০৪:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫
ঝিনাইদহে ঘন কুয়াশায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস দুর্ঘটনা নিহত এক, আহত তিন রাজধানীর ১০ স্থানে একযোগে মিছিল, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ৮ আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি ছয় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার ট্রাম্পের জন্য বলরুম বানাতে ভাঙা হচ্ছে হোয়াইট হাউজের ইস্ট উইং শরীর হঠাৎ অবশ হয়ে যাওয়া রোগ জিবিএস, লক্ষণ আর চিকিৎসা কী শাহজালাল বিমানবন্দরে আগুন লাগার পর ২৭ ঘণ্টায় যা যা ঘটেছিল সন্তান লালনপালনে আসল বিষয় হারিয়ে ফেলছে ‘প্যারেন্টিং’ ট্রেন্ড এক পরিবারের তিন প্রজন্ম ও এক টয়োটা করোলার জীবনযাত্রা উৎপাদন থেকে কৃষি—কানাডার শিল্পখাতে ডিজিটাল রূপান্তরের ঢেউ টয়লেটে স্মার্টফোন ব্যবহার বাড়াচ্ছে হেমোরয়েডের ঝুঁকি

এক অনুগত তিব্বতি কিভাবে চীনকে ফাঁকি দিলেন

প্রলোভন ও প্রতিরোধ

২০১২ সালের শরতে তিব্বতের লারিমা গ্রামে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি কর্মকর্তারা বাড়ি আর খাবারের বিনিময়ে মানুষকে প্রলোভন দেখান। শর্ত ছিল—বৌদ্ধ ধর্ম ত্যাগ করতে হবে, প্রার্থনার মালা ফেলে দিতে হবে, আর দালাই লামার বিরোধিতা করতে হবে।
অনেকেই ভান করে পার্টির অনুগত হয়েছেন বলে সুবিধা নিয়েছিলেন। কিন্তু ফুর্বা সেরিং তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি সামান্য অনুদান নেন, তবে মাও সেতুং ও অন্য নেতাদের ছবি ঝুলানোর নির্দেশ মানেননি। ছবিটি তিনি নদীর ধারে পুড়িয়ে ফেলেন।

গ্রেপ্তার ও নির্যাতন

কিছুদিন পরই পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ফুর্বা। ৩০ বছর বয়সে স্থানীয় থানায় তাকে ধাতব পাইপ দিয়ে পেটানো হয়। পুলিশ তার কাছে দালাই লামার ছবি দেখিয়ে বিদ্রুপ করে, আর জ্বলন্ত মাওয়ের ছবি দেখিয়ে প্রশ্ন করে—পার্টি নেতারা কি ‘আবর্জনা’? ফুর্বা ক্ষোভে বলে ওঠেন, “হ্যাঁ।”
তাকে দ্বিতীয় রাতে আবারও মারধর করা হয়। কিন্তু একজন স্থানীয় তিব্বতি পুলিশ গোপনে হাতকড়ি খোলার সরঞ্জাম ফেলে যান। ফুর্বা তা ব্যবহার করে পালাতে সক্ষম হন। দেয়াল টপকে তিনি অন্ধকার রাতে পালিয়ে যান।

পরিবারের শাস্তি

ফুর্বার পালানোর খেসারত দেন তার স্ত্রী, সেরিং লামো। পুলিশ তাকে দেড় বছরের বেশি সময় বিনা পারিশ্রমিকে ঝাড়ু দেওয়া, কাঠ কাটা, বরফ সরানো, টয়লেট পরিষ্কারের কাজে বাধ্য করে। সন্তানদের নিয়েই তাকে এসব কাজ করতে হতো। শেষমেশ তিনি গ্রাম ছেড়ে দূরের পাহাড়ি এলাকায় শ্রমিক হিসেবে কাজ খুঁজতে যান।

পালিয়ে থাকা জীবন

ফুর্বা পর্বতে আত্মগোপন করে বেঁচে ছিলেন। পরিবার থেকেই তিনি শুনেছিলেন কিভাবে তাদের পূর্বপুরুষেরা চীনের দখলে নিপীড়িত হয়েছেন। সেই ইতিহাস তার প্রতিরোধকে আরও দৃঢ় করেছিল। তার ভাইয়েরা খাবার-দাবার সরবরাহ করতেন, কিন্তু ২০১৪ সালে পুলিশ দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করে। মাসের পর মাস নির্যাতনের পরও তারা ফুর্বার অবস্থান জানাননি। ফুর্বা পাহাড়ে একাকী কাটাতে থাকেন, ফল-মূল, ভেষজ আর মাঝে মাঝে নেকড়ের ফেলে যাওয়া মৃতদেহ থেকে মাংস সংগ্রহ করে বেঁচে থাকেন।

পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলন

২০১৮ সালে ফুর্বা গোলগ এলাকায় পৌঁছে আত্মীয়দের মাধ্যমে মায়ের খোঁজ পান। সেখানেই জানতে পারেন যে তার মা পুলিশকে ঘুষ দিয়ে তার পালানোর সুযোগ করে দিয়েছিলেন। স্ত্রীকেও হঠাৎ গিয়ে দেখেন ফুর্বা। তবে আবার আত্মগোপন করতে হয় তাকে। কিছুদিন পর তার ভাইয়েরাও চার বছরের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান।

শেষ পর্যন্ত নির্বাসন

পরিবারের সবাই ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ায় ফুর্বারা সিদ্ধান্ত নেন—তিব্বতে থেকে আর মুক্তি সম্ভব নয়। ২০২২ সালে ফুর্বা নেপাল হয়ে ভারতে পৌঁছান। ধর্মশালায় নির্বাসিত দালাই লামার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। দালাই লামা তাকে আশীর্বাদ দিয়ে বলেন, “তুমি তোমার পরিবারের সