বাংলাদেশে ইলিশ মাছের দাম বর্তমানে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। প্রতি কেজি ইলিশ বাজারে তিন থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, বিশেষত পূজার মৌসুমে। ইলিশ বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় মাছ হলেও চাহিদা বাড়ার কারণে এবং রপ্তানির ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে এর মূল্য আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দুর্গাপূজার জন্য ভারতের বাজারে ইলিশ রপ্তানি
প্রতি বছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ রপ্তানির একটি প্রথা তৈরি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বাজারে দুর্গাপূজার সময় ইলিশের চাহিদা ব্যাপক, এবং বাংলাদেশি ইলিশকে সেখানে সর্বোচ্চ মানের হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ বছরও বাংলাদেশ সরকার বিশেষ অনুমতি দিয়ে বিপুল পরিমাণ ইলিশ ভারতে রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে কলকাতার বাজারে দুর্গাপূজার আনন্দে ইলিশের স্বাদ বাড়বে, আবার বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরাও লাভবান হবেন।
অর্থনীতি ও সাধারণ ভোক্তার চাপ
তবে এই রপ্তানির কারণে দেশের বাজারে সংকট দেখা দেয়। অভ্যন্তরীণ চাহিদা অপরিবর্তিত থাকলেও সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে যায়। এতে সাধারণ ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অনেকেই অভিযোগ করছেন, পূজার সময় প্রতিবেশী দেশকে ইলিশ সরবরাহ করার ফলে স্থানীয় বাজারে দাম আরও অস্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে।
কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে রপ্তানির গুরুত্ব
অন্যদিকে, কূটনৈতিক দৃষ্টিতে এই রপ্তানি একটি সদিচ্ছার প্রতীক। ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক নানা সময়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে গেছে। ইলিশ রপ্তানি কেবল বাণিজ্য নয়, বরং এটি দুই দেশের সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ও সৌহার্দ্যের বহিঃপ্রকাশ। দুর্গাপূজার সময় ভারতের মানুষের কাছে বাংলাদেশ থেকে উপহারস্বরূপ ইলিশ পৌঁছানো নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করে।
সম্পর্ক পুনর্গঠনের সম্ভাবনা
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ইলিশ রপ্তানি কি দুই দেশের সম্পর্ক পুনর্গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে? বাস্তবে, বড় কূটনৈতিক সমস্যার সমাধান কেবল ইলিশের মতো প্রতীকী পদক্ষেপ দিয়ে সম্ভব নয়। তবে এটি একটি নরম শক্তির ব্যবহার, যা মানুষের আবেগ ও সংস্কৃতিকে ছুঁয়ে যায়। এর মাধ্যমে উভয় দেশের সাধারণ মানুষ কাছাকাছি আসতে পারেন, আর রাজনৈতিক নেতাদের জন্যও এটি পারস্পরিক সহযোগিতার একটি ক্ষেত্র তৈরি করে।
ইলিশ রপ্তানির ফলে বাংলাদেশের ভোক্তারা যেমন বেশি দামে মাছ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন, তেমনি ভারতীয় বাজারে উৎসবের আনন্দ বাড়ছে। অর্থনৈতিক চাপ থাকলেও রাজনৈতিকভাবে এই পদক্ষেপকে একটি ইতিবাচক বার্তা হিসেবে দেখা যেতে পারে। বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে অভ্যন্তরীণ বাজারকে সুরক্ষা দিয়ে সীমিত আকারে রপ্তানি চালু রাখা, যাতে সম্পর্কের উন্নতি যেমন তেমনি সাধারণ ভোক্তার ক্ষতিও না হয়।