০৫:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
অটিজম চিকিৎসার অপ্রতিষ্ঠিত পথে প্রতিটি পরিবার সাত দশক পর ব্রিটিশ মিউজিক্যালে নতুন জীবন পেল প্রিয় ভালুক সম্পর্কের উষ্ণতা ধরে রাখা উচিৎ, পারিবারিক সীমারেখা রক্ষা করে উৎসব উদযাপনের জ্ঞান শৈশবের গভীর ক্ষত থেকে লেখা এক রন্ধনশিল্পীর আত্মস্বীকারোক্তি মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬৪) ক্ষমতার নৃত্য: ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস বলরুম প্রকল্পে দানের আড়ালে ব্যবসায়িক স্বার্থের খেলা জোহরান মামদানির সিরিয়ান স্ত্রী রামা দুয়াজি সম্পর্কে এই বিষয়গুলো কি জানেন? পুঁজিবাজারে পতনের ধারা অব্যাহত: সপ্তাহ শেষে ডিএসই ও সিএসই লাল সূচকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যু সংবিধান উপেক্ষা করে গণভোটের তাড়াহুড়ো জনমনে সন্দেহ জাগাচ্ছে: আমীর খসরু

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-১৯)

  • নাঈম হক
  • ০৯:০০:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • 144

‘হুজুর, আপনি যাবেন নাং আপনার মেয়েকে আপনি সিনেমা হলে বসিয়ে রেখে এসেছেন।’

আত্মজীবনীতে লেজেন্ডারি বোস সম্বন্ধে প্রফেসর করিম লেখেন:

সত্যেন বোস সব সময় কাজে ডুবে থাকতেন। কেউ গিয়ে না ডাকলে তিনি তাঁর ল্যাবরেটরি থেকে বাসায় খেতে আসতেন না। খাওয়ার কথা মনেই থাকত না তাঁর। অনেক গল্প আছে তাঁর সম্পর্কে। সত্যেন বোস একবার মেয়েকে নিয়ে মুকুল সিনেমায় গেছেন ছবি দেখতে। টিকেট কিনতে গিয়ে দেখলেন যে মানিব্যাগটা তাঁর পকেটে নেই। মানিব্যাগ ফেলে গিয়েছেন তিনি বাড়িতে।

তিনি মেয়েকে বললেন, ‘মা, তুই এখানে বোস। আমি বাড়ি থেকে মানিব্যাগটা নিয়ে আসি।’ এখান থেকে খন্দকার মোকাররম হোসেন লাইব্রেরিটা, সেখানে একটা চাইনিজ প্যাটার্নের বাড়িতে তিনি থাকতেন। তখন যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল ঘোড়ার গাড়ি। ঘোড়ার গাড়িতে করে বাড়ি ফিরে এসে টেবিলের উপর থেকে নিজের মানিব্যাগটা নিতে যাবেন, এমন সময় টেবিলের উপরে পড়ে থাকা একটি আনসলভড প্রব্লেমের দিকে নজর গেল তাঁর। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে গেল সেটা সমাধান করতে।

মেয়েকে যে সিনেমা হলে বসিয়ে এসেছেন তা তিনি ভুলেই গিয়েছেন। অনেকক্ষণ পর গাড়োয়ান সাহস করে বলল, ‘হুজুর, আপনি যাবেন নাং আপনার মেয়েকে আপনি সিনেমা হলে বসিয়ে রেখে এসেছেন।’ তখন তাঁর খেয়াল হলো, ‘ও, তাই তো। মেয়েকে সিনেমা হলে রেখে এসেছি, চলো, চলো।

সিনেমা হলের কর্মচারীরা অবশ্য তাঁর মেয়েকে আগেই সিটে বসিয়ে দিয়েছিল। সত্যেন বোস যাবার পর তারা বলল, ‘সিনেমা তো এখনই শেষ হয়ে যাবে, আপনি একটু অপেক্ষা করুন।’ এ রকম মনভোলা লোক ছিলেন সত্যেন বোস।

১৯২৪ সালে বোস তাঁর বিখ্যাত প্রতিবেদন (পেপার) “প্ল্যাঙ্কের সূত্র এবং আলোক-কোয়ান্টার উপপ্রমেয় (প্ল‍্যাঙ্ক’স ল অ্যান্ড হাইপোথিসিস অব লাইট কোয়ান্টা/Plank’s Law and Hypothesis of Light Quanta)” লেখেন।

প্রতিবেদনটি তিনি আইনস্টাইনকে ডাকযোগে পাঠিয়ে দেন। সঙ্গে পাঠান আইনস্টাইনকে লেখা একটি চিঠি। তাতে লেখেন:

“প্রতিবেদনটি অনুবাদের জন্য জামান ভাষায় পর্যাপ্ত জ্ঞান আমার নেই। যদি আপনি মনে করেন যে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার উপযুক্ত, আপনার কাছে বাধিত থাকব আপনি যদি অনুগ্রহ করে “Zeitschrift für Physik”-এ এর প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। আপনার কাছে যদিও আমি একেবারেই একজন অজ্ঞাতনামা, তা সত্ত্বেও আপনার কাছে এমন অনুরোধ করতে কোনো সঙ্কোচবোধ করছি না আমি। কারণ আমরা সবাই আপনার ছাত্র শিক্ষার্থী, আমরা সবাই আপনার লেখার মাধ্যমে আপনার উপদেশপ্রাপ্ত হওয়ার সুফল নিচ্ছি।”

(চলবে)

জনপ্রিয় সংবাদ

অটিজম চিকিৎসার অপ্রতিষ্ঠিত পথে প্রতিটি পরিবার

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-১৯)

০৯:০০:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

‘হুজুর, আপনি যাবেন নাং আপনার মেয়েকে আপনি সিনেমা হলে বসিয়ে রেখে এসেছেন।’

আত্মজীবনীতে লেজেন্ডারি বোস সম্বন্ধে প্রফেসর করিম লেখেন:

সত্যেন বোস সব সময় কাজে ডুবে থাকতেন। কেউ গিয়ে না ডাকলে তিনি তাঁর ল্যাবরেটরি থেকে বাসায় খেতে আসতেন না। খাওয়ার কথা মনেই থাকত না তাঁর। অনেক গল্প আছে তাঁর সম্পর্কে। সত্যেন বোস একবার মেয়েকে নিয়ে মুকুল সিনেমায় গেছেন ছবি দেখতে। টিকেট কিনতে গিয়ে দেখলেন যে মানিব্যাগটা তাঁর পকেটে নেই। মানিব্যাগ ফেলে গিয়েছেন তিনি বাড়িতে।

তিনি মেয়েকে বললেন, ‘মা, তুই এখানে বোস। আমি বাড়ি থেকে মানিব্যাগটা নিয়ে আসি।’ এখান থেকে খন্দকার মোকাররম হোসেন লাইব্রেরিটা, সেখানে একটা চাইনিজ প্যাটার্নের বাড়িতে তিনি থাকতেন। তখন যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল ঘোড়ার গাড়ি। ঘোড়ার গাড়িতে করে বাড়ি ফিরে এসে টেবিলের উপর থেকে নিজের মানিব্যাগটা নিতে যাবেন, এমন সময় টেবিলের উপরে পড়ে থাকা একটি আনসলভড প্রব্লেমের দিকে নজর গেল তাঁর। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে গেল সেটা সমাধান করতে।

মেয়েকে যে সিনেমা হলে বসিয়ে এসেছেন তা তিনি ভুলেই গিয়েছেন। অনেকক্ষণ পর গাড়োয়ান সাহস করে বলল, ‘হুজুর, আপনি যাবেন নাং আপনার মেয়েকে আপনি সিনেমা হলে বসিয়ে রেখে এসেছেন।’ তখন তাঁর খেয়াল হলো, ‘ও, তাই তো। মেয়েকে সিনেমা হলে রেখে এসেছি, চলো, চলো।

সিনেমা হলের কর্মচারীরা অবশ্য তাঁর মেয়েকে আগেই সিটে বসিয়ে দিয়েছিল। সত্যেন বোস যাবার পর তারা বলল, ‘সিনেমা তো এখনই শেষ হয়ে যাবে, আপনি একটু অপেক্ষা করুন।’ এ রকম মনভোলা লোক ছিলেন সত্যেন বোস।

১৯২৪ সালে বোস তাঁর বিখ্যাত প্রতিবেদন (পেপার) “প্ল্যাঙ্কের সূত্র এবং আলোক-কোয়ান্টার উপপ্রমেয় (প্ল‍্যাঙ্ক’স ল অ্যান্ড হাইপোথিসিস অব লাইট কোয়ান্টা/Plank’s Law and Hypothesis of Light Quanta)” লেখেন।

প্রতিবেদনটি তিনি আইনস্টাইনকে ডাকযোগে পাঠিয়ে দেন। সঙ্গে পাঠান আইনস্টাইনকে লেখা একটি চিঠি। তাতে লেখেন:

“প্রতিবেদনটি অনুবাদের জন্য জামান ভাষায় পর্যাপ্ত জ্ঞান আমার নেই। যদি আপনি মনে করেন যে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার উপযুক্ত, আপনার কাছে বাধিত থাকব আপনি যদি অনুগ্রহ করে “Zeitschrift für Physik”-এ এর প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। আপনার কাছে যদিও আমি একেবারেই একজন অজ্ঞাতনামা, তা সত্ত্বেও আপনার কাছে এমন অনুরোধ করতে কোনো সঙ্কোচবোধ করছি না আমি। কারণ আমরা সবাই আপনার ছাত্র শিক্ষার্থী, আমরা সবাই আপনার লেখার মাধ্যমে আপনার উপদেশপ্রাপ্ত হওয়ার সুফল নিচ্ছি।”

(চলবে)