০৫:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রয়্যাল ব্যালে অ্যান্ড অপেরা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

প্রযুক্তি উৎসবের ঘোষণা

লন্ডনের রয়্যাল ব্যালে অ্যান্ড অপেরা আগামী বছর জুনে একটি বিশেষ প্রযুক্তি উৎসব আয়োজন করতে যাচ্ছে, যার নাম “RBO/Shift।” ৪ থেকে ৭ জুন পর্যন্ত চলবে এই আয়োজন। এতে এআই ও অপেরার সম্পর্ক নিয়ে সিম্পোজিয়াম, প্রযুক্তির প্রদর্শনী, সরাসরি পরিবেশনা এবং শিল্পী ও প্রযোজকদের সঙ্গে আলোচনা থাকবে।

উৎসবের মূল আয়োজক রয়্যাল অপেরার সহযোগী পরিচালক নেতিয়া জোনস মনে করেন, অপেরাকে শুধু অতীতের নিদর্শন হিসেবে দেখা উচিত নয়। বরং এটি সমসাময়িক বড় প্রশ্নগুলোর সঙ্গেও যুক্ত হওয়া প্রয়োজন। তার ভাষায়, এআই-এর দ্রুত এবং প্রায় বিস্ময়কর উত্থান এখন শিল্প জগতের জন্য এক বড় বাস্তবতা।

ঐতিহাসিকভাবে অপেরায় প্রযুক্তির ভূমিকা

রয়্যাল অপেরার পরিচালক অলিভার মিয়ার্স বলেন, অপেরাকে সাধারণত রক্ষণশীল বা ঐতিহ্যনির্ভর মনে করা হলেও, ইতিহাসে এটি সবসময় প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে যুক্ত থেকেছে। তিনি উদাহরণ দেন হ্যান্ডেলের ১৮শ শতাব্দীর জাঁকজমকপূর্ণ মঞ্চায়নের, যেখানে উড়ন্ত ড্রাগন ও জাদুময় দ্বীপের মতো দৃশ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে জীবন্ত করা হয়েছিল। এছাড়া ওয়াগনারের আলো ব্যবহারের উদ্ভাবন এবং আধুনিক অপেরায় ভিডিও ও প্রকৌশলগত ব্যবহারের কথাও তিনি উল্লেখ করেন।

জোনস মনে করিয়ে দেন, ১৭শ শতক থেকেই প্রযুক্তি অপেরার সঙ্গে মিশে আছে। চরিত্রদের মঞ্চে আকাশ থেকে নামানো বা মাটির ভেতর থেকে ওঠানোর ব্যবস্থা, আতশবাজি ও জলধারা ব্যবহার—সবই ছিল প্রযুক্তির অংশ। এমনকি মঞ্চের পটভূমি দ্রুত পরিবর্তনের জন্য ব্যবহৃত দড়ি ও পুলির ব্যবস্থা পরিচালনা করতেন অভিজ্ঞ নাবিকেরা। তবে এসব পরীক্ষামূলক প্রচেষ্টায় অনেক দুর্ঘটনাও ঘটেছে।

প্রযুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিনের শঙ্কা

মিয়ার্সের মতে, নতুন প্রযুক্তি নিয়ে উদ্বেগ নতুন কিছু নয়। ১৯৮০-এর দশকে যখন কম্পিউটার স্যাম্পলিং চালু হয়, তখন আশঙ্কা ছিল যে অর্কেস্ট্রার সঙ্গীতশিল্পীরা রোবট দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবেন। এমনকি রয়্যাল অপেরা হাউসে নতুন আলো ব্যবস্থাপনা চালুর সময়ও অনেক ডিজাইনার দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন।

তবে দর্শকরা এখনো সরাসরি অভিজ্ঞতার জন্যই থিয়েটারে আসেন। মহামারির সময় যখন ভার্চুয়াল মহড়া ও অনলাইন আয়োজন চলছিল, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর দর্শক ও শিল্পীরা দ্রুতই পুরনো ধারায় ফিরে আসেন।

এআই ব্যবহারের সম্ভাবনা ও উদ্বেগ

অপেরার টিকে থাকার জন্য এখনো শিল্পীদের নতুন সৃষ্টিশীলতা ও দীর্ঘ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গায়কদের সরাসরি কণ্ঠ অপরিহার্য। রোবট দিয়ে মেকআপ বা পোশাক পরিবর্তন করানো সম্ভব নয়। তবে অপেরা জগতে এআই ব্যবহার শুরু হয়েছে গবেষণা, আলো, প্রজেকশন ম্যাপিং, সেট পরিবর্তন, ভিজ্যুয়ালস, হলোগ্রাম, এমনকি সামাজিক যোগাযোগে। এর ফলে এসব ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

