১২:২৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫
অসম্ভবকে সম্ভব মনে করা অভিনেত্রী মিনি ড্রাইভার, পঞ্চান্নেও ব্যস্ত ও আত্মবিশ্বাসী জীবন যে সিনেমাটি দেখতে আমি ভয় পেয়েছিলাম অস্ট্রেলিয়ার ক্ষত সারাতে লড়াই: বন্ডি বিচ হত্যাযজ্ঞের পর ঐক্য আর বিভাজনের সন্ধিক্ষণ ঢাকায় উদীচী কার্যালয়ে হামলার পর অগ্নিকাণ্ড প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের তীব্র নিন্দা, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি প্রথম আলোর কারওয়ান বাজার কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় বিচার দাবি নিক্কেই এশিয়া প্রতিবেদন: বাংলাদেশ –ভারত সম্পর্কের অবনতি জামায়াতের আহ্বান সংযম ও ঐক্যের পথে থাকার চীনের স্যাটেলাইট ‘সুপার ফ্যাক্টরি’: স্টারলিংকের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে বড় পদক্ষেপ চীনের ড্রোন ঝাঁকের সক্ষমতায় বড় অগ্রগতি

আফগান বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করল তালেবান

নতুন নির্দেশনা ও নিষেধাজ্ঞা

আফগানিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নারীদের লেখা বই পাঠদান সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে তালেবান সরকার। একইসঙ্গে মানবাধিকার ও যৌন হয়রানি বিষয়ে পাঠদানও বন্ধ করা হয়েছে।

মোট ৬৮০টি বইয়ের মধ্যে প্রায় ১৪০টি বই নারী লেখকদের রচিত। এসব বইকে তালেবান “শরিয়তবিরোধী” ও “তালেবান নীতির পরিপন্থী” বলে আখ্যা দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বিজ্ঞানভিত্তিক বই “সেফটি ইন দ্য কেমিক্যাল ল্যাবরেটরি”-ও তালিকায় যুক্ত হয়েছে।

১৮টি বিষয় পড়ানো বন্ধ

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জানানো হয়েছে যে তারা ১৮টি বিষয় আর পড়াতে পারবে না। তালেবানের এক কর্মকর্তা বলেন, এসব বিষয় শরিয়ার নীতি ও সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। নিষিদ্ধ করা বিষয়গুলোর মধ্যে ছয়টি সরাসরি নারীদের বিষয়ক, যেমন— জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, দ্য রোল অব উইমেন ইন কমিউনিকেশন, ও উইমেনস সোসিওলজি।

নারী ও শিক্ষার ওপর প্রভাব

তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে ধাপে ধাপে নারীদের শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্র থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ষষ্ঠ শ্রেণির পর থেকেই মেয়েদের শিক্ষালাভ নিষিদ্ধ। ২০২৪ সালের শেষ দিকে ধাত্রীবিদ্যা কোর্সও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন বিশ্ববিদ্যালয়েও নারীদের লেখা বই ও নারীদের বিষয়ে অধ্যয়ন নিষিদ্ধ হওয়ায় উচ্চশিক্ষায় বড় ধাক্কা এসেছে।

বই পর্যালোচনা কমিটির সিদ্ধান্ত

বিবিসি আফগানকে কমিটির এক সদস্য নিশ্চিত করেছেন, “নারীদের লেখা সব বই পড়ানো নিষিদ্ধ।”
প্রাক্তন উপ-আইনমন্ত্রী জাকিয়া আদেলি, যার লেখা বইও নিষিদ্ধ তালিকায় রয়েছে, বলেন: “তালেবান গত চার বছরে যা করছে, তাতে পাঠ্যক্রমে এ ধরনের পরিবর্তন আসবে সেটাই স্বাভাবিক ছিল। যখন নারীদেরই পড়াশোনার অধিকার নেই, তখন তাদের চিন্তা, মতামত ও লেখাও দমন করা হবে।”

ইরানি বইয়ের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ

শুধু নারীদের লেখা বই নয়, ইরানি লেখক বা প্রকাশকের বইতেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তালেবান সরকারের দাবি, এর উদ্দেশ্য হলো আফগান পাঠ্যক্রমে “ইরানি প্রভাব ঠেকানো।”

মোট ৫০ পৃষ্ঠার তালিকায় ৬৭৯টি বইয়ের নাম আছে, যার মধ্যে ৩১০টি বই ইরানি লেখক বা প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত। আফগানিস্তান ও ইরানের সম্পর্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তেজনাপূর্ণ; বিশেষত পানির অধিকার নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং আফগান শরণার্থীদের ফেরত পাঠানো নিয়ে।

উচ্চশিক্ষায় শূন্যতা

একাধিক প্রভাষক আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে ইরানি বই নিষিদ্ধ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হবে। একজন অধ্যাপক জানালেন: “আফগান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে বৈশ্বিক একাডেমিক অঙ্গনের প্রধান সংযোগ হলো ইরানি লেখক ও অনুবাদকদের বই। এগুলো সরিয়ে দিলে উচ্চশিক্ষায় বিশাল ফাঁক তৈরি হবে।”

কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, এ অবস্থায় তাদেরকে নিজেরাই পাঠ্যবইয়ের অধ্যায় তৈরি করতে হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এসব লেখা বৈশ্বিক মান বজায় রাখতে পারবে কি না।

সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট

এই নতুন নির্দেশনা আগস্টের শেষ দিকে জারি করা হয়। একই সময়ে তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা অন্তত ১০টি প্রদেশে ফাইবার-অপটিক ইন্টারনেট নিষিদ্ধ করেন, “অসচ্চরিত্র রোধের” নামে।

জনপ্রিয় সংবাদ

অসম্ভবকে সম্ভব মনে করা অভিনেত্রী মিনি ড্রাইভার, পঞ্চান্নেও ব্যস্ত ও আত্মবিশ্বাসী জীবন

আফগান বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করল তালেবান

০৪:৫৪:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নতুন নির্দেশনা ও নিষেধাজ্ঞা

আফগানিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নারীদের লেখা বই পাঠদান সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে তালেবান সরকার। একইসঙ্গে মানবাধিকার ও যৌন হয়রানি বিষয়ে পাঠদানও বন্ধ করা হয়েছে।

মোট ৬৮০টি বইয়ের মধ্যে প্রায় ১৪০টি বই নারী লেখকদের রচিত। এসব বইকে তালেবান “শরিয়তবিরোধী” ও “তালেবান নীতির পরিপন্থী” বলে আখ্যা দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বিজ্ঞানভিত্তিক বই “সেফটি ইন দ্য কেমিক্যাল ল্যাবরেটরি”-ও তালিকায় যুক্ত হয়েছে।

১৮টি বিষয় পড়ানো বন্ধ

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জানানো হয়েছে যে তারা ১৮টি বিষয় আর পড়াতে পারবে না। তালেবানের এক কর্মকর্তা বলেন, এসব বিষয় শরিয়ার নীতি ও সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। নিষিদ্ধ করা বিষয়গুলোর মধ্যে ছয়টি সরাসরি নারীদের বিষয়ক, যেমন— জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, দ্য রোল অব উইমেন ইন কমিউনিকেশন, ও উইমেনস সোসিওলজি।

নারী ও শিক্ষার ওপর প্রভাব

তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে ধাপে ধাপে নারীদের শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্র থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ষষ্ঠ শ্রেণির পর থেকেই মেয়েদের শিক্ষালাভ নিষিদ্ধ। ২০২৪ সালের শেষ দিকে ধাত্রীবিদ্যা কোর্সও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন বিশ্ববিদ্যালয়েও নারীদের লেখা বই ও নারীদের বিষয়ে অধ্যয়ন নিষিদ্ধ হওয়ায় উচ্চশিক্ষায় বড় ধাক্কা এসেছে।

বই পর্যালোচনা কমিটির সিদ্ধান্ত

বিবিসি আফগানকে কমিটির এক সদস্য নিশ্চিত করেছেন, “নারীদের লেখা সব বই পড়ানো নিষিদ্ধ।”
প্রাক্তন উপ-আইনমন্ত্রী জাকিয়া আদেলি, যার লেখা বইও নিষিদ্ধ তালিকায় রয়েছে, বলেন: “তালেবান গত চার বছরে যা করছে, তাতে পাঠ্যক্রমে এ ধরনের পরিবর্তন আসবে সেটাই স্বাভাবিক ছিল। যখন নারীদেরই পড়াশোনার অধিকার নেই, তখন তাদের চিন্তা, মতামত ও লেখাও দমন করা হবে।”

ইরানি বইয়ের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ

শুধু নারীদের লেখা বই নয়, ইরানি লেখক বা প্রকাশকের বইতেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তালেবান সরকারের দাবি, এর উদ্দেশ্য হলো আফগান পাঠ্যক্রমে “ইরানি প্রভাব ঠেকানো।”

মোট ৫০ পৃষ্ঠার তালিকায় ৬৭৯টি বইয়ের নাম আছে, যার মধ্যে ৩১০টি বই ইরানি লেখক বা প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত। আফগানিস্তান ও ইরানের সম্পর্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তেজনাপূর্ণ; বিশেষত পানির অধিকার নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং আফগান শরণার্থীদের ফেরত পাঠানো নিয়ে।

উচ্চশিক্ষায় শূন্যতা

একাধিক প্রভাষক আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে ইরানি বই নিষিদ্ধ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হবে। একজন অধ্যাপক জানালেন: “আফগান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে বৈশ্বিক একাডেমিক অঙ্গনের প্রধান সংযোগ হলো ইরানি লেখক ও অনুবাদকদের বই। এগুলো সরিয়ে দিলে উচ্চশিক্ষায় বিশাল ফাঁক তৈরি হবে।”

কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, এ অবস্থায় তাদেরকে নিজেরাই পাঠ্যবইয়ের অধ্যায় তৈরি করতে হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এসব লেখা বৈশ্বিক মান বজায় রাখতে পারবে কি না।

সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট

এই নতুন নির্দেশনা আগস্টের শেষ দিকে জারি করা হয়। একই সময়ে তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা অন্তত ১০টি প্রদেশে ফাইবার-অপটিক ইন্টারনেট নিষিদ্ধ করেন, “অসচ্চরিত্র রোধের” নামে।