১০:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
চীন-আমেরিকা সম্পর্কের নতুন বিতর্ক: $১৩ বিলিয়ন বিটকয়েন হ্যাকিংয়ের অভিযোগ পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-১২৪) শেখ হাসিনার রায় কবে, জানা যাবে আজ পাকিস্তানে দরিদ্র্যর সংখ্যা বিশ্বব্যাংক ও সরকার নানা ভাবে নির্ধারণ থাই রাজার ঐতিহাসিক চীন সফর: ১৯৪৯ সালের পর প্রথমবার কোনো থাই সম্রাটের বেইজিং যাত্রা উমর নবি: যিনি ‘সাদা কলার গ্রুপ’কে উত্সাহিত করেছিলেন প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩২৩) দ্বিতীয় মার্কিন তেল চালানঃ ১ মিলিয়ন ব্যারেল নিয়ে পাকিস্তানে পৌঁছেছে সাগর পাবলিশার্স, পাকিস্তানী চরিত্র ও “আওয়ামী লীগ আঁচাচ্ছে” সাইকেল যোজনার দুই দশক: নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বিপ্লব

নির্বাচনী রোডম্যাপের দ্বন্দ্ব: বিএনপি-জামায়াতের ভিন্ন অবস্থান

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আগামী নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে অনিশ্চয়তা দিন দিন বাড়ছে। একদিকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপি স্পষ্ট জানিয়েছে, তারা নির্বাচনের বিকল্প কিছু ভাবছে না। অন্যদিকে জামায়াত মনে করছে, বর্তমান পরিস্থিতি কোনোভাবেই নির্বাচনের উপযোগী নয়। এই বিপরীত অবস্থান বিরোধী রাজনীতিতে এক ধরনের দ্বন্দ্ব ও অচলাবস্থার জন্ম দিয়েছে, যা নির্বাচনী রোডম্যাপকে আরও জটিল করে তুলছে।

বিএনপির স্পষ্ট অবস্থান: নির্বাচনই একমাত্র পথ

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির শীর্ষ নেতারা জানান, তারা কোনো বিকল্প ভাবছে না, কারণ গণতান্ত্রিক কাঠামোতে নির্বাচনের বাইরে কোনো বৈধ সমাধান নেই। তাদের যুক্তি হলো, জনগণের ম্যান্ডেট নিশ্চিত করার একমাত্র পথ নির্বাচন।

বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে আন্তর্জাতিক চাপের প্রভাবও স্পষ্ট। বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো বারবার বাংলাদেশের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে। বিএনপির অবস্থান মূলত সেই বার্তার প্রতিধ্বনি বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

জামায়াতের আপত্তি: অশান্ত পরিবেশে সুষ্ঠু ভোট অসম্ভব

অন্যদিকে জামায়াতের দাবি, বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজন করা মানে একতরফা প্রক্রিয়াকে বৈধতা দেওয়া। তাদের অভিযোগ, প্রশাসনিক কাঠামো এখনো নিরপেক্ষ হয়নি, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন, মাঠপর্যায়ে ভয়-ভীতি বিরাজ করছে।

জামায়াতের নেতাদের মতে, এ অবস্থায় নির্বাচন হলে জনগণ প্রকৃত প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবে না। তারা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন আয়োজনকে অগ্রহণযোগ্য বলেই মনে করে।

বিরোধী জোটে বিভক্তির সংকেত

বিএনপি ও জামায়াতের এই ভিন্ন অবস্থান বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের ঐক্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে এই দুটি দল আন্দোলন ও দাবি-দাওয়ায় একসঙ্গে চললেও নির্বাচনের প্রশ্নে তারা আলাদা পথে হাঁটছে। এর ফলে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির অবস্থান মূলত আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, আর জামায়াতের অবস্থান অভ্যন্তরীণ বাস্তবতার প্রতিফলন। এই বৈপরীত্যের ফলে বিরোধী জোট দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার চ্যালেঞ্জ

নির্বাচনী রোডম্যাপ অগ্রগতির সবচেয়ে বড় দায়িত্ব এখন প্রধান উপদেষ্টার ওপর। তার নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে একই সঙ্গে দুটি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে:

