দ্বিপক্ষীয়
স্করণ তৈরি করে দিলাম।সম্পর্কের নতুন অধ্যায়
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে বৈঠকে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওং ঘোষণা করেছেন যে দুই দেশ পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে এবং আগামী দিনের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে একটি বিস্তারিত রোডম্যাপে একমত হয়েছে। ৪ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুই নেতা জানান, সিঙ্গাপুর-ভারত সম্পর্ক এখন শুধু গভীর নয়, বরং সময়োপযোগী ও দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গির ওপর দাঁড়িয়ে আছে।

কোন কোন খাতে সহযোগিতা হবে
স্বাক্ষরিত পাঁচটি সমঝোতা স্মারকে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে—
- ডিজিটাল সম্পদ উদ্ভাবন ও সীমান্ত-পারের ডেটা প্রবাহ উন্নত করা
- সবুজ ও ডিজিটাল শিপিং করিডোর তৈরি করা, যেখানে প্রায় শূন্য গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের জ্বালানি ব্যবহার হবে
- বেসামরিক বিমান চলাচলে প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও উন্নয়ন
- আধুনিক খাতে দক্ষতা উন্নয়ন, যেমন সেমিকন্ডাক্টর, ইলেকট্রনিকস, অ্যাভিয়েশন রক্ষণাবেক্ষণ ও মহাকাশ শিল্প
- স্যাটেলাইট যোগাযোগসহ মহাকাশ প্রযুক্তিতে যৌথ উদ্যোগ
প্রধানমন্ত্রী ওং জানান, ইতিমধ্যেই ভারত ২০টির বেশি সিঙ্গাপুর-নির্মিত স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছে এবং ভবিষ্যতে এ সহযোগিতা আরও প্রসারিত হবে।
অবকাঠামো উন্নয়নে বড় পদক্ষেপ
দুই নেতা একসঙ্গে পিএসএ মুম্বাই কনটেইনার টার্মিনালের দ্বিতীয় ধাপের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেন। নাভি মুম্বাইয়ে অবস্থিত এই প্রকল্প সম্পন্ন হলে এটি হবে ভারতের সবচেয়ে বড় একক কনটেইনার টার্মিনাল।

ভারতের অগ্রগতি ও আঞ্চলিক গুরুত্ব
প্রধানমন্ত্রী ওং উল্লেখ করেন, মোদির নেতৃত্বে গত এক দশকে ভারত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে ভারতের প্রভাব এখন সীমানার বাইরে বিস্তৃত। তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর-ভারত সম্পর্কও সমানতালে বেড়েছে এবং বর্তমান অনিশ্চিত বিশ্বে এ সম্পর্ক আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
তিনি যোগ করেন, “আমরা আমাদের যৌথ ইতিহাস, জনগণের পারস্পরিক বিশ্বাস ও বন্ধুত্ব থেকে শক্তি নিতে পারি। একসঙ্গে আমরা স্থিতিশীলতা গড়তে, নতুন সুযোগ গ্রহণ করতে এবং অঞ্চল ও এর বাইরে প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারি।”
মোদির দৃষ্টিভঙ্গি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, দুই দেশের সহযোগিতা শুধু প্রচলিত খাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আধুনিক চাহিদা অনুযায়ী নতুন খাতে বিস্তৃত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উন্নত উৎপাদন-শিল্প, সবুজ শিপিং, দক্ষতা উন্নয়ন, বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা ও নগর জলব্যবস্থাপনা।
তিনি জানান, সিঙ্গাপুর ও ভারত পারস্পরিক বাণিজ্য বাড়াতে দ্বিপাক্ষিক সমন্বিত অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি (সিইসিএ) পর্যালোচনা করবে। পাশাপাশি ভারত আসিয়ান-এর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিও নবায়ন করছে।
২০০৫ সালে সিইসিএ কার্যকর হওয়ার পর দুই দেশের বাণিজ্য প্রায় আড়াই গুণ বেড়েছে—২০০৫ সালের ২০ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৩ সালে দাঁড়িয়েছে ৫২.২ বিলিয়ন ডলারে।

পারস্পরিক সফর ও কূটনৈতিক সম্পর্ক
মোদি উল্লেখ করেন, গত এক বছরে ভারতের চার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা— ওডিশা, তেলেঙ্গানা, আসাম ও অন্ধ্র প্রদেশ— সিঙ্গাপুর সফর করেছেন। অন্যদিকে, সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট থার্মান শানমুগারত্নাম ভারত সফর করেছেন।
তিনি বলেন, “এটি একটি উদ্দেশ্যপূর্ণ অংশীদারিত্ব, যা যৌথ মূল্যবোধে ভিত্তিক এবং পারস্পরিক স্বার্থ দ্বারা পরিচালিত।”
কৌশলগত অংশীদারিত্বের রোডম্যাপ
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে মোদির সিঙ্গাপুর সফরের সময় দুই দেশ কৌশলগত অংশীদারিত্বে সম্পর্ক উন্নীত করার ঘোষণা দেয়। নতুন রোডম্যাপ অনুযায়ী, দুই দেশ অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করবে। ২০২৫ সালে আসিয়ান-ভারত বাণিজ্য চুক্তির বড় ধরনের পর্যালোচনা করা হবে।
এ ছাড়া আরও সাতটি খাতে সহযোগিতা গভীর করার পরিকল্পনা রয়েছে—
- দক্ষতা উন্নয়ন
- ডিজিটালাইজেশন
- টেকসই উন্নয়ন
- সংযোগ বৃদ্ধি
- স্বাস্থ্যসেবা
- জনগণ ও সংস্কৃতির আদানপ্রদান
- প্রতিরক্ষা সহযোগিতা

আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়ে মতবিনিময়
৪ সেপ্টেম্বর বৈঠকে দুই নেতা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেছেন। এর মধ্যে ছিল অর্থনৈতিক একীকরণ, বহুপাক্ষিক সহযোগিতা শক্তিশালী করা এবং নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা রক্ষা।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী ওং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর, শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন। তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















