১০:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
চীন-আমেরিকা সম্পর্কের নতুন বিতর্ক: $১৩ বিলিয়ন বিটকয়েন হ্যাকিংয়ের অভিযোগ পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-১২৪) শেখ হাসিনার রায় কবে, জানা যাবে আজ পাকিস্তানে দরিদ্র্যর সংখ্যা বিশ্বব্যাংক ও সরকার নানা ভাবে নির্ধারণ থাই রাজার ঐতিহাসিক চীন সফর: ১৯৪৯ সালের পর প্রথমবার কোনো থাই সম্রাটের বেইজিং যাত্রা উমর নবি: যিনি ‘সাদা কলার গ্রুপ’কে উত্সাহিত করেছিলেন প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩২৩) দ্বিতীয় মার্কিন তেল চালানঃ ১ মিলিয়ন ব্যারেল নিয়ে পাকিস্তানে পৌঁছেছে সাগর পাবলিশার্স, পাকিস্তানী চরিত্র ও “আওয়ামী লীগ আঁচাচ্ছে” সাইকেল যোজনার দুই দশক: নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বিপ্লব

বদরুদ্দীন উমর আর নেই

প্রবীণ বামপন্থি রাজনীতিক, লেখক ও গবেষক বদরুদ্দীন উমর আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নইলাহি রাজিউন)। রোববার (৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকাল ১০টা ৫ মিনিটে ঢাকার বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।

ডেভেলপমেন্ট

রুহিন হোসেন প্রিন্স জানান, আজ সকালে তিনি বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে দ্রুত বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে নেওয়া হলে সকাল ১০টা ৫ মিনিটে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবরটি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই বামপন্থি রাজনীতিক ও তার অনুসারীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।

ব্যাকগ্রাউন্ড

১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় এক উচ্চবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বদরুদ্দীন উমর। তার বাবা আবুল হাশিম ছিলেন অবিভক্ত বাংলার মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক।
শিক্ষাজীবনে তিনি বর্ধমান টাউন স্কুল ও রাজ কলেজ থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৩ সালে স্নাতক সম্মান এবং ১৯৫৫ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬১ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে PPE (Philosophy, Politics, and Economics) বিষয়ে অনার্স ডিগ্রি নেন।

পেশাজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা দিয়ে শুরু করেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৬৮ সালে পদত্যাগ করেন।

রাজনীতিতে তিনি বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হিসেবেও সক্রিয় ছিলেন। ২০০৩ সালে তিনি জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল গঠন করেন এবং সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

লেখক ও তাত্ত্বিক হিসেবেও বদরুদ্দীন উমর ছিলেন সমানভাবে পরিচিত। ৬০-এর দশকে তার লেখা ‘সাম্প্রদায়িকতা’, ‘সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা’, ‘সংস্কৃতির সংকট’ প্রভৃতি গ্রন্থ আলোচিত হয়। ‘পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’—এর তিন খণ্ড, যুদ্ধ পূর্ব ও পরবর্তী বাংলাদেশ নিয়ে তার বিশ্লেষণমূলক রচনাগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭২) ও ইতিহাস পরিষদ পুরস্কার (১৯৭৪) প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি। পরবর্তীতে ২০২৫ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হলেও তা গ্রহণ করেননি।

গত বছরের ঐতিহাসিক জুলাই উত্থান নেতৃত্ব বদলে দিয়েছিল। তবে দেশের রাজনীতিতে রক্ষণশীল, ধর্মনির্ভর দলগুলোর প্রভাব বাড়তে থাকে—জামায়াত শক্তিশালী হয় এবং ছাত্র-নেতৃত্বাধীন নতুন দলগুলোও ধর্মকে ব্যবহার করতে শুরু করে। জুলাই আন্দোলনের পরে তার এ স্পষ্ট বক্তব্য মানুষকে নতুন করে ভাবতে সাহায্য করে ও  এই প্রেক্ষাপটে বদরুদ্দীন উমরের চিন্তাধারা নতুন করে আলোচনায় আসে।

প্রতিক্রিয়া

তার মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সহযোদ্ধারা বলছেন, তিনি ছিলেন প্রজ্ঞাবান চিন্তাবিদ ও নির্ভীক বুদ্ধিজীবী, যিনি আমৃত্যু বামপন্থি আদর্শে অটল ছিলেন। বিশ্লেষকদের মতে, তার অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রগতিশীল রাজনীতিতে এক অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি হলো।

