০৫:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
শাহবাগে সমাবেশের আহ্বান, হাদির হত্যার বিচারের দাবিতে উত্তাল ইনকিলাব মঞ্চ ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত নৌ ও স্থল যোগাযোগ, নদীতে প্রাণহানি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আসিফ মাহমুদের ফেসবুক পেজ ডলার দুর্বলতার দীর্ঘতম ছায়া, দুই হাজার সতেরোর পর সবচেয়ে খারাপ বছরের পথে মার্কিন মুদ্রা দুই হাজার ছাব্বিশে যুদ্ধ শেষের আশা, রুশ জনমত জরিপে শান্তির ইঙ্গিত বিমানযাত্রার মতো স্বাভাবিক হবে মহাকাশ ভ্রমণ, ইউএইকে বৈশ্বিক কেন্দ্র বানাতে চান বিজ্ঞানী মহাকাশচারী ইউক্রেন শান্তি প্রস্তাবে ছাড় আদায় করল, রাশিয়ার সিদ্ধান্তের অপেক্ষা ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণে সংগঠিত সহিংসতা, পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের উৎখাতের অভিযোগ হন্ডুরাসে বিতর্কিত ভোটের পর ক্ষমতায় ট্রাম্প–সমর্থিত আসফুরা মোগাদিশুতে ভোটের লাইনে ইতিহাস, সরাসরি নির্বাচনের পথে সোমালিয়া

পাকিস্তান আবারও প্লাবিত: আমাদের কি সত্যিই আরও বাঁধ দরকার?

অস্বাভাবিক বন্যার চিত্র

পাকিস্তান আবারও ভয়াবহ বন্যার কবলে। পাঞ্জাবের বড় একটি অংশ ডুবে গেছে, আর সিন্ধ প্রদেশ প্রস্তুতি নিচ্ছে রাভি, শতদ্রু ও চেনাব নদীর বন্যার পানির মুখোমুখি হওয়ার, যা পাঞ্জনদে মিলিত হয়ে দক্ষিণে বয়ে যাবে। এ এক নজিরবিহীন পরিস্থিতি—এক সাথে তিনটি প্রধান নদীতে সুপার ফ্লাড।

এই বন্যায় লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়েছে এবং দেশের অর্থনীতির ভরসা লক্ষ লক্ষ একর কৃষিজমি ধ্বংস হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নতুন সতর্কতা জারি করছে, কারণ বর্ষায় সারা দেশের বড় শহরগুলো প্লাবিত হয়েছে।

প্রতিবারের মতো এবারও প্রতিকার হিসেবে আলোচনায় এসেছে নতুন বাঁধ নির্মাণ। কিন্তু শুধু বাঁধ দিয়ে ২১শ শতাব্দীর নদী ব্যবস্থাকে সামলানো সম্ভব নয়। জলবায়ু পরিবর্তন, সীমান্ত-রাজনীতি ও ভুল ভূমি ব্যবহারের কারণে আমাদের ভাবনার ধরনই বদলাতে হবে।

একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি

বর্ষায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, আর হাজার হাজার মানুষকে উঁচু এলাকায় আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। এ দৃশ্য নতুন নয়। ২০১০ সালের সুপার ফ্লাড প্রায় দুই কোটি মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। ২০২২ সালের বন্যায় ক্ষতি হয়েছিল ৩০-৪০ বিলিয়ন ডলার। এগুলো আকস্মিক ঘটনা নয়, বরং পরিবর্তিত নদী ব্যবস্থার সতর্কবার্তা।

হিমালয় ও হিন্দুকুশ অঞ্চলের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। গবেষণা বলছে, শতাব্দী শেষে উল্লেখযোগ্য হারে হিমবাহ গলবে। এর ফলে সেচ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যেভাবে ইন্দুস নদীর পানির ধারা নির্ভরযোগ্য ছিল, তা আর থাকবে না।

ডেল্টা অঞ্চলে ইতিমধ্যে লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ ও মিঠা পানির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কোট্রির নিচে পরিবেশবান্ধব পানির প্রবাহ কমে গেছে, আর সাগরের পানি জমি দখল করছে। এসব শুধু গবেষণার বিষয় নয়—এটা কৃষি জমি ও উপকূলবাসীর জীবনে দৃশ্যমান বাস্তবতা।

আরও জটিলতা তৈরি হয়েছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপোড়েনে। ভারত ইন্দুস ওয়াটার্স চুক্তির আলোচনায় অংশ নেওয়া স্থগিত করেছে, ফলে সীমান্ত পেরিয়ে পানির তথ্য বিনিময় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

India's Indus Waters Treaty Suspension: What Happens Next? – The Diplomat

ইন্দুস নদী ব্যবস্থার অস্থিরতা

পাকিস্তানের জন্য পানির সংরক্ষণ জরুরি থাকবে। তবে প্রশ্ন হলো—কোথায়, কী ধরনের এবং কীভাবে এর ব্যবহার হবে।