খ্যাতনামা মেজো-সোপ্রানো কাতিয়া লেদু এআই-এর বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছেন। তিনি ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, এআই ব্যবহার করে ফটোগ্রাফার বা শিল্পীদের কাজ প্রতিস্থাপন করা “ভুল”। এতে শিল্পীদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে, পরিবেশগত ক্ষতি হচ্ছে এবং ভুয়া ভিজ্যুয়াল ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ছে।

তার মতে, এআই শিল্প সৃষ্টি করতে পারে না। কারণ এটি কেবল পূর্বের সৃষ্টির ওপর নির্ভর করে। শিল্পীরা তাদের সৃষ্টিকে বিনা অনুমতিতে ব্যবহার হওয়ার কারণে কাজের সুযোগ হারাচ্ছেন এবং সমাজে শিল্পের মূল্য হ্রাস পাচ্ছে।

এআই-চালিত অপেরার উদাহরণ

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে জার্মানির ড্রেসডেন শহরের সেম্পারওপেরে বিশ্বের প্রথম এআই-চালিত অপেরা “Chasing Waterfalls” মঞ্চস্থ হয়। এতে এআই সরাসরি সুর তৈরি করে পরিবেশন করে, সঙ্গে ছিলেন ছয়জন গায়ক।

নেতিয়া জোনস নিজেও দীর্ঘদিন ধরে প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। তিনি ভিডিও প্রজেকশন, মোশন ট্র্যাকিং, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে কাজ করেছেন। ২০১১ সালে তার উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল “Everlasting Light,” যেখানে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভবনে প্রজেকশন ম্যাপিং ব্যবহার করা হয়।

জোনস মনে করেন, এআই-কে ভয় না পেয়ে এটি শিল্পচর্চার একটি সম্প্রসারণ হিসেবে দেখা উচিত। তার মতে, আতঙ্ক তৈরি করা শিল্পের ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক হবে না। বরং এআই-কে একটি সহযোগী হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করলে শিল্প আরও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারবে।

রয়্যাল ব্যালে অ্যান্ড অপেরা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

১২:০২:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রযুক্তি উৎসবের ঘোষণা

লন্ডনের রয়্যাল ব্যালে অ্যান্ড অপেরা আগামী বছর জুনে একটি বিশেষ প্রযুক্তি উৎসব আয়োজন করতে যাচ্ছে, যার নাম “RBO/Shift।” ৪ থেকে ৭ জুন পর্যন্ত চলবে এই আয়োজন। এতে এআই ও অপেরার সম্পর্ক নিয়ে সিম্পোজিয়াম, প্রযুক্তির প্রদর্শনী, সরাসরি পরিবেশনা এবং শিল্পী ও প্রযোজকদের সঙ্গে আলোচনা থাকবে।

উৎসবের মূল আয়োজক রয়্যাল অপেরার সহযোগী পরিচালক নেতিয়া জোনস মনে করেন, অপেরাকে শুধু অতীতের নিদর্শন হিসেবে দেখা উচিত নয়। বরং এটি সমসাময়িক বড় প্রশ্নগুলোর সঙ্গেও যুক্ত হওয়া প্রয়োজন। তার ভাষায়, এআই-এর দ্রুত এবং প্রায় বিস্ময়কর উত্থান এখন শিল্প জগতের জন্য এক বড় বাস্তবতা।

ঐতিহাসিকভাবে অপেরায় প্রযুক্তির ভূমিকা

রয়্যাল অপেরার পরিচালক অলিভার মিয়ার্স বলেন, অপেরাকে সাধারণত রক্ষণশীল বা ঐতিহ্যনির্ভর মনে করা হলেও, ইতিহাসে এটি সবসময় প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে যুক্ত থেকেছে। তিনি উদাহরণ দেন হ্যান্ডেলের ১৮শ শতাব্দীর জাঁকজমকপূর্ণ মঞ্চায়নের, যেখানে উড়ন্ত ড্রাগন ও জাদুময় দ্বীপের মতো দৃশ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে জীবন্ত করা হয়েছিল। এছাড়া ওয়াগনারের আলো ব্যবহারের উদ্ভাবন এবং আধুনিক অপেরায় ভিডিও ও প্রকৌশলগত ব্যবহারের কথাও তিনি উল্লেখ করেন।

