০৩:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩২৭) নন-প্রফিট কাঠামোতে যাচ্ছে মাষ্টডন, সিইও পদ ছাড়ছেন প্রতিষ্ঠাতা ইউজেন রখকো” ইউটিউবে রেকর্ড ভিউ, তবু ‘বেবি শার্ক’ নির্মাতার আয় সীমিত কেন” চীনের এআই দৌড়ে তীব্র প্রতিযোগিতা, লোকসানে কেঁপে উঠল বাইদু গোপন সসের নিরাপত্তায় নতুন জোর দিচ্ছে রেইজিং কেইন’স  সিডনিতে জমজমাট ২০২৫ এআরআইএ অ্যাওয়ার্ড, এগিয়ে নিনাজারাচি ও ডম ডোলা তাইওয়ানের স্যাটেলাইট যুগের সূচনা: স্পেসএক্স উৎক্ষেপণে বড় অগ্রগতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৫৯) শেয়ারবাজারে টানা উত্থান, বিনিয়োগকারীদের মনোভাব আরও ইতিবাচক সিরাজগঞ্জে ব্র্যাক–ফিলিপস ফাউন্ডেশনের নতুন চার হেলথ সেন্টার

তিন দাবিতে প্রাথমিক শিক্ষকদের আল্টিমেটাম

সহকারী শিক্ষকদের আন্দোলন আবারও তীব্র

বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার মূল ভরসা সহকারী শিক্ষকরা আবার রাস্তায় নেমেছেন। দীর্ঘদিন ধরে বেতন বৈষম্য, পদোন্নতির অচলাবস্থা এবং পুরনো দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় তারা এবার কঠোর আল্টিমেটাম দিয়েছেন। শিক্ষকরা ঘোষণা দিয়েছেন—দাবি পূরণ না হলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশনে বসবেন।


আন্দোলনের পটভূমি

সহকারী শিক্ষক পদের বেতন বৈষম্যের অভিযোগ নতুন নয়।

  • ২০০৬ সালের পর থেকে ধাপে ধাপে এ বৈষম্য বাড়তে থাকে।
  • ২০১৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো হলেও সহকারী শিক্ষকরা বাদ পড়েন।
  • প্রধান শিক্ষকরা আদালতে রিট করে সুবিধা পেলেও সহকারী শিক্ষকরা বঞ্চিত থাকেন।

ফলে তারা আলাদা সংগঠন গড়ে আন্দোলন শুরু করেন। দাবি একটাই—ন্যায্য বেতন ও পদোন্নতির সুযোগ।


সরকারের অবস্থান

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান জানিয়েছেন, সহকারী শিক্ষকদের দাবি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ও তা জাতীয় পে-কমিশনে দিয়েছে। শিগগিরই শিক্ষক প্রতিনিধি ও কমিশনের চেয়ারম্যানের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা।

অন্যদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন—সব যুক্তি জাতীয় বেতন কমিশনের মাধ্যমেই বিবেচনা করা হবে। অর্থাৎ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে কমিশন থেকেই।


১১ নাকি ১২তম গ্রেড?

সহকারী শিক্ষকদের প্রধান দাবি—এন্ট্রি পদে ১১তম গ্রেড। কিন্তু সরকারের কনসালটেশন কমিটি সুপারিশ করেছে ১২তম গ্রেডে।

শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের অভিযোগ—এতে বৈষম্য কমার বদলে নতুন করে অবমূল্যায়ন হচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন,
“আমাদের দাবি মানা না হলে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশনে বসব।”


তিন দফা দাবি

৩০ আগস্ট ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ করে সহকারী শিক্ষকরা তিনটি মূল দাবি জানান—
১. এন্ট্রি পদে ১১তম গ্রেড নিশ্চিত করা।
২. প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ শতভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা।
৩. ১০ ও ১৬ বছরের উচ্চতর গ্রেড প্রদানে ‘উন্নীত স্কেল’কে উচ্চতর গ্রেড হিসেবে গণ্য না করা।

আল্টিমেটাম স্পষ্ট—২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে আমরণ অনশন।


বৈষম্যের চিত্র

বর্তমানে সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে বেতন পান। অথচ সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতায়—

  • মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক
  • পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর
  • নার্স
  • ইউনিয়ন পরিষদের সচিব

—সবাই ১০ম গ্রেডে আছেন। ফলে সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ দীর্ঘদিন ধরে জমেছে।


সামনে কী অপেক্ষা করছে?