একই মৌসুমে বিপরীত পরিস্থিতি তৈরি হয়। গত শীতে পানির ঘাটতিতে মঙ্গলা ও তারবেলা বাঁধে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সেচ বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। অথচ জুলাইতে তারবেলার গেট খুলে বন্যার পানি ছাড়তে হয়েছে। কখনও পানি জমে না, কখনও আবার দ্রুত ছাড়তে হয়।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হিমবাহের গলন। শীতকালে পানির ভরসা কমছে, বর্ষায় হঠাৎ প্রচণ্ড প্রবাহ আসছে। ফলে ঐতিহাসিক ধারা ধরে পরিকল্পিত বাঁধ হয় খালি পড়ে থাকে, নয়তো হঠাৎ প্লাবনে ভেসে যায়।

এজন্য বাঁধের বিপক্ষে অবস্থান নয়, বরং আরও ব্যাপক দৃষ্টিভঙ্গির আহ্বান। কারণ, পাকিস্তানের বাস্তবে পলি, বাষ্পীভবন, বিদ্যুৎ চাহিদা, ফসলের সময়সূচি ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ সবকিছুকে এক সাথে সামলাতে হয়।

নতুন করে ভাবনার প্রয়োজন

আজকের বাস্তবতা হলো, ইন্দুস অববাহিকার বৈশিষ্ট্য সময় ও অনিশ্চয়তায় গড়ে উঠেছে। তাই নতুন বাঁধের সঠিক মূল্যায়ন হবে এভাবে—তা কি নমনীয়তা বাড়াবে, নাকি আরও জটিলতা তৈরি করবে?

Pakistan flooding: 2 million people affected in Punjab

নদীর শেষপ্রান্তে লবণাক্ততা ঠেকাতে মিঠা পানি পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে। বড় বাঁধকে সবকিছু সামলাতে না দিয়ে বিকল্প সংরক্ষণ পদ্ধতি—অফ-চ্যানেল স্টোরেজ বা ভূগর্ভস্থ পানি পুনঃসংরক্ষণ—বাড়াতে হবে। এতে করে বাঁধ আলোচনা শুধুই কংক্রিট নির্ভর না হয়ে, সামগ্রিক ব্যবস্থার অংশ হয়ে উঠবে।

নদীর বার্তা পড়া জরুরি

এখন সময় এসেছে নদীর দেওয়া সংকেত পড়ার। মার্চে বাঁধ শুকিয়ে যাওয়া, জুলাইতে গেট খুলে বন্যা ছাড়তে হওয়া, বন্যায় পুনরুদ্ধার হওয়া প্লাবনভূমি কিংবা গলতে থাকা হিমবাহ—সবই নদীর নোট। এগুলো উন্নয়নবিরোধী সতর্কবার্তা নয়, বরং উন্নয়নের প্রকৃত ভিত্তি।

পাকিস্তান এখনও বড় প্রকল্প নির্মাণ করতে পারে। তবে আমাদের স্বীকার করতে হবে—শুধু বাঁধই সমাধান নয়। অবকাঠামো ও নীতি একই ব্যবস্থার অংশ। তাই পরিকল্পনায় নমনীয়তা, বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য এবং সঠিক মূল্যায়ন জরুরি।

এটাই টেকসই উন্নয়নের পথ।

জনপ্রিয় সংবাদ

শাহবাগে সমাবেশের আহ্বান, হাদির হত্যার বিচারের দাবিতে উত্তাল ইনকিলাব মঞ্চ

পাকিস্তান আবারও প্লাবিত: আমাদের কি সত্যিই আরও বাঁধ দরকার?

০৬:১১:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

অস্বাভাবিক বন্যার চিত্র

পাকিস্তান আবারও ভয়াবহ বন্যার কবলে। পাঞ্জাবের বড় একটি অংশ ডুবে গেছে, আর সিন্ধ প্রদেশ প্রস্তুতি নিচ্ছে রাভি, শতদ্রু ও চেনাব নদীর বন্যার পানির মুখোমুখি হওয়ার, যা পাঞ্জনদে মিলিত হয়ে দক্ষিণে বয়ে যাবে। এ এক নজিরবিহীন পরিস্থিতি—এক সাথে তিনটি প্রধান নদীতে সুপার ফ্লাড।

এই বন্যায় লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়েছে এবং দেশের অর্থনীতির ভরসা লক্ষ লক্ষ একর কৃষিজমি ধ্বংস হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নতুন সতর্কতা জারি করছে, কারণ বর্ষায় সারা দেশের বড় শহরগুলো প্লাবিত হয়েছে।

প্রতিবারের মতো এবারও প্রতিকার হিসেবে আলোচনায় এসেছে নতুন বাঁধ নির্মাণ। কিন্তু শুধু বাঁধ দিয়ে ২১শ শতাব্দীর নদী ব্যবস্থাকে সামলানো সম্ভব নয়। জলবায়ু পরিবর্তন, সীমান্ত-রাজনীতি ও ভুল ভূমি ব্যবহারের কারণে আমাদের ভাবনার ধরনই বদলাতে হবে।

একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি

বর্ষায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, আর হাজার হাজার মানুষকে উঁচু এলাকায় আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। এ দৃশ্য নতুন নয়। ২০১০ সালের সুপার ফ্লাড প্রায় দুই কোটি মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। ২০২২ সালের বন্যায় ক্ষতি হয়েছিল ৩০-৪০ বিলিয়ন ডলার। এগুলো আকস্মিক ঘটনা নয়, বরং পরিবর্তিত নদী ব্যবস্থার সতর্কবার্তা।

হিমালয় ও হিন্দুকুশ অঞ্চলের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। গবেষণা বলছে, শতাব্দী শেষে উল্লেখযোগ্য হারে হিমবাহ গলবে। এর ফলে সেচ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যেভাবে ইন্দুস নদীর পানির ধারা নির্ভরযোগ্য ছিল, তা আর থাকবে না।

ডেল্টা অঞ্চলে ইতিমধ্যে লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ ও মিঠা পানির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কোট্রির নিচে পরিবেশবান্ধব পানির প্রবাহ কমে গেছে, আর সাগরের পানি জমি দখল করছে। এসব শুধু গবেষণার বিষয় নয়—এটা কৃষি জমি ও উপকূলবাসীর জীবনে দৃশ্যমান বাস্তবতা।

আরও জটিলতা তৈরি হয়েছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপোড়েনে। ভারত ইন্দুস ওয়াটার্স চুক্তির আলোচনায় অংশ নেওয়া স্থগিত করেছে, ফলে সীমান্ত পেরিয়ে পানির তথ্য বিনিময় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

India's Indus Waters Treaty Suspension: What Happens Next? – The Diplomat

ইন্দুস নদী ব্যবস্থার অস্থিরতা

পাকিস্তানের জন্য পানির সংরক্ষণ জরুরি থাকবে। তবে প্রশ্ন হলো—কোথায়, কী ধরনের এবং কীভাবে এর ব্যবহার হবে।

একই মৌসুমে বিপরীত পরিস্থিতি তৈরি হয়। গত শীতে পানির ঘাটতিতে মঙ্গলা ও তারবেলা বাঁধে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সেচ বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। অথচ জুলাইতে তারবেলার গেট খুলে বন্যার পানি ছাড়তে হয়েছে। কখনও পানি জমে না, কখনও আবার দ্রুত ছাড়তে হয়।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হিমবাহের গলন। শীতকালে পানির ভরসা কমছে, বর্ষায় হঠাৎ প্রচণ্ড প্রবাহ আসছে। ফলে ঐতিহাসিক ধারা ধরে পরিকল্পিত বাঁধ হয় খালি পড়ে থাকে, নয়তো হঠাৎ প্লাবনে ভেসে যায়।

এজন্য বাঁধের বিপক্ষে অবস্থান নয়, বরং আরও ব্যাপক দৃষ্টিভঙ্গির আহ্বান। কারণ, পাকিস্তানের বাস্তবে পলি, বাষ্পীভবন, বিদ্যুৎ চাহিদা, ফসলের সময়সূচি ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ সবকিছুকে এক সাথে সামলাতে হয়।

নতুন করে ভাবনার প্রয়োজন

আজকের বাস্তবতা হলো, ইন্দুস অববাহিকার বৈশিষ্ট্য সময় ও অনিশ্চয়তায় গড়ে উঠেছে। তাই নতুন বাঁধের সঠিক মূল্যায়ন হবে এভাবে—তা কি নমনীয়তা বাড়াবে, নাকি আরও জটিলতা তৈরি করবে?

Pakistan flooding: 2 million people affected in Punjab

নদীর শেষপ্রান্তে লবণাক্ততা ঠেকাতে মিঠা পানি পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে। বড় বাঁধকে সবকিছু সামলাতে না দিয়ে বিকল্প সংরক্ষণ পদ্ধতি—অফ-চ্যানেল স্টোরেজ বা ভূগর্ভস্থ পানি পুনঃসংরক্ষণ—বাড়াতে হবে। এতে করে বাঁধ আলোচনা শুধুই কংক্রিট নির্ভর না হয়ে, সামগ্রিক ব্যবস্থার অংশ হয়ে উঠবে।

নদীর বার্তা পড়া জরুরি

এখন সময় এসেছে নদীর দেওয়া সংকেত পড়ার। মার্চে বাঁধ শুকিয়ে যাওয়া, জুলাইতে গেট খুলে বন্যা ছাড়তে হওয়া, বন্যায় পুনরুদ্ধার হওয়া প্লাবনভূমি কিংবা গলতে থাকা হিমবাহ—সবই নদীর নোট। এগুলো উন্নয়নবিরোধী সতর্কবার্তা নয়, বরং উন্নয়নের প্রকৃত ভিত্তি।

পাকিস্তান এখনও বড় প্রকল্প নির্মাণ করতে পারে। তবে আমাদের স্বীকার করতে হবে—শুধু বাঁধই সমাধান নয়। অবকাঠামো ও নীতি একই ব্যবস্থার অংশ। তাই পরিকল্পনায় নমনীয়তা, বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য এবং সঠিক মূল্যায়ন জরুরি।

এটাই টেকসই উন্নয়নের পথ।