 রাজনৈতিক আস্থা তৈরি করা: সব দলের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ।
্রশাসনিক সংস্কার করা: মাঠপর্যায়ে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে না পারলে বিরোধীদের আস্থা পাওয়া সম্ভব নয়।

প্রধান উপদেষ্টা ইতিমধ্যে একাধিকবার সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন, কিন্তু বিরোধী শিবিরের দ্বন্দ্বের কারণে সেটি কার্যকর হচ্ছে না।

আন্তর্জাতিক মহলের চাপ

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ কোনো নতুন বিষয় নয়। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ একাধিকবার বলেছে, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন না হলে এর বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

বিএনপির নির্বাচনকেন্দ্রিক অবস্থান মূলত সেই বার্তা মেনে চলার প্রমাণ। কিন্তু জামায়াতের আপত্তি আন্তর্জাতিক মহলকে নতুন করে ভাবাচ্ছে। তারা আশঙ্কা করছে, যদি বিরাট অংশের বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করে, তবে নির্বাচনী রোডম্যাপ কার্যত ব্যর্থ হয়ে পড়বে।

রোডম্যাপের অগ্রগতির সম্ভাবনা

এই দ্বন্দ্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে নির্বাচনী রোডম্যাপ কতটা এগোতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় বাড়ছে। তবুও কিছু সম্ভাব্য পথ সামনে রয়েছে—

সংলাপের পুনরায় উদ্যোগ: প্রধান উপদেষ্টা যদি সব দলকে এক টেবিলে বসাতে পারেন, তবে অন্তত আংশিক সমাধান বেরিয়ে আসতে পারে।
আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা: বহির্বিশ্বের শক্তি যদি চাপ বাড়ায়, তবে দলগুলোকে ছাড় দিতে বাধ্য হতে হবে।
আংশিক সংস্কার: প্রশাসনিক বা আইনগত কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে বিরোধী দলের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করা যেতে পারে।

জনগণের বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তা

বিএনপি ও জামায়াতের ভিন্ন অবস্থান সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। ভোটাররা জানতে চাইছে, আসলেই কি নির্বাচন হবে? নাকি আবারও একতরফা প্রক্রিয়া দেখা দেবে?

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতাতেও প্রভাব ফেলছে। বিনিয়োগকারীরা অপেক্ষমাণ, সাধারণ মানুষ ভয় পাচ্ছে সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কায়।

জনপ্রিয় সংবাদ

চীন-আমেরিকা সম্পর্কের নতুন বিতর্ক: $১৩ বিলিয়ন বিটকয়েন হ্যাকিংয়ের অভিযোগ

নির্বাচনী রোডম্যাপের দ্বন্দ্ব: বিএনপি-জামায়াতের ভিন্ন অবস্থান

০৪:৫০:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আগামী নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে অনিশ্চয়তা দিন দিন বাড়ছে। একদিকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপি স্পষ্ট জানিয়েছে, তারা নির্বাচনের বিকল্প কিছু ভাবছে না। অন্যদিকে জামায়াত মনে করছে, বর্তমান পরিস্থিতি কোনোভাবেই নির্বাচনের উপযোগী নয়। এই বিপরীত অবস্থান বিরোধী রাজনীতিতে এক ধরনের দ্বন্দ্ব ও অচলাবস্থার জন্ম দিয়েছে, যা নির্বাচনী রোডম্যাপকে আরও জটিল করে তুলছে।

বিএনপির স্পষ্ট অবস্থান: নির্বাচনই একমাত্র পথ

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির শীর্ষ নেতারা জানান, তারা কোনো বিকল্প ভাবছে না, কারণ গণতান্ত্রিক কাঠামোতে নির্বাচনের বাইরে কোনো বৈধ সমাধান নেই। তাদের যুক্তি হলো, জনগণের ম্যান্ডেট নিশ্চিত করার একমাত্র পথ নির্বাচন।

বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে আন্তর্জাতিক চাপের প্রভাবও স্পষ্ট। বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো বারবার বাংলাদেশের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে। বিএনপির অবস্থান মূলত সেই বার্তার প্রতিধ্বনি বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

জামায়াতের আপত্তি: অশান্ত পরিবেশে সুষ্ঠু ভোট অসম্ভব

অন্যদিকে জামায়াতের দাবি, বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজন করা মানে একতরফা প্রক্রিয়াকে বৈধতা দেওয়া। তাদের অভিযোগ, প্রশাসনিক কাঠামো এখনো নিরপেক্ষ হয়নি, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন, মাঠপর্যায়ে ভয়-ভীতি বিরাজ করছে।

জামায়াতের নেতাদের মতে, এ অবস্থায় নির্বাচন হলে জনগণ প্রকৃত প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবে না। তারা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন আয়োজনকে অগ্রহণযোগ্য বলেই মনে করে।

বিরোধী জোটে বিভক্তির সংকেত

বিএনপি ও জামায়াতের এই ভিন্ন অবস্থান বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের ঐক্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে এই দুটি দল আন্দোলন ও দাবি-দাওয়ায় একসঙ্গে চললেও নির্বাচনের প্রশ্নে তারা আলাদা পথে হাঁটছে। এর ফলে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির অবস্থান মূলত আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, আর জামায়াতের অবস্থান অভ্যন্তরীণ বাস্তবতার প্রতিফলন। এই বৈপরীত্যের ফলে বিরোধী জোট দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার চ্যালেঞ্জ

নির্বাচনী রোডম্যাপ অগ্রগতির সবচেয়ে বড় দায়িত্ব এখন প্রধান উপদেষ্টার ওপর। তার নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে একই সঙ্গে দুটি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে:

 রাজনৈতিক আস্থা তৈরি করা: সব দলের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ।
্রশাসনিক সংস্কার করা: মাঠপর্যায়ে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে না পারলে বিরোধীদের আস্থা পাওয়া সম্ভব নয়।

প্রধান উপদেষ্টা ইতিমধ্যে একাধিকবার সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন, কিন্তু বিরোধী শিবিরের দ্বন্দ্বের কারণে সেটি কার্যকর হচ্ছে না।

আন্তর্জাতিক মহলের চাপ

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ কোনো নতুন বিষয় নয়। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ একাধিকবার বলেছে, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন না হলে এর বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

বিএনপির নির্বাচনকেন্দ্রিক অবস্থান মূলত সেই বার্তা মেনে চলার প্রমাণ। কিন্তু জামায়াতের আপত্তি আন্তর্জাতিক মহলকে নতুন করে ভাবাচ্ছে। তারা আশঙ্কা করছে, যদি বিরাট অংশের বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করে, তবে নির্বাচনী রোডম্যাপ কার্যত ব্যর্থ হয়ে পড়বে।

রোডম্যাপের অগ্রগতির সম্ভাবনা

এই দ্বন্দ্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে নির্বাচনী রোডম্যাপ কতটা এগোতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় বাড়ছে। তবুও কিছু সম্ভাব্য পথ সামনে রয়েছে—

সংলাপের পুনরায় উদ্যোগ: প্রধান উপদেষ্টা যদি সব দলকে এক টেবিলে বসাতে পারেন, তবে অন্তত আংশিক সমাধান বেরিয়ে আসতে পারে।
আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা: বহির্বিশ্বের শক্তি যদি চাপ বাড়ায়, তবে দলগুলোকে ছাড় দিতে বাধ্য হতে হবে।
আংশিক সংস্কার: প্রশাসনিক বা আইনগত কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে বিরোধী দলের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করা যেতে পারে।

জনগণের বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তা

বিএনপি ও জামায়াতের ভিন্ন অবস্থান সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। ভোটাররা জানতে চাইছে, আসলেই কি নির্বাচন হবে? নাকি আবারও একতরফা প্রক্রিয়া দেখা দেবে?

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতাতেও প্রভাব ফেলছে। বিনিয়োগকারীরা অপেক্ষমাণ, সাধারণ মানুষ ভয় পাচ্ছে সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কায়।