দেবী সিংহ নিজের অত্যন্ত বিপদ উপস্থিত দেখিয়া, আপনার চির প্রথানুযায়ী অর্থপ্রলোভনে প্যাটারসনকে বশীভূত করিবার প্রয়াস পাইলেন। কিন্তু প্যাটারসনের। প্রকৃতি সেরূপ ছিল না; সামান্ত অর্থের প্রলোভন তাঁহাকে ন্যায়পথ হইতে বিচলিত করিতে পারিল না। তৎকালে কোম্পানীর অন্তাক্ত যাবতীয় কর্মচারী অর্থের দাস ছিলেন। গবর্ণর জেনারেল হইতে সামান্য কর্মচারী পর্য্যন্ত সকলেই সেই প্রলোভনে মুগ্ধ হইয়া পড়িতেন। প্যাটারসনের প্রকৃতি সম্পূর্ণ বিভিন্ন হওয়ায়, সেই সকল লোকদিগের কৌশলে অবশেষে তাঁহাকে অপদস্থ হইতে হইয়াছিল!
তিনি জানিতেন না যে, কোম্পানীর রাজত্ব হইতে ন্যায়পরতা বহুদূরে পলায়ন করিয়াছে! প্যাটারসন্ কাহারও অনুরোধে বিচলিত না হইয়া, দৃঢ়ান্তঃকরণে আপনার কর্তব্যকাৰ্য্য করিতে লাগিলেন। তিনি জানিতেন, ন্যায়ই জগতে সকল রাজত্বের ভিত্তি এবং সকল কার্য্যের মূল। সুতরাং ন্যায়পথ অবলম্বন করিয়া, তিনি কলিকাতার কমিটিতে নিজ অনুসন্ধানের ফল ক্রমান্বয়ে লিখিয়া পাঠাইলেন। আমরা তাঁহার একখানি পত্রের বিষয় প্রকাশ করিতেছি। “আমার প্রথম দুই পত্রে প্রজাদিগের উপর কঠোর অত্যাচার এবং তাহারই জন্য যে তাহারা বিদ্রোহী হয়, সে কথা সাধারণভাবে বিবৃত করিয়াছি, তাহার পুনরুল্লেখ এক্ষণে নিষ্প্রয়োজন।
প্রতিদিনের অনুসন্ধান আমার মন্তব্য, আরও দৃঢ়, করিতেছে। তাহারা যদি বিদ্রোহী না হইত, তাহা হইলে, আমি আশ্চর্য্য জ্ঞান করিতাম। প্রজাদিগের নিকট হইতে রাজস্ব আদায় করা হয় -নাই, কিন্তু তাহাদের উপর রীতিমত দহাতা এবং সঙ্গে সঙ্গে কঠোর শারীরিক যন্ত্রণা ও ‘সর্ব্বপ্রকার অপমানে জর্জরিত করা হইয়াছে। ইহা যে কেবল কতিপয় প্রজার উপর হইয়াছিল এমন নহে, সমস্ত দেশেই এইরূপ ভাবেই অত্যাচার বিস্তৃত হয়। মনুষ্য চিরকাল পরাধীন থাকি-লেও যখন অত্যাচার সীমা অতিক্রম করিয়া উঠে, তখন তাহার প্রতিবিধানের জন্য তাহাকে অগত্যা উত্থিত হইতে হয়।
আপনারা এই সমস্ত প্রজাদিগের অবস্থা বিবেচনা করিয়া দেখিবেন যে, যখন অসম্ভব কর আদায়ের জন্য তাহাদের সমস্ত সম্পত্তি লুণ্ঠন করিয়াও অর্দ্ধাংশের পরিশোধ হইল না, তাহার উপর আবার তাহাদিগকে কঠোর শারীরিক যন্ত্রণা ভোগ করিতে হইল, ইহার উপর যখন তাহাদের পরিবারের পবিত্রতানাশ ও জাতিনাশের অত্যাচার হইতে লাগিল, এরূপ ক্ষেত্রে তাহাদের কি করা উচিত? আপনারা বিশেষরূপে অবগত আছেন যে, এতদ্দেশীয়েরা আপনাদিগের স্ত্রী ও জাতির উপর যেরূপ অনুরক্ত, তাহাতে তাহারা এরূপ অবস্থায় কতদূর সহ্য করিতে সমর্থ হয়।”