নরহরিদাসের বংশ– নরহরির তিন পুত্র। তাহারা কনিষ্ঠ পুত্র বগুড়ায় বাস করেন। এই নরহরি দাসের বংশধরেরা ময়দান দিঘি, চৌপাকিয়া, পাবনা, মালঞ্চি, কেচুয়াডাঙা, মেহেরপুর প্রভৃতি স্থানে বসতি বিস্তার করেন। ইহাদের অনেকেই সুশিক্ষিত।
ভূগুনন্দীর বংশ-ভূগুনন্দীর কালু ও মাধব দুই পুত্র। ইহারা পাবনা জেলার অন্তর্গত পোতাজিয়ার নিকট অষ্টমনিষা গ্রামে বাস করেন। কালু ও মাধবের বংশধরেরা পোতাজিয়া, অষ্টমনিষা প্রভৃতি স্থানে বাস করিয়া বিখ্যাত হয়। এই বংশের গোবিন্দ রায় নামক একজন পোতাজিয়া গ্রামে একটি বৃহৎ নবরত্ন নির্মাণ করেন। সেই জন্য ইহার বংশধরেরা “নবরত্নপাড়ার রায়” নামে প্রসিদ্ধ। এই বংশীয় রূপরাম রায় নামে একজন পারসি ও আরবি ভাষায় বিশেষ পণ্ডিত ছিলেন। নবাব সায়েস্তা খাঁর অধীনে কোন প্রধান পদে রূপরাম ছিলেন। পিতার সহিত মনান্তর হওয়ায় ইনি পোতাজিয়া ত্যাগ করিয়া রাজসাহীর অন্তর্গত ডিহি কাশীপুরের মধ্যে বাসভবন নির্দেশ করেন। কাশীপুর প্রভৃতি ২৭ খান গ্রাম রূপরামের সম্পত্তি ছিল।
মুরারি চাকীর বংশ-মুরারি চাকীর দুই স্ত্রী। প্রথম পক্ষের বণিতার সন্তানেরা অষ্ট মণিষা, মেদবাড়ি, কেচুয়াডাঙা প্রভৃতি গ্রামে এবং শেষ পক্ষের বণিতার সন্তানেরা দুর্লভপুর, ঢাকঢোর, দিলপসার প্রভৃতি গ্রামে বাস করেন।
জটাধর নাগের বংশ-জটাধর নাগের সন্তানেরা মালঞ্চি, গাঁড়াদহ, সরগ্রাম প্রভৃতি স্থানে বাস করেন। জটাধর নাগের সন্তানগণ মধ্যে সরগ্রামের নাগবংশই শ্রেষ্ঠ। ইহারা সোনাবাজু পরগণার বিখ্যাত জমিদার ছিল। এই বংশের রূপরাম নাগ সমাজে বিশেষ সম্মানিত হন। জটাধর নাগের বংশের এক ব্যক্তি রাজসাহী জেলার অন্তর্গত ডাঙাপাড়া গ্রামে বাস করেন।
ডাঙাপাড়াদিগর একটি বিস্তৃত জমিদারি লাভ করিয়া, ইনি বিশেষ বিখ্যাত হন। ইহার বংশধরেরা সমাজে বিশেষ পরিচিত এবং গৌরবান্বিত। এই বংশে অনেকে সুশিক্ষিত। ইহাদের ডাঙাপাড়াদিগরের জমিদারি এখনও আছে। ইহারা ডাঙাপাড়ার চৌধুরি বলিয়া পরিচিত। ইহারা চৌদ্দ চৌধুরির এক চৌধুরি বলিয়া প্রসিদ্ধ।
গশবাড়ির নাগবংশও বিশেষ মাননীয়।
তাড়াষের জমিদার বংশ-তাড়াষ বিল চলনের নিকটবর্তী গ্রাম। পূর্বে এই গ্রাম রাজসাহী প্রদেশের অন্তর্গত ছিল। এইক্ষণ এই গ্রাম পাবনা জেলার অন্তর্গত। চড়িয়ার দেব বংশোদ্ভব বলরাম নামক এক ব্যক্তি বারেন্দ্র কায়স্থ সমাজে বিশেষ পরিচিত ছিলেন। এই ব্যক্তি নাটোর রাজ সংসারে প্রধান কার্যকারক ছিলেন। এই সময় কুসুম্বি পরগণা প্রভৃতি বিস্তর জমিদারি লাভ করেন। “ধনেনকুল” এই বাক্যের সার্থকতা লাভ করেন। সুতরাং সমাজে বিশেষ পরিচিত হইলেন। রাজসাহী ও পাবনা জেলায় বিস্তৃত জমিদারি লাভ করিয়া তাড়াষ গ্রামে বাস নির্দেশ করেন। বর্তমান তাড়াষের প্রধান জমিদারগণ এই বলরাম রায়ের বংশ সম্ভূত।
রঙ্গুর জেলার অন্তর্গত বর্ধন কুঠির জমিদার দেব বংশীয়। এই বংশে ভগবান নামক এক ব্যক্তি মানসিংহের সময় রাজা উপাধি প্রাপ্ত হন। ঐ জেলার অন্তর্গত কাকিনার জমিদারও কুলীন নহে। কিন্তু বিস্তৃত জমিদারি লাভ করিয়া, সমাজে এ বংশ প্রসিদ্ধ হইয়াছিল।এই বারেন্দ্র শ্রেণি কায়স্থগণের আচার ব্যবহার, সামাজিক রীতিনীতি বঙ্গজ ও রাঢ়ীয় শ্রেণি কায়স্থগণের সঙ্গে কোন অংশ মিল নাই। রাজসাহীতে ২/৪ ঘর বঙ্গজ কায়স্থের বাস; অবশিষ্ট কায়স্থ সমুদয় বারেন্দ্র শ্রেণি। এই রাজসাহীতে আচার ভ্রষ্ট কায়স্থও কম নহে। ইহারা বারেন্দ্র শ্রেণি বলিয়া পরিচয় দিয়া থাকে। কিন্তু বারেন্দ্র শ্রেণি সদাচারী সদ্বংশজাত কায়স্থগণের সহিত ইহারা আহার ব্যবহার করণকারণ কিছুই করিতে পারে না। ইহারা প্রায়ই অশিক্ষিত। রাজসাহীতে সর্বসমেত বারেন্দ্র কায়স্থ ১০০০ ঘরের কম হইবে না। ডাঙাপাড়া, মাঝগ্রাম, বারিয়াহাটি, ঢাকঢোর, ছাতারপাড়া, করচমাড়িয়া, মুরাদপুর প্রভৃতি স্থানে সদাচারী সদ্বংশজাত ধনী বারেন্দ্র কায়স্থের বাস। ইহাদের অনেকেই সুশিক্ষিত।