০৮:১২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
বিশ্বের অর্থনীতি ও স্থিতিশীলতা ধ্বংসে এগিয়ে চলেছে হোয়াইট কলার টেরোরিজম স্যাম্পলের সিম্ফনি: ড্যানিয়েল লোপাটিনের পরীক্ষামূলক সাউন্ডস্কেপের নতুন বিস্তার এআই ভিডিও কমাতে ‘টোন ডাউন’ অপশন আনছে টিকটক রেকর্ড-নতুন ফল: চীনের জুনো ‘ঘোস্ট পার্টিকল’ ডিটেক্টরের অভাবনীয় সাফল্য ডেভনে আবার ফিরতে পারে বন্য বিড়াল: দুই বছরের গবেষণায় নতুন সম্ভাবনা প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩২৭) নন-প্রফিট কাঠামোতে যাচ্ছে মাষ্টডন, সিইও পদ ছাড়ছেন প্রতিষ্ঠাতা ইউজেন রখকো” ইউটিউবে রেকর্ড ভিউ, তবু ‘বেবি শার্ক’ নির্মাতার আয় সীমিত কেন” চীনের এআই দৌড়ে তীব্র প্রতিযোগিতা, লোকসানে কেঁপে উঠল বাইদু গোপন সসের নিরাপত্তায় নতুন জোর দিচ্ছে রেইজিং কেইন’স

ঢাকার ফ্ল্যাট বাজারে ধস : কেন হঠাৎ দাম কমছে

ঢাকা শহর এবং দেশের অন্যান্য বড় শহরে দীর্ঘদিন ধরে ফ্ল্যাটের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। তবে গত কয়েক মাসে দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র— ফ্ল্যাটের দাম হঠাৎ করেই কমতে শুরু করেছে। এই পরিবর্তন অনেক ক্রেতা-বিক্রেতা, বিনিয়োগকারী এবং নির্মাণ খাতের উদ্যোক্তাদের ভাবাচ্ছে।

অর্থনৈতিক মন্দা ও ক্রয়ক্ষমতার হ্রাস

বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ফ্ল্যাটের বাজারে সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলছে। উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, ডলারের সংকট এবং আমদানি ব্যয়ের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বেড়েছে। ফলে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। আগে যারা কিস্তি বা ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট কিনতে পারতেন, তারা এখন দ্বিধায় ভুগছেন।

ব্যাংক ঋণের সুদহার বৃদ্ধি

ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সুদহার বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের জন্য ঋণ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলো রিয়েল এস্টেট খাতে আগের মতো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এর ফলে ক্রেতাদের চাপ কমেছে, যা সরাসরি দাম কমিয়ে দিচ্ছে।

বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহ

আগে অনেকেই ফ্ল্যাট কিনে ভাড়া দিয়ে বা ভবিষ্যতে বেশি দামে বিক্রি করে লাভ করতেন। কিন্তু এখন ভাড়া বাজারও স্থবির হয়ে পড়েছে, পাশাপাশি পুনরায় বিক্রির ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। এই কারণে বিনিয়োগকারীরা নতুন ফ্ল্যাট কেনা থেকে বিরত থাকছেন।

বিদেশে অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধি

অনেক ধনী পরিবার বা সম্ভাব্য ক্রেতা এখন তাদের সঞ্চয় বিদেশে স্থানান্তর করছেন নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য। বিদেশে স্থায়ী হওয়ার প্রবণতা বা সন্তানদের পড়াশোনার খরচ মেটাতে ডলারভিত্তিক বিনিয়োগ বেড়ে যাওয়ায় দেশের অভ্যন্তরে ফ্ল্যাট বাজারে চাপ তৈরি হয়েছে।

নতুন নির্মাণ প্রকল্পের চাপ

যদিও ক্রেতার সংখ্যা কমছে, কিন্তু নির্মাণ কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যেই শুরু করা প্রকল্পগুলো শেষ করতে বাধ্য। ফলে বাজারে নতুন ফ্ল্যাটের সরবরাহ বেড়ে যাচ্ছে। চাহিদা কম অথচ সরবরাহ বেশি— এই পরিস্থিতিতে দাম স্বাভাবিকভাবেই কমতে বাধ্য হচ্ছে।

ঢাকার বাইরের শহরগুলোর অবস্থা

চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট কিংবা খুলনার মতো শহরেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের সংকট, প্রবাসী আয়ের অনিশ্চয়তা এবং উচ্চ খরচের কারণে সেসব শহরের মানুষও নতুন ফ্ল্যাট কেনার বিষয়ে আগ্রহ হারাচ্ছেন। ফলে ঢাকার মতোই সেখানেও দাম কমতে শুরু করেছে।

সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনীতি স্থিতিশীল না হলে এবং ব্যাংক ঋণ সহজলভ্য না হলে ফ্ল্যাট বাজারে আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দেবে না। তবে দাম কমে যাওয়ায় কিছু প্রকৃত ক্রেতা ভবিষ্যতে সুযোগ নিতে পারেন। আবার ডেভেলপাররা প্রকল্পের মান উন্নত ও খরচ কমিয়ে বাজারে টিকে থাকার চেষ্টা করবেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

বিশ্বের অর্থনীতি ও স্থিতিশীলতা ধ্বংসে এগিয়ে চলেছে হোয়াইট কলার টেরোরিজম

ঢাকার ফ্ল্যাট বাজারে ধস : কেন হঠাৎ দাম কমছে

০৪:৪৩:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ঢাকা শহর এবং দেশের অন্যান্য বড় শহরে দীর্ঘদিন ধরে ফ্ল্যাটের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। তবে গত কয়েক মাসে দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র— ফ্ল্যাটের দাম হঠাৎ করেই কমতে শুরু করেছে। এই পরিবর্তন অনেক ক্রেতা-বিক্রেতা, বিনিয়োগকারী এবং নির্মাণ খাতের উদ্যোক্তাদের ভাবাচ্ছে।

অর্থনৈতিক মন্দা ও ক্রয়ক্ষমতার হ্রাস

বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ফ্ল্যাটের বাজারে সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলছে। উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, ডলারের সংকট এবং আমদানি ব্যয়ের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বেড়েছে। ফলে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। আগে যারা কিস্তি বা ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট কিনতে পারতেন, তারা এখন দ্বিধায় ভুগছেন।

ব্যাংক ঋণের সুদহার বৃদ্ধি

ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সুদহার বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের জন্য ঋণ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলো রিয়েল এস্টেট খাতে আগের মতো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এর ফলে ক্রেতাদের চাপ কমেছে, যা সরাসরি দাম কমিয়ে দিচ্ছে।

বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহ

আগে অনেকেই ফ্ল্যাট কিনে ভাড়া দিয়ে বা ভবিষ্যতে বেশি দামে বিক্রি করে লাভ করতেন। কিন্তু এখন ভাড়া বাজারও স্থবির হয়ে পড়েছে, পাশাপাশি পুনরায় বিক্রির ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। এই কারণে বিনিয়োগকারীরা নতুন ফ্ল্যাট কেনা থেকে বিরত থাকছেন।

বিদেশে অর্থপ্রবাহ বৃদ্ধি

অনেক ধনী পরিবার বা সম্ভাব্য ক্রেতা এখন তাদের সঞ্চয় বিদেশে স্থানান্তর করছেন নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য। বিদেশে স্থায়ী হওয়ার প্রবণতা বা সন্তানদের পড়াশোনার খরচ মেটাতে ডলারভিত্তিক বিনিয়োগ বেড়ে যাওয়ায় দেশের অভ্যন্তরে ফ্ল্যাট বাজারে চাপ তৈরি হয়েছে।

নতুন নির্মাণ প্রকল্পের চাপ

যদিও ক্রেতার সংখ্যা কমছে, কিন্তু নির্মাণ কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যেই শুরু করা প্রকল্পগুলো শেষ করতে বাধ্য। ফলে বাজারে নতুন ফ্ল্যাটের সরবরাহ বেড়ে যাচ্ছে। চাহিদা কম অথচ সরবরাহ বেশি— এই পরিস্থিতিতে দাম স্বাভাবিকভাবেই কমতে বাধ্য হচ্ছে।

ঢাকার বাইরের শহরগুলোর অবস্থা

চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট কিংবা খুলনার মতো শহরেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের সংকট, প্রবাসী আয়ের অনিশ্চয়তা এবং উচ্চ খরচের কারণে সেসব শহরের মানুষও নতুন ফ্ল্যাট কেনার বিষয়ে আগ্রহ হারাচ্ছেন। ফলে ঢাকার মতোই সেখানেও দাম কমতে শুরু করেছে।

সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনীতি স্থিতিশীল না হলে এবং ব্যাংক ঋণ সহজলভ্য না হলে ফ্ল্যাট বাজারে আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দেবে না। তবে দাম কমে যাওয়ায় কিছু প্রকৃত ক্রেতা ভবিষ্যতে সুযোগ নিতে পারেন। আবার ডেভেলপাররা প্রকল্পের মান উন্নত ও খরচ কমিয়ে বাজারে টিকে থাকার চেষ্টা করবেন।