চীনে তৈরি স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক আকাশ ট্যাক্সি এই সপ্তাহে প্রথমবারের মতো আফ্রিকার আকাশে ওড়েছে। চীনের তৈরি নতুন প্রজন্মের নিম্ন-আকাশযান এখন বিশ্বব্যাপী ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
প্রদর্শিত পণ্যটি হলো একটি পাইলটবিহীন বৈদ্যুতিক উড্ডয়ন ও অবতরণযান (eVTOL), যা তৈরি করেছে ইহ্যাং হোল্ডিংস, দক্ষিণ চীনের গুয়াংজু শহরের একটি নাসডাক-তালিকাভুক্ত প্রযুক্তি কোম্পানি।
রোয়ান্ডার রাজধানী কিগালিতে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার অনুষ্ঠিত এভিয়েশন আফ্রিকা সামিট ও প্রদর্শনীতে এটি উড়ানো হয়। এ প্রদর্শনীতে ৩৪টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

রোয়ান্ডা সরকারের তথ্য অনুযায়ী, চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশনের সঙ্গে যৌথভাবে এই পরীক্ষামূলক ফ্লাইটের আয়োজন করে দেশটি। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া এ তথ্য প্রকাশ করে।
রোয়ান্ডার ‘হার্ট অব আফ্রিকা’ ফেসবুক পেজে বলা হয়, “এই অংশীদারিত্বের লক্ষ্য হলো আফ্রিকা মহাদেশে সর্বাধুনিক বিমান প্রযুক্তি বাস্তবায়নে রোয়ান্ডার অগ্রণী অবস্থানকে আরও সুসংহত করা।”
১৪.২ মিলিয়ন জনসংখ্যার স্থলবেষ্টিত দেশ রোয়ান্ডা, যাদের পর্যটন খাত দ্রুত বাড়ছে, নগর জট ও বায়ুদূষণ কমাতে উন্নত বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়। আফ্রিকান সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
সিনহুয়ার ভাষ্য অনুযায়ী, দেশটি তাদের আকাশ পরিবহন খাতকে এগিয়ে নিতে “বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি সহযোগী” খুঁজছে।
চীন ইতিমধ্যেই নিম্ন-আকাশ বিমানকে উচ্চ সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং গত কয়েক বছরে এই খাতের বিকাশে ব্যাপক নীতিগত সহায়তা দিয়েছে।

দেশটি এখন বিমান ট্যাক্সি ও ডেলিভারি ড্রোনসহ একাধিক প্রযুক্তি বাণিজ্যিকভাবে চালুর পথে রয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান হুরুনের প্রতিবেদনে চীনের বেসামরিক বিমান চলাচল প্রশাসনের তথ্য উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে এই খাতের অর্থনীতি ১.৫ ট্রিলিয়ন ইয়ুয়ান (২১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ছাড়াতে পারে।
চীনের এসব নিম্ন-আকাশযান এখন বিদেশেও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। জুলাই মাসে একটি থাই কোম্পানি ৫০০টি চীনা eVTOL কেনার জন্য ১.৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি করে। একই মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি ক্রেতা সাংহাই টিক্যাব টেকনোলজির তৈরি ৩৫০টি বিমান কিনতে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করে।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের চেয়ার অধ্যাপক চেন ঝিউ বলেন, আফ্রিকার তুলনামূলক কম গড় আয় চীনের এভিয়েশন কোম্পানিগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তবে তুলনামূলক শিথিল নিয়মকানুনের কারণে আফ্রিকান দেশগুলো এসব কোম্পানিকে “বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ” দিতে পারে।

জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের আফ্রিকা-চীন সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক বুলেলানি জিলি বলেন, চীনা আকাশ ট্যাক্সি আফ্রিকায় বাজার পেতে পারে যদি এগুলো মহাদেশের মানুষের নির্ভরশীল পুরোনো গাড়িগুলোর পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে পারে।
তিনি বলেন, “চীনা বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতারা সরাসরি নতুন ইঞ্জিন চালিত গাড়ি বা প্রতিদ্বন্দ্বী বৈদ্যুতিক গাড়ি কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে না। বরং তারা কাজ করছে এমন এক মহাদেশে, যেখানে প্রকৃত প্রতিযোগিতা পুরোনো গাড়ির বাজারেই সীমাবদ্ধ। বৈদ্যুতিক যানবাহনকে জনপ্রিয় করতে হলে এই দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত পুরোনো গাড়ির অর্থনীতির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।”
সিনহুয়া রোয়ান্ডার অবকাঠাম্যমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, এই সপ্তাহে ইহ্যাংয়ের ফ্লাইটটি দেশটির “উন্নত আকাশ পরিবহনের জন্য একটি নিরাপদ ও প্রগতিশীল নিয়ন্ত্রক পরিবেশ তৈরির অঙ্গীকার” প্রদর্শন করেছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















