কিশোরদের অনলাইনে নিরাপদ রাখা—এই ডাকটায় সবাই একমত হতে পারে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় ১৬ বছরের নিচের শিশুদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার যে পরিকল্পনা নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে, সেটি দেখাচ্ছে—এটা এত সহজ নয়।
সর্বশেষ বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে অ্যালফাবেটের ইউটিউব। সরকার এ গ্রীষ্মে জানায়, ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মটিকে যে ছাড় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আগে ছিল, তা তারা ফিরিয়ে নিচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত এত প্রতিক্রিয়া টানার কারণ, একটি প্রজন্মের পপ সংস্কৃতির সঙ্গে ইউটিউব এতটাই জড়িয়ে গেছে যে তার গুরুত্ব কমিয়ে বলা কঠিন।
অস্ট্রেলিয়ার অনলাইন নিয়ন্ত্রক বলছে, দেশের কিশোরদের মধ্যে ইউটিউবই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সামাজিক প্ল্যাটফর্ম (এবং এটি অনলাইনে ক্ষতিকর কনটেন্ট—নারীবিদ্বেষ থেকে সহিংস ভিডিও—ছড়ানোর বড় উৎসও বটে)। কিন্তু একই সঙ্গে এটি বহু তরুণ নির্মাতার, বিশেষ করে প্রান্তিক গোষ্ঠীর মানুষের, কমিউনিটি খুঁজে পাওয়া ও বহু-মিলিয়ন ডলারের ক্যারিয়ার শুরু করার সোপানও। গ্র্যামি-মনোনীত গায়ক ট্রয় সিভান কিশোর বয়সে পার্থ শহরে বসে ইউটিউবে কাভার ও ভ্লগ পোস্ট করেই জনপ্রিয় হন—এখানেই ২০১৩ সালে তিনি প্রকাশ্যে সমকামী পরিচয়ও দেন।
সব সামাজিক প্ল্যাটফর্মেই ঝুঁকি আছে—বিশ্বজুড়ে নীতিনির্ধারকেরা সেগুলো উপেক্ষা করতে পারেন না। কিন্তু তরুণদের অনলাইন জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়ায় সেই ঝুঁকি দূর হয় না। আসলে, অস্ট্রেলিয়ার বয়স-নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিতর্কটা যে কঠিন নীতি-কার্য—টেক কোম্পানিগুলোকে কিশোরদের নিরাপদ রাখার দায়ে বাধ্য করা—সেখান থেকে মনোযোগ সরিয়ে দিচ্ছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, কড়া বয়সসীমা অনলাইন ক্ষতি ঠেকাতে খুব কার্যকর নয়। এতে ব্যক্তিভেদে পরিণতির পার্থক্য ও প্ল্যাটফর্মগুলোর ইতিবাচক ব্যবহার—এসব উপেক্ষিত থাকে। এতে হয়তো কিছু ১৫ বছরের কিশোরকে বিষাক্ত অ্যালগোরিদম থেকে সাময়িক দূরে রাখা যায়, কিন্তু যেসব কারণ থেকে এসব সমস্যা তৈরি হয় তা অমীমাংসিত থেকে যায়—১৬ হলেই তারা আবার একই ঝুঁকিতে পড়ে।
প্রযুক্তিতে পারদর্শী তরুণেরা নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি দেওয়ার পথ খুঁজে নেয়—এটাই বাস্তবতা। নরওয়েতে সামাজিক মাধ্যমে যোগ দেওয়ার ন্যূনতম বয়সসীমা ১৩; তবু দেখা গেছে ১১ বছরের ৭২ শতাংশ শিশু লগইন করছে। যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক বয়স-যাচাইকরণ আইনও দেখিয়েছে নিয়ম ভাঙার সৃজনশীল কৌশল—যেমন ভিডিও-গেম অ্যাভাটার দিয়ে ফেসিয়াল-রিকগনিশন এড়িয়ে যাওয়া। বাস্তববাদী হলে মানতে হয়—এই বয়সসীমা কিশোরদের মিথ্যা বলতে বা অ্যাকাউন্ট ছাড়াই ইউটিউব ব্যবহার করতে উৎসাহিত করবে—তাতে ঝুঁকি কীভাবে কমবে?