সরকার ইতোমধ্যেই প্রধান শিক্ষকদের জন্য ১০ম গ্রেড অনুমোদন করেছে। কিন্তু সহকারী শিক্ষকদের বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা আসেনি। জাতীয় বেতন কমিশনের সুপারিশ না আসা পর্যন্ত অনিশ্চয়তা কাটছে না।

সহকারী শিক্ষকদের বক্তব্য—আর দেরি নয়। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে তারা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন।


সার্বিক প্রেক্ষাপট

এই আন্দোলন শুধু বেতন নয়, প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার মান ও শিক্ষকদের মর্যাদার সঙ্গেও জড়িত। সহকারী শিক্ষকরা বলছেন, ন্যায্য দাবি মেনে না নিলে তাদের সামনে আর কোনো বিকল্প থাকবে না।

সরকারের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ—শিক্ষকদের প্রত্যাশা পূরণ করে প্রাথমিক শিক্ষার ভীতকে আরও মজবুত করা।

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩২৭)

তিন দাবিতে প্রাথমিক শিক্ষকদের আল্টিমেটাম

১২:০৮:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সহকারী শিক্ষকদের আন্দোলন আবারও তীব্র

বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার মূল ভরসা সহকারী শিক্ষকরা আবার রাস্তায় নেমেছেন। দীর্ঘদিন ধরে বেতন বৈষম্য, পদোন্নতির অচলাবস্থা এবং পুরনো দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় তারা এবার কঠোর আল্টিমেটাম দিয়েছেন। শিক্ষকরা ঘোষণা দিয়েছেন—দাবি পূরণ না হলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশনে বসবেন।


আন্দোলনের পটভূমি

সহকারী শিক্ষক পদের বেতন বৈষম্যের অভিযোগ নতুন নয়।

  • ২০০৬ সালের পর থেকে ধাপে ধাপে এ বৈষম্য বাড়তে থাকে।
  • ২০১৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো হলেও সহকারী শিক্ষকরা বাদ পড়েন।
  • প্রধান শিক্ষকরা আদালতে রিট করে সুবিধা পেলেও সহকারী শিক্ষকরা বঞ্চিত থাকেন।

ফলে তারা আলাদা সংগঠন গড়ে আন্দোলন শুরু করেন। দাবি একটাই—ন্যায্য বেতন ও পদোন্নতির সুযোগ।


সরকারের অবস্থান

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান জানিয়েছেন, সহকারী শিক্ষকদের দাবি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ও তা জাতীয় পে-কমিশনে দিয়েছে। শিগগিরই শিক্ষক প্রতিনিধি ও কমিশনের চেয়ারম্যানের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা।

অন্যদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন—সব যুক্তি জাতীয় বেতন কমিশনের মাধ্যমেই বিবেচনা করা হবে। অর্থাৎ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে কমিশন থেকেই।


১১ নাকি ১২তম গ্রেড?

সহকারী শিক্ষকদের প্রধান দাবি—এন্ট্রি পদে ১১তম গ্রেড। কিন্তু সরকারের কনসালটেশন কমিটি সুপারিশ করেছে ১২তম গ্রেডে।

শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের অভিযোগ—এতে বৈষম্য কমার বদলে নতুন করে অবমূল্যায়ন হচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন,
“আমাদের দাবি মানা না হলে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশনে বসব।”


তিন দফা দাবি

৩০ আগস্ট ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ করে সহকারী শিক্ষকরা তিনটি মূল দাবি জানান—
১. এন্ট্রি পদে ১১তম গ্রেড নিশ্চিত করা।
২. প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ শতভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা।
৩. ১০ ও ১৬ বছরের উচ্চতর গ্রেড প্রদানে ‘উন্নীত স্কেল’কে উচ্চতর গ্রেড হিসেবে গণ্য না করা।

আল্টিমেটাম স্পষ্ট—২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে আমরণ অনশন।


বৈষম্যের চিত্র

বর্তমানে সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে বেতন পান। অথচ সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতায়—

  • মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক
  • পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর
  • নার্স
  • ইউনিয়ন পরিষদের সচিব

—সবাই ১০ম গ্রেডে আছেন। ফলে সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ দীর্ঘদিন ধরে জমেছে।


সামনে কী অপেক্ষা করছে?

সরকার ইতোমধ্যেই প্রধান শিক্ষকদের জন্য ১০ম গ্রেড অনুমোদন করেছে। কিন্তু সহকারী শিক্ষকদের বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা আসেনি। জাতীয় বেতন কমিশনের সুপারিশ না আসা পর্যন্ত অনিশ্চয়তা কাটছে না।

সহকারী শিক্ষকদের বক্তব্য—আর দেরি নয়। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে তারা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন।


সার্বিক প্রেক্ষাপট

এই আন্দোলন শুধু বেতন নয়, প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার মান ও শিক্ষকদের মর্যাদার সঙ্গেও জড়িত। সহকারী শিক্ষকরা বলছেন, ন্যায্য দাবি মেনে না নিলে তাদের সামনে আর কোনো বিকল্প থাকবে না।

সরকারের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ—শিক্ষকদের প্রত্যাশা পূরণ করে প্রাথমিক শিক্ষার ভীতকে আরও মজবুত করা।