০২:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ম্যানিলা সামরিক সহায়তায় জাপানের দিকে ঝুঁকছে

চীনের সঙ্গে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে নতুন কৌশল

দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সঙ্গে চলমান উত্তেজনা এবং সীমান্ত বিরোধের কারণে ফিলিপাইন তার সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে। এই লক্ষ্যেই দেশটি এখন জাপানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার পথে হাঁটছে। এর অংশ হিসেবে প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি, যৌথ নিরাপত্তা কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং প্রতিরক্ষা শিল্পে অংশীদারিত্ব জোরদারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

ফিলিপাইন সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল ফ্রান্সেল মার্গারেথ পদিলা জাপান টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমরা জাপানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা চাইছি। রাডার, ড্রোন বা আনম্যানড সিস্টেম এবং জাহাজ নির্মাণে জাপানের অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।”

স্বনির্ভর প্রতিরক্ষা নীতি

গত বছরের অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মারকোস জুনিয়র স্বনির্ভর প্রতিরক্ষা নীতি (Self-Reliant Defense Posture-SRDP) বাস্তবায়নের জন্য আইন স্বাক্ষর করেন। পদিলা জানান, এই নীতি শক্তিশালী করতে জাপানের সঙ্গে কো-ডেভেলপমেন্ট বা লাইসেন্স উৎপাদন ব্যবস্থার মতো প্রকল্প বিবেচনায় রয়েছে। লক্ষ্য হলো নজরদারি, আকাশ প্রতিরক্ষা, সামুদ্রিক সম্পদ এবং নতুন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সক্ষমতা বাড়ানো।

প্রতিরক্ষা ব্যয় ও আধুনিকীকরণ

ফিলিপাইন সরকার ২০২৩ সালে সামরিক উন্নয়ন পরিকল্পনা “রি-হরাইজন ৩” অনুমোদন করেছে। এর আওতায় আগামী এক দশকে ২ ট্রিলিয়ন ফিলিপাইন পেসো (৩৫ বিলিয়ন ডলার) ব্যয় করার পরিকল্পনা আছে। এ ছাড়া ২০২৬ সালের প্রতিরক্ষা বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে ২৯৯.৩ বিলিয়ন পেসো (৫.২ বিলিয়ন ডলার), যা টানা তিন বছর দ্বিগুণ অঙ্কের প্রবৃদ্ধি দেখাচ্ছে।

পদিলা বলেন, “আমরা একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ভঙ্গি গড়ে তুলতে চাই। স্বল্পমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি আধুনিকীকরণের দিকেও এগিয়ে যাচ্ছি।”

জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা

জাপান ইতিমধ্যেই ফিলিপাইনকে নিরাপত্তা সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষণ সহায়তা দিচ্ছে। সম্প্রতি জাপান সেকেন্ডহ্যান্ড যুদ্ধজাহাজ হস্তান্তরের বিষয়ে আলোচনা করছে। বিশেষ করে আবুকুমা-শ্রেণির ডেস্ট্রয়ার এসকর্ট (যা অনেক সময় ফ্রিগেট বলা হয়) ২০২৭ সালে অবসর নেবে, এবং এগুলো হস্তান্তরের বিষয়ে আলোচনা চলছে। এটি হলে জাপানের পক্ষ থেকে বহুদিন পর ব্যবহৃত নৌযান রপ্তানির নজির তৈরি হবে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রও ফিলিপাইনের একমাত্র প্রতিরক্ষা চুক্তিভিত্তিক মিত্র হিসেবে ভূমিকা রাখছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে এনএমইসিসি মিসাইল সিস্টেম, সারফেস ড্রোন, বিশেষ বাহিনীর প্রশিক্ষণসহ যৌথ উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া অস্ত্র উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও লজিস্টিক সহায়তায় অংশীদারিত্ব বাড়ছে।

অস্ত্র ও প্রযুক্তি সংগ্রহ

ফিলিপাইন সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা তিন বাহিনী—সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী—একসঙ্গে সমন্বিতভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম এমন উন্নত প্রযুক্তি চাইছে। এর মধ্যে সাইবার কমান্ড ও নিরাপদ যোগাযোগ প্রযুক্তি অগ্রাধিকার পাচ্ছে। একই সঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবারুদের জন্য সংরক্ষণাগার গড়ে তোলার পরিকল্পনাও আছে।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও নতুন চাহিদা

