তদন্তের সূচনা
মার্কিন বিচার বিভাগ ফেডারেল রিজার্ভ গভর্নর লিসা কুকের বিরুদ্ধে মর্টগেজ জালিয়াতির একটি ফৌজদারি তদন্ত শুরু করেছে। জর্জিয়া ও মিশিগানে গ্র্যান্ড জুরি সমন জারি করা হয়েছে। বিষয়টি প্রথমে তোলেন ফেডারেল হাউজিং ফাইন্যান্স এজেন্সির পরিচালক বিল পুল্টে, যিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিয়োগপ্রাপ্ত।
অভিযোগের প্রকৃতি
পুল্টের অভিযোগ, কুক একাধিক সম্পত্তিকে মর্টগেজ নেওয়ার সময় “প্রধান আবাস” হিসেবে দেখিয়েছেন, যাতে তিনি কম সুদের হারে ঋণ পেতে পারেন। কুকের নামে মিশিগান, জর্জিয়া এবং ম্যাসাচুসেটসে বাড়ি রয়েছে। ট্রাম্প এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে তাকে পদ থেকে সরিয়েছেন। এর প্রতিবাদে কুক আদালতে মামলা করেছেন।

কুকের পক্ষে আইনজীবীর বক্তব্য
কুকের আইনজীবী ওয়াশিংটনের খ্যাতনামা অ্যাবে লওয়েল বলেছেন, “ট্রাম্পের অবৈধ সিদ্ধান্তকে বৈধতা দিতে বিচার বিভাগ নতুন অজুহাত খুঁজছে। কুক সময়ভেদে তার বাড়ির বর্ণনায় যে অসঙ্গতি দেখা দিয়েছিল, তা প্রতারণা নয়। এগুলো নিয়ে ইতিমধ্যে আদালতে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে এবং দেওয়া হবে।”
ফেডের স্বাধীনতার প্রশ্ন
এই মামলাটি শেষ পর্যন্ত মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে গড়াতে পারে। ফলে ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনভাবে সুদের হার নির্ধারণের ক্ষমতা হুমকির মুখে পড়তে পারে। অর্থনীতিবিদদের মতে, রাজনৈতিক চাপমুক্ত হয়ে সুদ নির্ধারণ করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব, যা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
-20250622081748.jpg)
ট্রাম্পের চাপ
ট্রাম্প ফেডকে অবিলম্বে এবং বড় পরিসরে সুদের হার কমানোর দাবি জানিয়েছেন এবং ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ফেড আসন্ন ১৬-১৭ সেপ্টেম্বরের বৈঠকে সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নেবে।
কুকের যুক্তি
কুক তার আইনগত আবেদনে জানিয়েছেন, তিনি ২০২২ সালে ফেডে নিয়োগ পাওয়ার সময় হোয়াইট হাউস ও সেনেটে জমা দেওয়া নথিতে তিনটি বাড়ির মর্টগেজের তথ্য দিয়েছিলেন। সেখানে যে কোনো অসঙ্গতি ছিল, তা নিয়োগ ও অনুমোদনের সময়ই জানা ছিল। তাই এখন ট্রাম্প তাকে অপসারণ করতে পারেন না।

মর্টগেজ প্রক্রিয়ার বাস্তবতা
প্রধান আবাস বা দ্বিতীয় বাড়ির জন্য নেওয়া মর্টগেজ সাধারণত সস্তা হয়, কারণ এগুলোর ডিফল্ট ঝুঁকি কম। বিনিয়োগের জন্য কেনা সম্পত্তির মর্টগেজে সুদের হার বেশি হয়। তবে কুক যে সুদের হারে ঋণ নিয়েছিলেন, তা জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি ছিল। ফলে তিনি আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন—এমন প্রমাণ পাওয়া কঠিন হতে পারে।
অন্যান্য তদন্ত
কুক এই ধরনের অভিযোগে অভিযুক্ত একমাত্র নন। বিশেষ সহকারী মার্কিন অ্যাটর্নি এড মার্টিন আরও দুটি তদন্ত পরিচালনা করছেন—ডেমোক্র্যাট সিনেটর অ্যাডাম শিফ ও নিউইয়র্ক অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমসের বিরুদ্ধে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব ক্ষেত্রে ফৌজদারি দায় প্রমাণ করা কঠিন হবে। অনেক সময় ঋণদাতা সংস্থাগুলো নিজেরাই জানতেও পারে যে বাড়িটি আসলে প্রধান আবাস নয়, তবুও তারা ঋণ দিয়ে থাকে।
লিসা কুকের মামলাটি শুধু ব্যক্তিগত আইনি লড়াই নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণ প্রক্রিয়ার ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। এখন আদালতের রায়ের অপেক্ষায় রয়েছেন কুক এবং আর্থিক বিশ্বের দৃষ্টি সেদিকেই নিবদ্ধ।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















