ঘটনার সারসংক্ষেপ
ন্যাটো ইউরোপের পূর্ব সীমান্তে প্রতিরক্ষা আরও শক্তিশালী করার ঘোষণা দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত এসেছে পোল্যান্ডের আকাশসীমায় প্রবেশ করা রাশিয়ার ড্রোন ভূপাতিত করার দুই দিন পর। এটি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালীন ন্যাটো সদস্য কোনো দেশের প্রথম এমন পদক্ষেপ।
মার্কিন প্রতিক্রিয়া ও ন্যাটোর অবস্থান
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্র এ ঘটনাকে “উদ্বেগজনক” বলে উল্লেখ করেছে এবং ন্যাটোর প্রতিটি ইঞ্চি ভূখণ্ড রক্ষার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, রাশিয়ার ড্রোন অনুপ্রবেশ হয়তো ভুলবশত হয়েছে। তবে পোল্যান্ড সরাসরি ট্রাম্পের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে জানায়, এটি আসলে রাশিয়ার একটি পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ। পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে সংহতি প্রদর্শন করবে।
পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্ররা যৌথ বিবৃতিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের অভিযোগ তোলে। অন্যদিকে রাশিয়া জানায়, তাদের ড্রোনের সীমিত পাল্লা থাকার কারণে পোল্যান্ডে পৌঁছানো “শারীরিকভাবে অসম্ভব”।
ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে একে “বেপরোয়া ও অগ্রহণযোগ্য” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জানান, রাশিয়ার ড্রোন ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর আকাশসীমায় প্রবেশ করা চলবে না।
‘ইস্টার্ন সেনট্রি’ অভিযানের ঘোষণা
ন্যাটোর শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, মার্কিন বিমানবাহিনীর জেনারেল অ্যালেক্সাস গ্রিঙ্কেভিচ জানিয়েছেন, “ইস্টার্ন সেনট্রি” নামের এই নতুন মিশন পুরো পূর্ব ফ্রন্টজুড়ে প্রতিরক্ষা শক্তি জোরদার করবে। এর আওতায় বাল্টিক দেশগুলো থেকে শুরু করে রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া পর্যন্ত সীমান্ত অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
তিনি বলেন, “আমাদের দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং আজকের ঘোষণায় ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্র ও নাগরিকরা আশ্বস্ত হতে পারবেন।”
এই অভিযানে বিমান ও স্থলভিত্তিক সামরিক সম্পদ ব্যবহার করা হবে। ন্যাটো ইতোমধ্যেই পূর্ব ইউরোপে কয়েক হাজার সেনা মোতায়েন রেখেছে।
মিত্র দেশগুলোর অংশগ্রহণ
ন্যাটোর নতুন ঘোষণায় কয়েকটি অতিরিক্ত সামরিক সম্পদের বিষয় জানানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- ডেনমার্কের দুটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ও একটি ফ্রিগেট
- ফ্রান্সের তিনটি রাফাল যুদ্ধবিমান
- জার্মানির চারটি ইউরোফাইটার যুদ্ধবিমান
- স্পেনও আকাশ প্রতিরক্ষায় সহায়তা দেবে
- ব্রিটেন শীঘ্রই তাদের অবদান ঘোষণা করবে
রুটে জানান, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানি ইতোমধ্যেই মিশনে অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আরও কয়েকটি দেশ এতে যোগ দেবে।
ইউরোপীয় উদ্বেগ ও মার্কিন ভূমিকা
ট্রাম্প শুক্রবার বলেন, ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি তার ধৈর্য “দ্রুত ফুরিয়ে আসছে,” তবে তিনি নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেননি। এদিকে জার্মানি পোল্যান্ডের আকাশ প্রতিরক্ষা টহল বাড়িয়েছে এবং রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে।
পোল্যান্ডের নেতারা প্রকাশ্যে ট্রাম্পের বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন, যা প্রায় নজিরবিহীন। এটি ইউরোপের গভীর উদ্বেগের প্রতিফলন, কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট রাশিয়ার বক্তব্যকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন।
প্রতিরক্ষা নিয়ে নতুন প্রশ্ন
এই ঘটনাটি ন্যাটোর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যাপক ড্রোন হামলা যেভাবে নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে। ইউক্রেনও জানায়, রাশিয়ার পারমাণবিক কর্পোরেশন রোসাটমের একটি স্থাপনায় তাদের ড্রোন আক্রমণ করেছে, যদিও ক্ষতি হয়নি।
ইউরোপীয় নেতারা মনে করছেন, পোল্যান্ডের এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে যে, মস্কো শান্তিচুক্তিতে আগ্রহী নয়। এর আগে ট্রাম্প আলাস্কায় পুতিনকে আতিথ্য দিয়েছিলেন এবং তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির দাবি থেকে সরে এসেছিলেন।
কূটনৈতিক তৎপরতা ও ইউক্রেনের অবস্থান
ইউরোপীয় প্রতিনিধিরা এ সপ্তাহে ওয়াশিংটনে ছিলেন, তবে রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা সমন্বয়ের ঘোষণা এখনও হয়নি। রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, শান্তি আলোচনা এখন স্থগিত রয়েছে।
কিয়েভে মার্কিন বিশেষ দূত কিথ কেলগ এবং ইউরোপীয় কয়েকটি দেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টারা বৈঠক করেছেন। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে অনেক কিছু ইতোমধ্যে লিখিত আকারে নির্ধারিত হয়েছে। বিদেশি সেনাদের উপস্থিতি ইউক্রেনের জন্য রাজনৈতিক সমর্থনের প্রতীক হবে।
এদিকে রাশিয়া ও বেলারুশ দীর্ঘদিনের পরিকল্পিত যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করেছে, যা বাল্টিক ও বারেন্টস সাগরেও বিস্তৃত। পেসকভ এ নিয়ে পশ্চিমাদের উদ্বেগকে “অতিরিক্ত আবেগতাড়িত প্রতিক্রিয়া” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।