ফিলিপাইন দক্ষিণ কোরিয়া থেকে যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজ কিনছে। এছাড়া ভারত থেকে ব্রাহমোস সুপারসনিক মিসাইলের দ্বিতীয় চালান পেতে যাচ্ছে। আকাশ প্রতিরক্ষা এবং উপকূলীয় প্রতিরক্ষা জোরদারের উদ্যোগও চলছে।

মার্কিন টায়ফুন, হাইমার্স ও এনএমইসিসি সিস্টেম ব্যবহার করে ফিলিপাইন সেনারা হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। নৌবাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল রয় ভিনসেন্ট ত্রিনিদাদ বলেন, “আমাদের হাতে থাকা ব্রাহমোস সিস্টেমের পাশাপাশি এসব মার্কিন অস্ত্র আমাদের প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা অর্জনের বড় সুযোগ দিচ্ছে।”

ড্রোন ও নতুন প্রযুক্তির দিকে নজর

ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিয়ে ফিলিপাইন এখন আনম্যানড সিস্টেমে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড মার্কিন তৈরি মান্টাস ও ডেভিল রে ড্রোন পরীক্ষা করছে। এসব ড্রোন আংশিকভাবে স্পেসএক্সের স্টারলিংক স্যাটেলাইট দ্বারা পরিচালিত।

ফিলিপাইনের নিজস্বভাবে ড্রোন তৈরির উদ্যোগও চলছে, বিশেষ করে পশ্চিম ফিলিপাইন সাগরে নজরদারির জন্য। পাগ-আসা দ্বীপের মতো এলাকাকে ড্রোন মোতায়েনের উপযুক্ত ঘাঁটি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জাপানের সম্ভাব্য সহায়তা

একজন ফিলিপাইন সরকারি কর্মকর্তা জানান, এই ক্ষেত্রে জাপানের অভিজ্ঞতা বিশেষ সহায়ক হতে পারে। টোকিও ইতিমধ্যেই অস্ত্র রপ্তানি নীতিতে শিথিলতা আনছে এবং অফিসিয়াল সিকিউরিটি অ্যাসিস্ট্যান্স (OSA) কাঠামোর অধীনে জাপানি কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা চলছে।


ফিলিপাইন আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিবেশে ভারসাম্য আনতে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতাকে কেন্দ্র করে এগোচ্ছে।

ম্যানিলা সামরিক সহায়তায় জাপানের দিকে ঝুঁকছে

১০:০২:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

চীনের সঙ্গে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে নতুন কৌশল

দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সঙ্গে চলমান উত্তেজনা এবং সীমান্ত বিরোধের কারণে ফিলিপাইন তার সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে। এই লক্ষ্যেই দেশটি এখন জাপানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার পথে হাঁটছে। এর অংশ হিসেবে প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি, যৌথ নিরাপত্তা কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং প্রতিরক্ষা শিল্পে অংশীদারিত্ব জোরদারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

ফিলিপাইন সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল ফ্রান্সেল মার্গারেথ পদিলা জাপান টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমরা জাপানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা চাইছি। রাডার, ড্রোন বা আনম্যানড সিস্টেম এবং জাহাজ নির্মাণে জাপানের অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।”

স্বনির্ভর প্রতিরক্ষা নীতি

গত বছরের অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মারকোস জুনিয়র স্বনির্ভর প্রতিরক্ষা নীতি (Self-Reliant Defense Posture-SRDP) বাস্তবায়নের জন্য আইন স্বাক্ষর করেন। পদিলা জানান, এই নীতি শক্তিশালী করতে জাপানের সঙ্গে কো-ডেভেলপমেন্ট বা লাইসেন্স উৎপাদন ব্যবস্থার মতো প্রকল্প বিবেচনায় রয়েছে। লক্ষ্য হলো নজরদারি, আকাশ প্রতিরক্ষা, সামুদ্রিক সম্পদ এবং নতুন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সক্ষমতা বাড়ানো।

প্রতিরক্ষা ব্যয় ও আধুনিকীকরণ

ফিলিপাইন সরকার ২০২৩ সালে সামরিক উন্নয়ন পরিকল্পনা “রি-হরাইজন ৩” অনুমোদন করেছে। এর আওতায় আগামী এক দশকে ২ ট্রিলিয়ন ফিলিপাইন পেসো (৩৫ বিলিয়ন ডলার) ব্যয় করার পরিকল্পনা আছে। এ ছাড়া ২০২৬ সালের প্রতিরক্ষা বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে ২৯৯.৩ বিলিয়ন পেসো (৫.২ বিলিয়ন ডলার), যা টানা তিন বছর দ্বিগুণ অঙ্কের প্রবৃদ্ধি দেখাচ্ছে।