জোনস মনে করিয়ে দেন, ১৭শ শতক থেকেই প্রযুক্তি অপেরার সঙ্গে মিশে আছে। চরিত্রদের মঞ্চে আকাশ থেকে নামানো বা মাটির ভেতর থেকে ওঠানোর ব্যবস্থা, আতশবাজি ও জলধারা ব্যবহার—সবই ছিল প্রযুক্তির অংশ। এমনকি মঞ্চের পটভূমি দ্রুত পরিবর্তনের জন্য ব্যবহৃত দড়ি ও পুলির ব্যবস্থা পরিচালনা করতেন অভিজ্ঞ নাবিকেরা। তবে এসব পরীক্ষামূলক প্রচেষ্টায় অনেক দুর্ঘটনাও ঘটেছে।

প্রযুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিনের শঙ্কা

মিয়ার্সের মতে, নতুন প্রযুক্তি নিয়ে উদ্বেগ নতুন কিছু নয়। ১৯৮০-এর দশকে যখন কম্পিউটার স্যাম্পলিং চালু হয়, তখন আশঙ্কা ছিল যে অর্কেস্ট্রার সঙ্গীতশিল্পীরা রোবট দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবেন। এমনকি রয়্যাল অপেরা হাউসে নতুন আলো ব্যবস্থাপনা চালুর সময়ও অনেক ডিজাইনার দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন।

তবে দর্শকরা এখনো সরাসরি অভিজ্ঞতার জন্যই থিয়েটারে আসেন। মহামারির সময় যখন ভার্চুয়াল মহড়া ও অনলাইন আয়োজন চলছিল, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর দর্শক ও শিল্পীরা দ্রুতই পুরনো ধারায় ফিরে আসেন।

এআই ব্যবহারের সম্ভাবনা ও উদ্বেগ

অপেরার টিকে থাকার জন্য এখনো শিল্পীদের নতুন সৃষ্টিশীলতা ও দীর্ঘ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গায়কদের সরাসরি কণ্ঠ অপরিহার্য। রোবট দিয়ে মেকআপ বা পোশাক পরিবর্তন করানো সম্ভব নয়। তবে অপেরা জগতে এআই ব্যবহার শুরু হয়েছে গবেষণা, আলো, প্রজেকশন ম্যাপিং, সেট পরিবর্তন, ভিজ্যুয়ালস, হলোগ্রাম, এমনকি সামাজিক যোগাযোগে। এর ফলে এসব ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

খ্যাতনামা মেজো-সোপ্রানো কাতিয়া লেদু এআই-এর বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছেন। তিনি ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, এআই ব্যবহার করে ফটোগ্রাফার বা শিল্পীদের কাজ প্রতিস্থাপন করা “ভুল”। এতে শিল্পীদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে, পরিবেশগত ক্ষতি হচ্ছে এবং ভুয়া ভিজ্যুয়াল ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়ছে।

তার মতে, এআই শিল্প সৃষ্টি করতে পারে না। কারণ এটি কেবল পূর্বের সৃষ্টির ওপর নির্ভর করে। শিল্পীরা তাদের সৃষ্টিকে বিনা অনুমতিতে ব্যবহার হওয়ার কারণে কাজের সুযোগ হারাচ্ছেন এবং সমাজে শিল্পের মূল্য হ্রাস পাচ্ছে।

এআই-চালিত অপেরার উদাহরণ

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে জার্মানির ড্রেসডেন শহরের সেম্পারওপেরে বিশ্বের প্রথম এআই-চালিত অপেরা “Chasing Waterfalls” মঞ্চস্থ হয়। এতে এআই সরাসরি সুর তৈরি করে পরিবেশন করে, সঙ্গে ছিলেন ছয়জন গায়ক।

নেতিয়া জোনস নিজেও দীর্ঘদিন ধরে প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। তিনি ভিডিও প্রজেকশন, মোশন ট্র্যাকিং, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে কাজ করেছেন। ২০১১ সালে তার উল্লেখযোগ্য কাজ ছিল “Everlasting Light,” যেখানে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভবনে প্রজেকশন ম্যাপিং ব্যবহার করা হয়।

জোনস মনে করেন, এআই-কে ভয় না পেয়ে এটি শিল্পচর্চার একটি সম্প্রসারণ হিসেবে দেখা উচিত। তার মতে, আতঙ্ক তৈরি করা শিল্পের ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক হবে না। বরং এআই-কে একটি সহযোগী হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করলে শিল্প আরও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারবে।