরিপে দেখা যায়, দেশের ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী তরুণদের প্রায় ৪৮ শতাংশ মনে করে রাজনীতিতে সক্রিয় হলে অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত উন্নতির সুযোগ পাওয়া যায়।

চাকরির সংকট ও বেকারত্ব

দেশে উচ্চশিক্ষিত তরুণদের জন্য পর্যাপ্ত চাকরির সুযোগ নেই। সরকারি চাকরিতে প্রতিযোগিতা অত্যন্ত কঠিন—বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল প্রায় ৩ লাখ প্রার্থী, অথচ পদ ছিল মাত্র ১,৭১০টি। বেসরকারি খাতে বেতন–ভাতা ও চাকরির নিশ্চয়তা কম, অনেক ক্ষেত্রে চাকরি স্থায়ীও হয় না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, আমার বাবা চান আমি সরকারি চাকরি করিকিন্তু হাজার হাজার প্রার্থীর ভিড়ে সেটি প্রায় অসম্ভব। তাই অনেকে রাজনীতির দিকে ঝুঁকছেএখানে অন্তত প্রভাব তৈরি করলে অর্থনৈতিক স্থিতি পাওয়া তুলনামূলক সহজ।

অর্থনৈতিক সুবিধা ও সামাজিক প্রভাব

রাজনীতি শুধু ক্ষমতার সাথে নয়, অর্থনৈতিক সুযোগের সাথেও যুক্ত। নির্বাচিত বা প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা ব্যবসা, ঠিকাদারি, এমনকি প্রশাসনিক সুবিধার মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের একটি বড় অংশ ব্যবসা ও রাজনীতিকে একসাথে চালিয়ে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছেন।

ফলে তরুণদের কাছে রাজনীতি একটি “শর্টকাট রাস্তায় সফলতা” হিসেবে ধরা দিচ্ছে। একই সঙ্গে সমাজে রাজনৈতিক পরিচয় অনেক সময় সামাজিক সম্মান ও প্রভাবেরও উৎস হয়ে ওঠে।

উদ্যোক্তা হওয়ার ঝুঁকি বনাম রাজনৈতিক পথ

বাংলাদেশে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য এখনও পর্যাপ্ত সহায়তা, বিনিয়োগের নিশ্চয়তা বা বাজার সুবিধা গড়ে ওঠেনি। স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড-এর হিসাব অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে প্রায় ৭০ শতাংশ নতুন উদ্যোক্তা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারেননি। ফলে ব্যবসা শুরু করা একটি ঝুঁকিপূর্ণ পথ।

অন্যদিকে, রাজনীতি একবার জমে উঠলে সেখানে ঝুঁকির তুলনায় সুযোগ বেশি বলে মনে করছে অনেকে। চট্টগ্রামের এক তরুণ রাজনৈতিক কর্মী শামীম হাসান বলেন, ব্যবসা শুরু করলে লোকসান হওয়ার ভয় থাকে। কিন্তু রাজনীতিতে যদি নেতাকর্মীদের আস্থা অর্জন করতে পারিতখন উন্নয়ন প্রকল্প বা দলীয় সুবিধার মাধ্যমে ভালোভাবে দাঁড়ানো যায়।

প্রভাবশালী নেতাদের অনুসরণ

মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী ইতিহাস থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত রাজনীতিকে কেন্দ্র করেই দেশের বড় নেতারা অর্থ ও প্রভাব অর্জন করেছেন। এ ছাড়া গণমাধ্যমে প্রায়শই দেখা যায় রাজনৈতিক নেতাদের বিলাসবহুল জীবনধারা, গাড়ি ও প্রভাবের চিত্র।

এসব বিষয় তরুণদের মধ্যে রাজনীতির প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে দিচ্ছে। তারা মনে করছে, রাজনীতি শুধু রাষ্ট্র পরিচালনার পথ নয়, বরং দ্রুত আর্থিক ও সামাজিক উন্নতির সিঁড়ি।

বাংলাদেশি তরুণদের একটি অংশ রাজনীতিকে শুধু সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যম হিসেবে নয়, বরং লাভজনক ব্যবসা বা চাকরির বিকল্প হিসেবে দেখতে শুরু করেছে। চাকরির সংকট, অর্থনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক মর্যাদা এবং দ্রুত সফলতার আকাঙ্ক্ষা এই প্রবণতাকে ত্বরান্বিত করছে।

তবে এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিক রয়েছে—একদিকে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়ছে, অন্যদিকে এটি যদি কেবল ব্যক্তিগত লাভের উদ্দেশ্যে হয় তবে গণতন্ত্র ও জনসেবার মূল চেতনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, রাজনীতি যদি কেবল “লাভের ব্যবসা” হয়ে দাঁড়ায়, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

গোপন সসের নিরাপত্তায় নতুন জোর দিচ্ছে রেইজিং কেইন’স

রাজনীতি: তরুণদের চোখে ঝুঁকিহীন লাভের নতুন পথ

০২:১১:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কেন তরুণরা রাজনীতিকে লাভজনক মনে করছে