বদরুদ্দীন উমর ছিলেন এক ‘অবিচ্যুত নক্ষত্র’। লেখালেখি, রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, সংগঠন ও আন্দোলনে ছয় দশকের বেশি সময় ধরে অবদান রেখেছেন তিনি। তার জীবন ছিল আত্মত্যাগ, মুক্তচিন্তা ও আদর্শিক দৃঢ়তার প্রতীক। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তার চিন্তা ও কর্ম থেকে অনুপ্রেরণা পাবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

চীন-আমেরিকা সম্পর্কের নতুন বিতর্ক: $১৩ বিলিয়ন বিটকয়েন হ্যাকিংয়ের অভিযোগ

বদরুদ্দীন উমর আর নেই

১১:৫৪:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রবীণ বামপন্থি রাজনীতিক, লেখক ও গবেষক বদরুদ্দীন উমর আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নইলাহি রাজিউন)। রোববার (৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকাল ১০টা ৫ মিনিটে ঢাকার বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।

ডেভেলপমেন্ট

রুহিন হোসেন প্রিন্স জানান, আজ সকালে তিনি বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে দ্রুত বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে নেওয়া হলে সকাল ১০টা ৫ মিনিটে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবরটি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই বামপন্থি রাজনীতিক ও তার অনুসারীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।

ব্যাকগ্রাউন্ড

১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় এক উচ্চবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বদরুদ্দীন উমর। তার বাবা আবুল হাশিম ছিলেন অবিভক্ত বাংলার মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক।
শিক্ষাজীবনে তিনি বর্ধমান টাউন স্কুল ও রাজ কলেজ থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৩ সালে স্নাতক সম্মান এবং ১৯৫৫ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬১ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে PPE (Philosophy, Politics, and Economics) বিষয়ে অনার্স ডিগ্রি নেন।

পেশাজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা দিয়ে শুরু করেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৬৮ সালে পদত্যাগ করেন।

রাজনীতিতে তিনি বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হিসেবেও সক্রিয় ছিলেন। ২০০৩ সালে তিনি জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল গঠন করেন এবং সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

লেখক ও তাত্ত্বিক হিসেবেও বদরুদ্দীন উমর ছিলেন সমানভাবে পরিচিত। ৬০-এর দশকে তার লেখা ‘সাম্প্রদায়িকতা’, ‘সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা’, ‘সংস্কৃতির সংকট’ প্রভৃতি গ্রন্থ আলোচিত হয়। ‘পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’—এর তিন খণ্ড, যুদ্ধ পূর্ব ও পরবর্তী বাংলাদেশ নিয়ে তার বিশ্লেষণমূলক রচনাগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭২) ও ইতিহাস পরিষদ পুরস্কার (১৯৭৪) প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি। পরবর্তীতে ২০২৫ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হলেও তা গ্রহণ করেননি।

গত বছরের ঐতিহাসিক জুলাই উত্থান নেতৃত্ব বদলে দিয়েছিল। তবে দেশের রাজনীতিতে রক্ষণশীল, ধর্মনির্ভর দলগুলোর প্রভাব বাড়তে থাকে—জামায়াত শক্তিশালী হয় এবং ছাত্র-নেতৃত্বাধীন নতুন দলগুলোও ধর্মকে ব্যবহার করতে শুরু করে। জুলাই আন্দোলনের পরে তার এ স্পষ্ট বক্তব্য মানুষকে নতুন করে ভাবতে সাহায্য করে ও  এই প্রেক্ষাপটে বদরুদ্দীন উমরের চিন্তাধারা নতুন করে আলোচনায় আসে।

প্রতিক্রিয়া

তার মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সহযোদ্ধারা বলছেন, তিনি ছিলেন প্রজ্ঞাবান চিন্তাবিদ ও নির্ভীক বুদ্ধিজীবী, যিনি আমৃত্যু বামপন্থি আদর্শে অটল ছিলেন। বিশ্লেষকদের মতে, তার অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রগতিশীল রাজনীতিতে এক অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি হলো।

বদরুদ্দীন উমর ছিলেন এক ‘অবিচ্যুত নক্ষত্র’। লেখালেখি, রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, সংগঠন ও আন্দোলনে ছয় দশকের বেশি সময় ধরে অবদান রেখেছেন তিনি। তার জীবন ছিল আত্মত্যাগ, মুক্তচিন্তা ও আদর্শিক দৃঢ়তার প্রতীক। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তার চিন্তা ও কর্ম থেকে অনুপ্রেরণা পাবে।