পদিলা বলেন, “আমরা একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ভঙ্গি গড়ে তুলতে চাই। স্বল্পমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি আধুনিকীকরণের দিকেও এগিয়ে যাচ্ছি।”

জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা

জাপান ইতিমধ্যেই ফিলিপাইনকে নিরাপত্তা সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষণ সহায়তা দিচ্ছে। সম্প্রতি জাপান সেকেন্ডহ্যান্ড যুদ্ধজাহাজ হস্তান্তরের বিষয়ে আলোচনা করছে। বিশেষ করে আবুকুমা-শ্রেণির ডেস্ট্রয়ার এসকর্ট (যা অনেক সময় ফ্রিগেট বলা হয়) ২০২৭ সালে অবসর নেবে, এবং এগুলো হস্তান্তরের বিষয়ে আলোচনা চলছে। এটি হলে জাপানের পক্ষ থেকে বহুদিন পর ব্যবহৃত নৌযান রপ্তানির নজির তৈরি হবে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রও ফিলিপাইনের একমাত্র প্রতিরক্ষা চুক্তিভিত্তিক মিত্র হিসেবে ভূমিকা রাখছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে এনএমইসিসি মিসাইল সিস্টেম, সারফেস ড্রোন, বিশেষ বাহিনীর প্রশিক্ষণসহ যৌথ উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া অস্ত্র উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও লজিস্টিক সহায়তায় অংশীদারিত্ব বাড়ছে।

অস্ত্র ও প্রযুক্তি সংগ্রহ

ফিলিপাইন সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা তিন বাহিনী—সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী—একসঙ্গে সমন্বিতভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম এমন উন্নত প্রযুক্তি চাইছে। এর মধ্যে সাইবার কমান্ড ও নিরাপদ যোগাযোগ প্রযুক্তি অগ্রাধিকার পাচ্ছে। একই সঙ্গে ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবারুদের জন্য সংরক্ষণাগার গড়ে তোলার পরিকল্পনাও আছে।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও নতুন চাহিদা

ফিলিপাইন দক্ষিণ কোরিয়া থেকে যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজ কিনছে। এছাড়া ভারত থেকে ব্রাহমোস সুপারসনিক মিসাইলের দ্বিতীয় চালান পেতে যাচ্ছে। আকাশ প্রতিরক্ষা এবং উপকূলীয় প্রতিরক্ষা জোরদারের উদ্যোগও চলছে।

মার্কিন টায়ফুন, হাইমার্স ও এনএমইসিসি সিস্টেম ব্যবহার করে ফিলিপাইন সেনারা হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। নৌবাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল রয় ভিনসেন্ট ত্রিনিদাদ বলেন, “আমাদের হাতে থাকা ব্রাহমোস সিস্টেমের পাশাপাশি এসব মার্কিন অস্ত্র আমাদের প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা অর্জনের বড় সুযোগ দিচ্ছে।”

ড্রোন ও নতুন প্রযুক্তির দিকে নজর

ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিয়ে ফিলিপাইন এখন আনম্যানড সিস্টেমে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড মার্কিন তৈরি মান্টাস ও ডেভিল রে ড্রোন পরীক্ষা করছে। এসব ড্রোন আংশিকভাবে স্পেসএক্সের স্টারলিংক স্যাটেলাইট দ্বারা পরিচালিত।

ফিলিপাইনের নিজস্বভাবে ড্রোন তৈরির উদ্যোগও চলছে, বিশেষ করে পশ্চিম ফিলিপাইন সাগরে নজরদারির জন্য। পাগ-আসা দ্বীপের মতো এলাকাকে ড্রোন মোতায়েনের উপযুক্ত ঘাঁটি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জাপানের সম্ভাব্য সহায়তা

একজন ফিলিপাইন সরকারি কর্মকর্তা জানান, এই ক্ষেত্রে জাপানের অভিজ্ঞতা বিশেষ সহায়ক হতে পারে। টোকিও ইতিমধ্যেই অস্ত্র রপ্তানি নীতিতে শিথিলতা আনছে এবং অফিসিয়াল সিকিউরিটি অ্যাসিস্ট্যান্স (OSA) কাঠামোর অধীনে জাপানি কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা চলছে।


ফিলিপাইন আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিবেশে ভারসাম্য আনতে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতাকে কেন্দ্র করে এগোচ্ছে।