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক তরুণ, বিশেষ করে ছেলেরা, রাজনীতিকে পেশা বা ব্যবসার মতো একটি লাভজনক ক্ষেত্র হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে। এর পেছনে রয়েছে কয়েকটি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কারণ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর ২০২৩ সালের এক জরিপে দেখা যায়, দেশের ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী তরুণদের প্রায় ৪৮ শতাংশ মনে করে রাজনীতিতে সক্রিয় হলে অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত উন্নতির সুযোগ পাওয়া যায়।

চাকরির সংকট ও বেকারত্ব

দেশে উচ্চশিক্ষিত তরুণদের জন্য পর্যাপ্ত চাকরির সুযোগ নেই। সরকারি চাকরিতে প্রতিযোগিতা অত্যন্ত কঠিন—বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল প্রায় ৩ লাখ প্রার্থী, অথচ পদ ছিল মাত্র ১,৭১০টি। বেসরকারি খাতে বেতন–ভাতা ও চাকরির নিশ্চয়তা কম, অনেক ক্ষেত্রে চাকরি স্থায়ীও হয় না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, আমার বাবা চান আমি সরকারি চাকরি করিকিন্তু হাজার হাজার প্রার্থীর ভিড়ে সেটি প্রায় অসম্ভব। তাই অনেকে রাজনীতির দিকে ঝুঁকছেএখানে অন্তত প্রভাব তৈরি করলে অর্থনৈতিক স্থিতি পাওয়া তুলনামূলক সহজ।

অর্থনৈতিক সুবিধা ও সামাজিক প্রভাব

রাজনীতি শুধু ক্ষমতার সাথে নয়, অর্থনৈতিক সুযোগের সাথেও যুক্ত। নির্বাচিত বা প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা ব্যবসা, ঠিকাদারি, এমনকি প্রশাসনিক সুবিধার মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের একটি বড় অংশ ব্যবসা ও রাজনীতিকে একসাথে চালিয়ে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছেন।

ফলে তরুণদের কাছে রাজনীতি একটি “শর্টকাট রাস্তায় সফলতা” হিসেবে ধরা দিচ্ছে। একই সঙ্গে সমাজে রাজনৈতিক পরিচয় অনেক সময় সামাজিক সম্মান ও প্রভাবেরও উৎস হয়ে ওঠে।

উদ্যোক্তা হওয়ার ঝুঁকি বনাম রাজনৈতিক পথ

বাংলাদেশে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য এখনও পর্যাপ্ত সহায়তা, বিনিয়োগের নিশ্চয়তা বা বাজার সুবিধা গড়ে ওঠেনি। স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড-এর হিসাব অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে প্রায় ৭০ শতাংশ নতুন উদ্যোক্তা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারেননি। ফলে ব্যবসা শুরু করা একটি ঝুঁকিপূর্ণ পথ।

অন্যদিকে, রাজনীতি একবার জমে উঠলে সেখানে ঝুঁকির তুলনায় সুযোগ বেশি বলে মনে করছে অনেকে। চট্টগ্রামের এক তরুণ রাজনৈতিক কর্মী শামীম হাসান বলেন, ব্যবসা শুরু করলে লোকসান হওয়ার ভয় থাকে। কিন্তু রাজনীতিতে যদি নেতাকর্মীদের আস্থা অর্জন করতে পারিতখন উন্নয়ন প্রকল্প বা দলীয় সুবিধার মাধ্যমে ভালোভাবে দাঁড়ানো যায়।

প্রভাবশালী নেতাদের অনুসরণ

মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী ইতিহাস থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত রাজনীতিকে কেন্দ্র করেই দেশের বড় নেতারা অর্থ ও প্রভাব অর্জন করেছেন। এ ছাড়া গণমাধ্যমে প্রায়শই দেখা যায় রাজনৈতিক নেতাদের বিলাসবহুল জীবনধারা, গাড়ি ও প্রভাবের চিত্র।

এসব বিষয় তরুণদের মধ্যে রাজনীতির প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে দিচ্ছে। তারা মনে করছে, রাজনীতি শুধু রাষ্ট্র পরিচালনার পথ নয়, বরং দ্রুত আর্থিক ও সামাজিক উন্নতির সিঁড়ি।

বাংলাদেশি তরুণদের একটি অংশ রাজনীতিকে শুধু সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যম হিসেবে নয়, বরং লাভজনক ব্যবসা বা চাকরির বিকল্প হিসেবে দেখতে শুরু করেছে। চাকরির সংকট, অর্থনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক মর্যাদা এবং দ্রুত সফলতার আকাঙ্ক্ষা এই প্রবণতাকে ত্বরান্বিত করছে।

তবে এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিক রয়েছে—একদিকে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়ছে, অন্যদিকে এটি যদি কেবল ব্যক্তিগত লাভের উদ্দেশ্যে হয় তবে গণতন্ত্র ও জনসেবার মূল চেতনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, রাজনীতি যদি কেবল “লাভের ব্যবসা” হয়ে দাঁড়ায়, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।