মার্কিন তথ্য বলছে, সব টিভি স্ট্রিমিং সেবার মধ্যে ইউটিউবই সবচেয়ে বেশি দেখা হয়—ডিজনি, নেটফ্লিক্স, এনবিসিইউনিভার্সালের মতো জায়ান্টদেরও ছাড়িয়ে। সবার অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়াই তরুণ দর্শকের কাছে ইউটিউবের শক্তি—কিন্তু এটিই তার দুর্বলতাও। নেটফ্লিক্স টানা দেখে কেউ উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়েছে—এমন গল্প শোনা অনেক কম।
বাস্তবতা আরও সূক্ষ্ম। ডার্টমাউথ কলেজ-নেতৃত্বাধীন গবেষকেরা ২০২২ সালে দেখান—যারা আগে থেকে ক্ষতিকর কনটেন্ট খুঁজছিল না, তাদের কাছে ইউটিউবের অ্যালগোরিদমের মাধ্যমে উগ্র ভিডিও পৌঁছানো অত্যন্ত বিরল। এতে প্ল্যাটফর্মে বিদ্বেষী বা ষড়যন্ত্র-তত্ত্বভিত্তিক ভিডিও নেই—এ কথা নয়; বরং বিড়ালের ভিডিও বা মেকআপ টিউটোরিয়াল দেখতে গিয়ে হঠাৎ সেগুলোর সামনে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।

এ গবেষণাটি এসেছে ২০২০ সালে চাপের মুখে ইউটিউব তার রিকমেন্ডেশন সিস্টেমে বড় পরিবর্তন আনার পর। একইভাবে, ২০১৫ সালে শিশুদের জন্য নিরাপদ অভিজ্ঞতা দিতে ইউটিউব কিডস চালু হয়—স্বীকার করে যে শিশুরা যাই হোক লগইন করবে এবং সেখানে বিপুল পরিমাণ ইতিবাচক ও শিক্ষামূলক কনটেন্টও আছে। অর্থাৎ কোম্পানিগুলোকে আচরণ বদলাতে বাধ্য করা সম্ভব।
টিনেজারদের সামাজিক মাধ্যম নিষেধাজ্ঞায় ইউটিউবকে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে অবস্থান নিয়ে এক অস্ট্রেলীয় আইনপ্রণেতা সাক্ষাৎকারে বললেন—“লক্ষ্য হলো শিশুদের সুরক্ষা, সবচেয়ে দুর্বলদের সুরক্ষা, এবং অভিভাবকদের সহায়তা করা।” কথাটি ক্লান্ত অভিভাবকদের ভালোই লাগবে। কিন্তু একই ক্লিপে তিনি স্বীকার করলেন—হাইস্কুলে উন্নত গণিত শেখার জন্য তিনিও ইউটিউব ব্যবহার করেছিলেন।
বিশ্বজুড়ে নীতিনির্ধারকদের উচিত প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর চাপ বাড়ানো—তাদের সাইটে লুকিয়ে থাকা ঝুঁকিগুলো নিয়ে পদক্ষেপ নিতে। শুরু করা যেতে পারে অ্যালগোরিদম কীভাবে কাজ করে সে বিষয়ে বাইরের গবেষকদের কাছে আরও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে। এরপর অভিভাবক, শিক্ষক, গবেষক ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডার মিলে লক্ষ্যভিত্তিক সমাধান সুপারিশ করতে পারবেন—যেগুলো তরুণদের তথ্য পাওয়ার ও মত প্রকাশের অধিকার কেবল কেটে দেয় না। আসক্তিমূলক নকশার মতো বাস্তব উদ্বেগ আছে—সেখানে অবশ্যই বিধিনিষেধ পার্থক্য আনতে পারে।
একই সঙ্গে টেক কোম্পানিগুলোর ওপর চাপ বজায় রাখতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার নিষেধাজ্ঞা-সংবাদ আসার পর মেটা ইনস্টাগ্রামে কিশোরদের জন্য নতুন প্রাইভেসি সেটিং চালু করেছে এবং ইউটিউবও যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ বছরের নিচের ব্যবহারকারীদের জন্য সুরক্ষা জোরদার করেছে। ইন্টারনেটকে শিশুদের জন্য নিরাপদ করতে বিপুল সম্পদ ব্যবহার করার দায়িত্ব এসব টেক প্রতিষ্ঠানেরই।
অভিভাবক ও পরবর্তী প্রজন্ম শুধু ‘ব্যান্ড-এইড’ ধরনের সমাধানের চেয়ে বেশি কিছু প্রাপ্য। ধরে নেওয়া যে কিশোররা ইউটিউব ব্যবহার করবে না—এটা বলা সহজ; কিন্তু শাসন করা, নীতি বানানো—সেটাই কঠিন।
ক্যাথরিন থরবেকে ব্লুমবার্গ ওপিনিয়নের কলামনিস্ট, তিনি এশিয়ার প্রযুক্তিখাত নিয়ে লেখেন।
ক্যাথরিন থরবেকে | 


















