০১:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আন্তরিক উপবাস: উপকার নাকি ঝুঁকি? হৃদরোগ নিয়ে নতুন প্রশ্ন

জনপ্রিয় খাদ্যাভ্যাসের উত্থান

আন্তরিক উপবাস বা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এখনকার সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ডায়েট ধারা। এতে ক্যালরি গোনা বা কার্বোহাইড্রেট বাদ দেওয়ার ঝামেলা নেই—বরং মূল কৌশল হলো কখন খাবেন, কী খাবেন তা নয়। অনেক প্রযুক্তি উদ্যোক্তা থেকে হলিউড তারকা দাবি করেন এটি তাদের সুস্থ রাখে। এমনকি যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও একবার বলেছিলেন তিনি সপ্তাহের শুরুতে ৩৬ ঘণ্টার উপবাস করেন।

বিজ্ঞানের প্রথম দিককার বার্তা

বেশ কিছু গবেষণা বলেছিল রাতে দীর্ঘ উপবাস রাখলে বিপাকক্রিয়া উন্নত হয়, কোষ মেরামত হয়, এমনকি আয়ু বাড়তেও পারে। তবে পুষ্টিবিদেরা বরাবরই সতর্ক করেছেন—খাবার বাদ দেওয়াই সব সমস্যার সমাধান নয়, বরং যারা আগে থেকেই অসুস্থ তাদের জন্য ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।

নতুন গবেষণার সতর্ক সংকেত

সম্প্রতি ১৯ হাজার প্রাপ্তবয়স্ককে নিয়ে করা একটি বড় গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ৮ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে খাওয়ার কাজ সীমাবদ্ধ রাখেন, তাদের হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি ১৩৫ শতাংশ বেশি। এর তুলনায় যারা দিনে ১২–১৪ ঘণ্টা সময় ধরে খাবার খান, তাদের ঝুঁকি তুলনামূলক কম।

যদিও সামগ্রিকভাবে মৃত্যুর সঙ্গে এই খাদ্যাভ্যাসের দুর্বল ও অস্পষ্ট সম্পর্ক পাওয়া গেছে, কিন্তু হৃদ্‌রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি সব বয়স, লিঙ্গ ও জীবনযাত্রার মধ্যেই স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।

গবেষণার ধরন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্তবয়স্কদের আট বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা দুই আলাদা দিনে সব খাবার ও পানীয়ের তথ্য জানান। সেখান থেকে বিজ্ঞানীরা গড় হিসাব বের করে তাদের দীর্ঘমেয়াদি খাদ্যাভ্যাসের ধারণা নেন।

তাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৮ ঘণ্টার কম সময় খাওয়া যারা করেন তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, বিশেষত ধূমপায়ী, ডায়াবেটিস রোগী এবং আগে থেকেই হৃদরোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

চীনের সাংহাই জিয়াও তং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভিক্টর ওয়েংঝে ঝং বলেন, এটি আশ্চর্যজনক ফলাফল। কারণ আগে ধারণা ছিল সময়সীমাবদ্ধ খাবার খাওয়া হৃদস্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি সংকুচিত খাবারের সময়সীমা উল্টো ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

Can intermittent fasting double your risk of cardiovascular death? - BHF

অন্যদিকে ভারতের প্রখ্যাত অন্তঃস্রাববিদ অনুপ মিশ্রা বলেন, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের কিছু ভালো দিক আছে—ওজন কমানো, ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ানো, রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমানো, এমনকি প্রদাহ কমানোর প্রমাণও রয়েছে। তবে ঝুঁকিও রয়েছে—পুষ্টিহীনতা, ক্ষুধা ও খিটখিটে মেজাজ, মাথাব্যথা, রক্তশর্করার ঝুঁকি এবং দীর্ঘমেয়াদে মানিয়ে নিতে না পারা।

আগের গবেষণার সতর্কতা

২০২০ সালে করা একটি গবেষণায় দেখা যায়, অংশগ্রহণকারীরা সামান্য ওজন হারালেও তার বড় অংশই ছিল পেশি। অন্য গবেষণায় দুর্বলতা,পানিশূন্যতা, মাথাব্যথা ও মনোযোগ কমার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথাও উঠে আসে।

কী করা উচিত?

অধ্যাপক ঝং বলেন, যাদের হৃদরোগ বা ডায়াবেটিস আছে, তাদের সাবধানে এ ধরনের খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করা উচিত। মূল শিক্ষা হলো—খাবারের সময়ের চেয়ে কী খাওয়া হচ্ছে তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অন্তত দীর্ঘমেয়াদি ৮ ঘণ্টার খাওয়ার সময়সীমা বেছে নেওয়া উচিত নয়, বিশেষত সুস্থ থাকার উদ্দেশ্যে।

বার্তাটি স্পষ্ট: উপবাস একেবারে বাদ দিতে হবে এমন নয়, বরং তা ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী মানিয়ে নিতে হবে। যতক্ষণ না আরও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ আসে, ততক্ষণ সময়ের চেয়ে প্লেটে কী আছে সেটির ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া নিরাপদ।

