০৩:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন: স্বীকৃতি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পথকে আরও কাছে এনেছে

রামাল্লায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য

রামাল্লায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভার্সেন আগাবেকিয়ান শাহিন বলেন, যেসব দেশ এ সপ্তাহে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তারা এক অপ্রতিরোধ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত দুই-রাষ্ট্র সমাধানকে বাঁচিয়ে রাখছে এবং ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসছে।

ব্রিটেন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া রোববার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। আরও কিছু দেশ যুক্ত হওয়ায় দুই-রাষ্ট্র সমাধান পুনর্জীবিত করার চেষ্টা জোরদার হয়েছে। তবে এ পদক্ষেপকে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র তীব্র সমালোচনা করেছে।

শাহিন বলেন, “এখনই সময়। আগামীকাল একটি ঐতিহাসিক দিন, যার ওপর ভিত্তি করে আমাদের এগোতে হবে। এটি শেষ নয়, বরং সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার পথে এগোনোর ধাপ।”

তিনি আরও বলেন, “এটি হয়তো যুদ্ধের অবসান ঘটাবে না, তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি, যেটির ওপর আমাদের আরও নির্মাণ করতে হবে।”


ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েল এ স্বীকৃতিকে অগ্রাহ্য করে বলেছে, এটি মাটির বাস্তবতায় কোনো পরিবর্তন আনবে না। ইসরায়েলের কিছু মন্ত্রী মনে করছেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র কেবলমাত্র সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এ মাসে ঘোষণা দিয়েছেন, কখনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হবে না।

শাহিন জানান, নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক বক্তব্যই প্রমাণ করে ইসরায়েলের আলোচনায় আগ্রহ নেই। তিনি উল্লেখ করেন, পশ্চিম তীরে নতুন বসতি নির্মাণের মাধ্যমে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছে।

শাহিন বলেন, “এ স্বীকৃতি মোটেও প্রতীকী নয়। এটি বাস্তব, কার্যকর ও অপ্রতিরোধ্য পদক্ষেপ, যা দেশগুলোকে নিতে হবে যদি তারা সত্যিই দুই-রাষ্ট্র সমাধানকে টিকিয়ে রাখতে চায়।”


আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা ও কূটনৈতিক চাপ

ফ্রান্স ও সৌদি আরব দুই-রাষ্ট্র সমাধানকে পুনরুজ্জীবিত করতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে নিউ ইয়র্কে এ সপ্তাহে আরও কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েল দূত মাইক হাকাবি এসব প্রচেষ্টাকে “নাটকীয় ও প্রতিকূল” বলে অভিহিত করেছেন। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বসতি নির্মাণ ও পশ্চিম তীর সংযুক্তকরণের নীতিতে আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।

এ বছর ইসরায়েল ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক একঘরে অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাদে এর অনেক ঘনিষ্ঠ মিত্র গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের নিন্দা জানিয়েছে। এমনকি কয়েকজন ইসরায়েলি মন্ত্রীকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় উসকানির জন্য নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হয়েছে।

শাহিন বলেন, এখন শুধু রাজনৈতিক চাপ নয়, অর্থনৈতিক চাপও প্রয়োজন, যাতে ইসরায়েলকে জবাবদিহির মুখোমুখি করা যায় এবং ফিলিস্তিনি জনগণকে রক্ষা করা যায়।


গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতি

শাহিন গাজার পরিস্থিতি নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “আজ গাজা জ্বলছে। আজ গাজা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। গাজায় মানুষকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে।” তিনি ইসরায়েলকে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন, যদিও ইসরায়েল তা অস্বীকার করেছে।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘের একটি তদন্ত কমিশন ঘোষণা করেছে, গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা করেছে। একই রকম সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে একাডেমিক সংগঠন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও ইসরায়েলের দুটি শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠনও।

ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন: স্বীকৃতি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পথকে আরও কাছে এনেছে

১১:৪০:৫৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রামাল্লায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য

রামাল্লায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভার্সেন আগাবেকিয়ান শাহিন বলেন, যেসব দেশ এ সপ্তাহে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তারা এক অপ্রতিরোধ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত দুই-রাষ্ট্র সমাধানকে বাঁচিয়ে রাখছে এবং ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসছে।

ব্রিটেন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া রোববার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। আরও কিছু দেশ যুক্ত হওয়ায় দুই-রাষ্ট্র সমাধান পুনর্জীবিত করার চেষ্টা জোরদার হয়েছে। তবে এ পদক্ষেপকে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র তীব্র সমালোচনা করেছে।

শাহিন বলেন, “এখনই সময়। আগামীকাল একটি ঐতিহাসিক দিন, যার ওপর ভিত্তি করে আমাদের এগোতে হবে। এটি শেষ নয়, বরং সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার পথে এগোনোর ধাপ।”

তিনি আরও বলেন, “এটি হয়তো যুদ্ধের অবসান ঘটাবে না, তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি, যেটির ওপর আমাদের আরও নির্মাণ করতে হবে।”


ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েল এ স্বীকৃতিকে অগ্রাহ্য করে বলেছে, এটি মাটির বাস্তবতায় কোনো পরিবর্তন আনবে না। ইসরায়েলের কিছু মন্ত্রী মনে করছেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র কেবলমাত্র সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এ মাসে ঘোষণা দিয়েছেন, কখনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হবে না।

শাহিন জানান, নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক বক্তব্যই প্রমাণ করে ইসরায়েলের আলোচনায় আগ্রহ নেই। তিনি উল্লেখ করেন, পশ্চিম তীরে নতুন বসতি নির্মাণের মাধ্যমে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছে।

শাহিন বলেন, “এ স্বীকৃতি মোটেও প্রতীকী নয়। এটি বাস্তব, কার্যকর ও অপ্রতিরোধ্য পদক্ষেপ, যা দেশগুলোকে নিতে হবে যদি তারা সত্যিই দুই-রাষ্ট্র সমাধানকে টিকিয়ে রাখতে চায়।”


আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা ও কূটনৈতিক চাপ

ফ্রান্স ও সৌদি আরব দুই-রাষ্ট্র সমাধানকে পুনরুজ্জীবিত করতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে নিউ ইয়র্কে এ সপ্তাহে আরও কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েল দূত মাইক হাকাবি এসব প্রচেষ্টাকে “নাটকীয় ও প্রতিকূল” বলে অভিহিত করেছেন। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বসতি নির্মাণ ও পশ্চিম তীর সংযুক্তকরণের নীতিতে আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।

এ বছর ইসরায়েল ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক একঘরে অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাদে এর অনেক ঘনিষ্ঠ মিত্র গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের নিন্দা জানিয়েছে। এমনকি কয়েকজন ইসরায়েলি মন্ত্রীকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় উসকানির জন্য নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হয়েছে।

শাহিন বলেন, এখন শুধু রাজনৈতিক চাপ নয়, অর্থনৈতিক চাপও প্রয়োজন, যাতে ইসরায়েলকে জবাবদিহির মুখোমুখি করা যায় এবং ফিলিস্তিনি জনগণকে রক্ষা করা যায়।


গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতি

শাহিন গাজার পরিস্থিতি নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “আজ গাজা জ্বলছে। আজ গাজা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। গাজায় মানুষকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে।” তিনি ইসরায়েলকে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন, যদিও ইসরায়েল তা অস্বীকার করেছে।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘের একটি তদন্ত কমিশন ঘোষণা করেছে, গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা করেছে। একই রকম সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে একাডেমিক সংগঠন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও ইসরায়েলের দুটি শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠনও।