রাজধানীর ভোরের রুটিন
ভোর হওয়ার আগেই ৫১ বছর বয়সী আরিস প্রাবোয়ো তার লাল মোটরবাইক নিয়ে পথে বের হন। কালো হেলমেট ও সবুজ জ্যাকেট পরে তিনি প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জাকার্তার যাত্রীদের কাজে পৌঁছে দেন। দুপুরে ফিরে গিয়ে তিনি স্ত্রীর সঙ্গে মিলে ১৭ বছর বয়সী অটিজম আক্রান্ত ছেলের দেখাশোনা করেন। বিকেল থেকে আবারও গভীর রাত পর্যন্ত খাবার ও রাইড অর্ডার নিয়ে রাস্তায় নামেন।
তার মতে, এই কষ্টকর রুটিনই তাকে পরিবার ও কাজের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে।
ওজল রাইডারদের জীবন
ইন্দোনেশিয়ার বড় শহরগুলোতে যাত্রী ও মালপত্র বহনে ‘ওজল’ বা মোটরসাইকেল ট্যাক্সি রাইডাররা অপরিহার্য হয়ে উঠেছেন। তারা মূলত দুটি প্ল্যাটফর্মে কাজ করেন—গোজেক ও গ্র্যাব। ভিড়ভাট্টার মধ্যে তাদেরকে শহুরে জীবনের মেরুদণ্ড হিসেবে দেখা হয়।
এই সম্প্রদায়ের জীবন নানা ত্যাগ ও নতুনভাবে বাঁচার গল্পে ভরা।
ট্র্যাজেডি থেকে আন্দোলন
২১ বছর বয়সী রাইডার আফফান কুরনিয়াওয়ান গত ২৮ আগস্ট পুলিশের একটি ট্যাকটিক্যাল গাড়ির চাপায় নিহত হন। এ ঘটনার পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, যা সাম্প্রতিক দশকগুলোর মধ্যে অন্যতম ভয়াবহ অস্থিরতা তৈরি করেছে। আফফানের জানাজায় হাজারো রাইডার উপস্থিত হন এবং পরদিন সংসদ ভবন ও পুলিশের সদর দপ্তরের সামনে তারা বিক্ষোভ করেন।
রাইডারদের মধ্যে তখন ঐক্য আরও সুদৃঢ় হয়। এক রাইডার বলেন, “এবার সবাই একসঙ্গে ছিল। আফফানের জন্য সবাই রাস্তায় নেমেছে।”
পেশা বদলের গল্প
এক দশক আগে আরিস প্রাবোয়ো ফাইন্যান্স খাতে চাকরি করতেন। কিন্তু অফিসের কঠিন সময়সূচি পরিবারের সঙ্গে দায়িত্ব ভাগ করতে তাকে বাধা দিত। পরে তিনি খাদ্য ব্যবসা ও রত্নপাথর বিক্রি করে দেখেছিলেন, কিন্তু তা টেকেনি। শেষ পর্যন্ত ওজল রাইডিং তাকে নতুন ভারসাম্য এনে দেয়।
অন্যদিকে, ২৯ বছর বয়সী আব্দুল রোখমান ছয় বছর আগে সেলস সুপারভাইজারের চাকরি ছেড়ে ওজল রাইডার হন। প্রতিদিন ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত তপ্ত রোদ বা ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে তিনি বাইক চালান। তবে এ কাজ তাকে বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনও দিয়েছে। রাস্তায় তারা ছোটখাটো দোকানে একসঙ্গে বসে চা ও নাশতা খেয়ে গল্প করেন।
বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামা
৩০ বছর বয়সী আরি কুরনিয়াওয়ান একসময় অনলাইন দোকান চালাতেন। কিন্তু হ্যাকাররা তার প্রায় ৮০ লাখ রুপিয়াহ পুঁজি নষ্ট করলে তিনি বাধ্য হয়ে এই জুলাই মাসে ওজল রাইডার হন।
তিনি দিনে গড়ে ১০ থেকে ১২টি ট্রিপ করেন, প্রতিটি থেকে আয় হয় প্রায় ১০ হাজার রুপিয়াহ। প্রতিদিন বাইক ভাড়া ও খাওয়ার খরচ বাদ দিলে ভালো দিনে হাতে থাকে ১ লাখ রুপিয়াহ, খারাপ দিনে মাত্র ২৫ হাজার রুপিয়াহ। এই টাকার মধ্যে স্ত্রীর সঙ্গে সন্তানের খরচ চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
অর্থনৈতিক ক্ষোভ ও বিক্ষোভ
রাইডারদের বিক্ষোভের পেছনে শুধু আফফানের মৃত্যু নয়, বরং আর্থিক সংকটও বড় ভূমিকা রাখে। সংসদ সদস্যদের বাড়তি সুবিধা, রাজনৈতিক অভিজাতদের সাধারণ মানুষের থেকে বিচ্ছিন্নতা এবং ভ্যাট ও জমি কর বৃদ্ধির চাপ নিচুতলার মানুষকে আরও ক্ষুব্ধ করে তোলে। ফলে আগস্টে দেশজুড়ে বড় আকারের বিক্ষোভ দেখা দেয়।

ঐক্যের নতুন চেহারা
বিক্ষোভ চলাকালে রাস্তায় অর্ডার কমে যায়, রাইডাররা ভয় পান সংঘর্ষে পড়ার। তবু তারা ঐক্যে শক্তি খুঁজে পান। অপরিচিত মানুষ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ খাবার পাঠাতে থাকেন: ভাত, রুটি বা নাশতা।
আব্দুল রোখমান বলেন, “মানুষ আমাদের জন্য যে উদ্দীপনায় খাবার পাঠিয়েছে, তা ছিল অবিশ্বাস্য।”
ডিজিটাল সংহতি
সামাজিক মাধ্যমে #BravePinkHeroGreen
এটি শুধু একটি ভিজ্যুয়াল প্রতীক ছিল না; বরং ডিজিটাল সংহতির মাধ্যমে রাস্তায় গড়ে ওঠা ঐক্যকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এক রাইডার রিজকি বলেন, “যখন দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ খাবার পাঠাতে শুরু করল, তখন মনে হলো অবশেষে আমাদের কষ্টের স্বীকৃতি পাওয়া গেছে।”
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















