ফোড়ন কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ
ভারতীয় রান্নায় ফোড়ন একটি বিশেষ রান্নার কৌশল। এতে সম্পূর্ণ বা গুঁড়ো মসলা গরম তেল বা ঘিতে ভেজে তাদের গন্ধ ও গুণ বের করে আনা হয়। দক্ষিণ ভারতের সাম্বার বা পুলিসেরি থেকে শুরু করে উত্তর ভারতের ডাল কিংবা পালং শাকের তরকারিতে—শেষ ধাপে ফোড়ন যোগ করা হয়। সরিষা, জিরা, মেথি, আদা, রসুন, শুকনো মরিচ ও কারিপাতা গরম তেলে ফোড়ন দিয়ে রান্নার স্বাদ ও ঘ্রাণ বাড়ানো হয়। কিন্তু শুধু স্বাদ নয়, এই প্রক্রিয়ার নানা স্বাস্থ্যগুণও রয়েছে।
তেল ও ঘিরে ভূমিকা
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফোড়নের জন্য নারকেল তেল, সরিষার তেল ও সূর্যমুখীর তেলের মতো ভিন্ন ভিন্ন তেল ব্যবহার করা হয়। শরীরের জন্য কিছু নির্দিষ্ট ভিটামিন (যেমন শাকসবজি ও ডাল থেকে পাওয়া চর্বি-দ্রবণীয় ভিটামিন) শোষণে চর্বির প্রয়োজন হয়। ফোড়নে ব্যবহৃত তেল বা ঘি এই ভিটামিন শরীরে ঠিকভাবে পৌঁছাতে সাহায্য করে।
মসলার চিকিৎসাগুণ
কারিপাতা, জিরা, মেথি ও সরিষার মতো উপকরণে অসাধারণ ঔষধি গুণ রয়েছে। ফোড়ন হলুদে থাকা কারকিউমিন ও গোলমরিচে থাকা পাইপেরিনকে সংরক্ষণ করে, যা শরীরের বিপাকক্রিয়া (মেটাবলিজম) বাড়াতে সাহায্য করে।
ফোড়নে ব্যবহৃত প্রধান উপাদান ও তাদের উপকারিতা
১) সরিষা
সরিষার দানায় ভিটামিন এ ও ই, ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সেলেনিয়াম থাকে। এগুলো প্রদাহ কমায় এবং হাঁপানি ও বাতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনে, ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
২) জিরা
জিরায় ভিটামিন এ ও ই, ক্যালসিয়াম, লোহা ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এটি হজম শক্তি বাড়ায়, কোলেস্টেরল কমায়, শরীরের অতিরিক্ত চর্বি পোড়ায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়।
৩) হিং (আসাফোটিডা)
হিংয়ের অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও প্রদাহনাশক গুণ রয়েছে। এটি হজমে সাহায্য করে, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে আনে এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার উপশমে কার্যকর।
৪) মেথি
মেথি কোলেস্টেরল কমাতে, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে এবং পেটের নানা সমস্যার উপশমে বিশেষভাবে উপকারী।
৫) কারিপাতা
কারিপাতায় প্রচুর ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লোহা এবং ভিটামিন সি, এ, বি ও ই রয়েছে। এটি হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো, সংক্রমণ প্রতিরোধ করে, চুল মজবুত করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
ফোড়নের ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া
ফোড়নে উপাদানগুলো একসাথে নয়, ধাপে ধাপে দেওয়া হয়।
- প্রথমে সরিষা বা উড়দ ডাল গরম তেল বা ঘিতে দিতে হয়। এগুলো ফেটে যাওয়ার পর তাদের ভেতরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ সক্রিয় হয়।
- এরপর জিরা ফাটাতে হয়।
- তারপর হিং ও রসুন যোগ করা যেতে পারে।
- পরে প্রয়োজনে হলুদ, ধনে গুঁড়ো ও মরিচ গুঁড়ো দেওয়া হয়।
তবে বেশি তেল ব্যবহার করা উচিত নয়। মনে রাখতে হবে, ফোড়নের জন্য অল্প তেলই যথেষ্ট—অতিরিক্ত তেল স্বাস্থ্যের বাড়তি কোনো উপকার দেয় না।