আন্তরিক উপবাস: উপকার নাকি ঝুঁকি? হৃদরোগ নিয়ে নতুন প্রশ্ন

০৫:০০:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জনপ্রিয় খাদ্যাভ্যাসের উত্থান

আন্তরিক উপবাস বা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এখনকার সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ডায়েট ধারা। এতে ক্যালরি গোনা বা কার্বোহাইড্রেট বাদ দেওয়ার ঝামেলা নেই—বরং মূল কৌশল হলো কখন খাবেন, কী খাবেন তা নয়। অনেক প্রযুক্তি উদ্যোক্তা থেকে হলিউড তারকা দাবি করেন এটি তাদের সুস্থ রাখে। এমনকি যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও একবার বলেছিলেন তিনি সপ্তাহের শুরুতে ৩৬ ঘণ্টার উপবাস করেন।

বিজ্ঞানের প্রথম দিককার বার্তা

বেশ কিছু গবেষণা বলেছিল রাতে দীর্ঘ উপবাস রাখলে বিপাকক্রিয়া উন্নত হয়, কোষ মেরামত হয়, এমনকি আয়ু বাড়তেও পারে। তবে পুষ্টিবিদেরা বরাবরই সতর্ক করেছেন—খাবার বাদ দেওয়াই সব সমস্যার সমাধান নয়, বরং যারা আগে থেকেই অসুস্থ তাদের জন্য ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।

নতুন গবেষণার সতর্ক সংকেত

সম্প্রতি ১৯ হাজার প্রাপ্তবয়স্ককে নিয়ে করা একটি বড় গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ৮ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে খাওয়ার কাজ সীমাবদ্ধ রাখেন, তাদের হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি ১৩৫ শতাংশ বেশি। এর তুলনায় যারা দিনে ১২–১৪ ঘণ্টা সময় ধরে খাবার খান, তাদের ঝুঁকি তুলনামূলক কম।

যদিও সামগ্রিকভাবে মৃত্যুর সঙ্গে এই খাদ্যাভ্যাসের দুর্বল ও অস্পষ্ট সম্পর্ক পাওয়া গেছে, কিন্তু হৃদ্‌রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি সব বয়স, লিঙ্গ ও জীবনযাত্রার মধ্যেই স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।

গবেষণার ধরন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্তবয়স্কদের আট বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা দুই আলাদা দিনে সব খাবার ও পানীয়ের তথ্য জানান। সেখান থেকে বিজ্ঞানীরা গড় হিসাব বের করে তাদের দীর্ঘমেয়াদি খাদ্যাভ্যাসের ধারণা নেন।

তাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৮ ঘণ্টার কম সময় খাওয়া যারা করেন তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, বিশেষত ধূমপায়ী, ডায়াবেটিস রোগী এবং আগে থেকেই হৃদরোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

চীনের সাংহাই জিয়াও তং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভিক্টর ওয়েংঝে ঝং বলেন, এটি আশ্চর্যজনক ফলাফল। কারণ আগে ধারণা ছিল সময়সীমাবদ্ধ খাবার খাওয়া হৃদস্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি সংকুচিত খাবারের সময়সীমা উল্টো ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

Can intermittent fasting double your risk of cardiovascular death? - BHF

অন্যদিকে ভারতের প্রখ্যাত অন্তঃস্রাববিদ অনুপ মিশ্রা বলেন, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের কিছু ভালো দিক আছে—ওজন কমানো, ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ানো, রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমানো, এমনকি প্রদাহ কমানোর প্রমাণও রয়েছে। তবে ঝুঁকিও রয়েছে—পুষ্টিহীনতা, ক্ষুধা ও খিটখিটে মেজাজ, মাথাব্যথা, রক্তশর্করার ঝুঁকি এবং দীর্ঘমেয়াদে মানিয়ে নিতে না পারা।

আগের গবেষণার সতর্কতা

২০২০ সালে করা একটি গবেষণায় দেখা যায়, অংশগ্রহণকারীরা সামান্য ওজন হারালেও তার বড় অংশই ছিল পেশি। অন্য গবেষণায় দুর্বলতা,পানিশূন্যতা, মাথাব্যথা ও মনোযোগ কমার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথাও উঠে আসে।

কী করা উচিত?

অধ্যাপক ঝং বলেন, যাদের হৃদরোগ বা ডায়াবেটিস আছে, তাদের সাবধানে এ ধরনের খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করা উচিত। মূল শিক্ষা হলো—খাবারের সময়ের চেয়ে কী খাওয়া হচ্ছে তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অন্তত দীর্ঘমেয়াদি ৮ ঘণ্টার খাওয়ার সময়সীমা বেছে নেওয়া উচিত নয়, বিশেষত সুস্থ থাকার উদ্দেশ্যে।

বার্তাটি স্পষ্ট: উপবাস একেবারে বাদ দিতে হবে এমন নয়, বরং তা ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী মানিয়ে নিতে হবে। যতক্ষণ না আরও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ আসে, ততক্ষণ সময়ের চেয়ে প্লেটে কী আছে সেটির ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া নিরাপদ।