নিগাতার সাকে ঐতিহ্য
জাপানের তুষারঢাকা উপকূলীয় প্রিফেকচার নিগাতা শত শত বছরের পুরনো ব্রুয়ারি সংস্কৃতির জন্য প্রসিদ্ধ। এখানকার উৎকৃষ্ট মানের সাকে সারা জাপানে সমাদৃত। সাকে শুধু একটি পানীয় নয়, এটি নিগাতার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভ্রমণকারীরা এখানে এসে স্টেশনেই সাকে স্বাদ নিতে পারেন, বিশেষ সাকে ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারেন এবং আধুনিক সাকে শিল্পের উদ্ভাবকদের সঙ্গেও পরিচিত হওয়ার সুযোগ পান।
স্টেশনের ভেতর সাকে স্বর্গ
এচিগো ইউজাওয়া স্টেশনে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে দোকান আর যাত্রীদের ভিড়। তবে বিশেষভাবে দৃষ্টি কেড়ে নেয় ঝলমলে সাকে বোতলের প্রদর্শনী। সেখানে দেখা যায় হাস্যোজ্জ্বল মানবাকৃতির এক পুতুল, মাথার ওপর বড় একটি বোতল উঁচিয়ে ধরেছে। সেখান থেকেই শুরু হয় যাত্রার প্রথম অভিজ্ঞতা।
পনশুকান: সাকে জাদুঘর ও স্বয়ংক্রিয় বার
পুতুলটির নির্দেশ অনুসরণ করলে পৌঁছে যাওয়া যায় পনশুকান-এ। এটি একাধারে সাকে জাদুঘর ও দোকান। এখানে ১০০-রও বেশি আঞ্চলিক সাকে প্রজাতির স্বাদ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। দর্শনার্থীরা টোকেন কিনে ছোট সেরামিক কাপে মেশিন থেকে নিজেরাই সাকে নিতে পারেন। দেয়ালজুড়ে সাজানো এই মেশিনগুলো দেখতে খেলনার আর্কেডের মতো, তবে এখানে প্রতিটি খেলাতেই পুরস্কার নিশ্চিত—সাকে।
ইতিহাস আর উদ্ভাবনের সংযোগ
নিগাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর রিওজি ইতো, যিনি সাকে সংস্কৃতির অনুরাগী, এই যাত্রায় সঙ্গ দেন। তিনি একটি মেশিনের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “এটি নিগাতার প্রাচীনতম ব্রুয়ারি ইয়োশিনাগাওয়া, যার সূচনা হয়েছিল ১৫৪৮ সালে।” বোতাম চাপলেই ঠান্ডা, স্বচ্ছ সাকে গ্লাসে ভরে ওঠে। এই সহজলভ্যতাকে তিনি রসিকতায় বলেন, সাকে-প্রেমীদের জন্য এটি একধরনের বিপজ্জনক সুবিধা।
ট্রেনের আগে টোস্ট
স্টেশনের ভেতর পুরনো সাকে ব্যারেলের সামনে গ্লাস তুলতেই ভেসে আসে ঐতিহ্যবাহী শব্দ—“কানপাই” (চিয়ার্স)। মুহূর্তেই ভুলে যাওয়া যায় যে এই আনন্দঘন আসর আসলে একটি ব্যস্ত রেলস্টেশনের ভেতরে বসানো।
এই অভিজ্ঞতা স্পষ্ট করে যে নিগাতায় সাকে শুধু পানীয় নয়, বরং এটি একটি জীবন্ত ঐতিহ্য—যা ট্রেনযাত্রার মতোই আনন্দময় ও স্মরণীয় অভিজ্ঞতা এনে দেয়।