লোবানের ঐতিহাসিক গুরুত্ব
ওমানের দক্ষিণের ধোফার অঞ্চলের দাওকা উপত্যকা শুধু মরুভূমি নয়, এটি লোবান গাছের জন্য বিশ্বখ্যাত। এই গাছ থেকে পাওয়া সুগন্ধি রজন হাজার বছর ধরে সংগ্রহ করে আসছে স্থানীয়রা। একে বলা হয় “সাদা সোনা”। লোবানের তেল সুগন্ধি ও ত্বক পরিচর্যায় ব্যবহৃত হয়, আবার স্থানীয় বাজারে দানা আকারেও বিক্রি হয়।
প্রাচীনকালে এই লোবান ধোফার থেকে সাগর ও কাফেলার মাধ্যমে পৌঁছাত মেসোপটেমিয়া, সিন্ধু উপত্যকা, প্রাচীন মিশর, গ্রিস, রোম এবং এমনকি চীনে। বিশেষজ্ঞ আহমেদ আল মুরশিদি জানান, অতীতে লোবানের মূল্য ছিল আজকের তেলের সমান।

বিশ্ব ঐতিহ্য ও বৈচিত্র্য
দাওকা উপত্যকায় প্রায় পাঁচ হাজার বোসওয়েলিয়া গাছ রয়েছে। এখানকার লোবান ২০০০ সাল থেকে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। এর সঙ্গে খোর রোরি, আল বালিদ ও শিসরের নামও জড়িত। উপত্যকার লোবানের চারটি প্রধান প্রজাতির একটি হলো নাজদি, যা বিশেষভাবে ঔষধি গুণের জন্য পরিচিত।
ফয়সাল হুসেইন বিন আসকার জানান, যত বেশি পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ লোবান, তত বেশি তা পানীয় চিকিৎসায় ব্যবহারযোগ্য। বাকিটা ব্যবহৃত হয় ধূপ হিসেবে। ধোফারে কয়েকটি কারখানায় লোবানভিত্তিক ত্বক পরিচর্যা ও তেল উৎপাদন হয়। সবচেয়ে দামি ও বিরল লোবানের রং হালকা সবুজ।
সংগ্রহের ঐতিহ্য ও ঝুঁকি
লোবান সংগ্রহ হয় প্রাচীন কায়দায়। গাছের ছালে হালকা কাট দিয়ে রস বের করা হয় এবং কয়েক দিন রেখে তা শক্ত করা হয়। বিশেষ দক্ষতা ছাড়া এ কাজ করলে গাছ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। স্থানীয়রা বলেন, “লোবান গাছ দ্রুত রেগে যায়।” প্রতিটি গাছে পাঁচটির মতো ছোট ছোট আঘাত দিয়ে সংগ্রহ করতে হয়। অতিরিক্ত ক্ষত করলে গাছ মারা যেতে পারে।

সুগন্ধি শিল্পে লোবানের স্থান
ওমানের খ্যাতনামা সুগন্ধি প্রতিষ্ঠান আমোয়াজ এই রিজার্ভ পরিচালনা করে। তাদের বিলাসবহুল সুগন্ধি আন্তর্জাতিক বাজারে শত শত ডলার দামে বিক্রি হয়। এমনকি একটি সীমিত সংস্করণের বোতলের দাম প্রায় দুই হাজার ডলার পর্যন্ত পৌঁছেছে।
সংরক্ষণ উদ্যোগ
২০২২ সালে আমোয়াজ ও ওমান সরকার মিলে দাওকা রিজার্ভ উন্নয়ন শুরু করে। এখানে স্থানীয়দের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে এবং মোট গাছের মাত্র পাঁচ ভাগের একভাগ থেকে রজন সংগ্রহ করা হচ্ছে, যাতে বাকি গাছ রক্ষা পায়। প্রতিটি গাছকে আলাদা কোড দিয়ে বিশেষজ্ঞরা নজরদারির আওতায় রাখছেন।

রিজার্ভে একটি ডিস্টিলারী তৈরির পরিকল্পনা চলছে, যেখানে সরাসরি তেল প্রস্তুত হবে। বর্তমানে এ কাজ ফ্রান্সে হয়। রিজার্ভ তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ ফারাজ ইস্তানবুলি জানান, সড়ক নির্মাণের মতো সরকারি প্রকল্পে অনেক লোবান গাছের এলাকাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই সেসব গাছ সরিয়ে এনে রিজার্ভে লাগানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০০ গাছ রক্ষা করা গেছে।
ওমানের লোবান শুধু বাণিজ্যিক পণ্য নয়, এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও চিকিৎসার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। আধুনিক উন্নয়ন ও পরিবেশগত ঝুঁকির মধ্যেও এই সাদা সোনা রক্ষায় সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগ একসঙ্গে কাজ করছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















