২০২৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাতে এবং ৮ সেপ্টেম্বরের ভোরে আমিরাতের আকাশে দেখা যাবে বিরল এক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক দৃশ্য। ওই রাতে ঘটবে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ, যার ফলে চাঁদ রক্তিম আভায় রূপ নেবে। এই বিরল দৃশ্যকে বলা হয় ‘ব্লাড মুন’।
কেন বিশেষ এই গ্রহণ
দুবাই অ্যাস্ট্রোনমি গ্রুপ (DAG) একে বলছে দশকের সবচেয়ে সুন্দর ও স্মরণীয় গ্রহণগুলোর একটি। এই পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ টানা ৮২ মিনিট স্থায়ী হবে, যা সাম্প্রতিক ইতিহাসে দীর্ঘতমের মধ্যে একটি।
পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ কীভাবে ঘটে
যখন পৃথিবী সূর্য ও চাঁদের মাঝখানে এসে পড়ে, তখন পৃথিবীর ছায়া চাঁদের গায়ে পড়ে। এ সময় সূর্যের আলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে চাঁদের উপর প্রতিফলিত হয়। নীল আলো ছেঁকে যায়, আর লাল-কমলা আভা চাঁদের গায়ে এসে পড়ে। ফলে চাঁদ লালচে রঙে জ্বলে ওঠে, যা ‘ব্লাড মুন’ নামে পরিচিত।
প্রতিটি পূর্ণিমায় এই ঘটনা ঘটে না। কেবল তখনই ঘটে, যখন চাঁদ পৃথিবীর কক্ষপথের সেই বিন্দুতে অবস্থান করে, যেখানে তার পথ পৃথিবীর কক্ষপথের সঙ্গে ছেদ করে।

কখন দেখা যাবে
আমিরাতের আকাশে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ধরে এই গ্রহণ পর্যবেক্ষণ করা যাবে। প্রধান ধাপগুলো হলো:
- • সন্ধ্যা ৭টা ২৮ মিনিট– উপচ্ছায়া গ্রহণ শুরু
- • রাত ৮টা ২৭ মিনিট– আংশিক গ্রহণ শুরু
- • রাত ৯টা ৩০ মিনিট– পূর্ণ গ্রহণ শুরু
- • রাত ১০টা ১২ মিনিট– সর্বোচ্চ গ্রহণ (চাঁদ সবচেয়ে বেশি লাল হবে)
- • রাত ১০টা ৫৩ মিনিট– পূর্ণ গ্রহণ শেষ
- • রাত ১১টা ৫৬ মিনিট– আংশিক গ্রহণ শেষ
- • রাত ১২টা ৫৫ মিনিট (৮ সেপ্টেম্বর)– উপচ্ছায়া গ্রহণ শেষ

প্রতিটি ধাপের মানে
- • উপচ্ছায়া: চাঁদ পৃথিবীর বাইরের ছায়ায় প্রবেশ করে। হালকা অন্ধকার দেখা যায়, খালি চোখে বোঝা কঠিন।
- • আংশিক: চাঁদ পৃথিবীর মূল ছায়ায় ঢুকে যায়। তখন চাঁদের উপর কামড় দেওয়া অংশের মতো অন্ধকার দেখা দেয়।
- • পূর্ণতা: পুরো চাঁদ অন্ধকারে ঢেকে যায় এবং লাল-কমলা রঙে ঝলমল করে।
- • সমাপ্তি: ধাপে ধাপে চাঁদ ছায়া থেকে বেরিয়ে আসে।
কেন এটি বিরল
পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ নিজেই একটি বিরল ঘটনা। তার ওপর এত দীর্ঘ সময় ধরে রক্তিম রূপে দৃশ্যমান হওয়া এবং বিশ্বব্যাপী এত মানুষের দেখা পাওয়া একসঙ্গে খুব কম ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্বের প্রায় ৮৭ শতাংশ মানুষ অন্তত আংশিক অংশে এই দৃশ্য উপভোগ করতে পারবে।
কিভাবে দেখা যাবে
এই গ্রহণ খালি চোখে নিরাপদে দেখা যাবে, কোনো বিশেষ চশমা বা ফিল্টারের দরকার নেই। তবে দূরবীন বা টেলিস্কোপ ব্যবহার করলে চাঁদের আরও স্পষ্ট ও রঙিন রূপ ধরা দেবে। ছবির জন্য ক্যামেরা ও ট্রাইপড ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে DAG।

দুবাই থেকে বিশেষ আয়োজন
দুবাই অ্যাস্ট্রোনমি গ্রুপ সরাসরি সম্প্রচারের আয়োজন করছে, যেখানে বুর্জ খলিফার ফ্রেমে চাঁদের রক্তিম দৃশ্য ধারণের পরিকল্পনাও রয়েছে। পাশাপাশি ছয় মহাদেশের বিভিন্ন জ্যোতির্বিজ্ঞানী সংগঠন এই লাইভস্ট্রিমে অংশ নেবে। অংশীদারদের মধ্যে রয়েছে আবুধাবির আল সাদিম অ্যাস্ট্রোনমি, অস্ট্রেলিয়ার পার্থ অবজারভেটরি, বাহরাইন স্টারগেজার্স, পাকিস্তানের লাহোর অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি, স্পেনের অ্যাস্ট্রো বার্সেলোনা, মিশরের ESA এবং ভারতের স্পেস ইন্ডিয়া।
DAG জানিয়েছে, এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য হলো বিশ্বব্যাপী মানুষকে একই আকাশের নিচে একত্রিত করা, জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিস্ময় ভাগাভাগি করা এবং কৌতূহল জাগিয়ে তোলা।
পরবর্তী গ্রহণ কবে
যারা এবার দেখতে পারবেন না, তাদের জন্য পরবর্তী সুযোগ আসবে ২০২৮ সালের ৬ জুলাই। তবে সেটি হবে আংশিক গ্রহণ। একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর আবার একটি পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে। নতুন বছরের আগের রাতেই আমিরাতের আকাশে চাঁদ লালচে রূপ নেবে, যা বছরের শেষ রাতে হবে এক অসাধারণ উপহার।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















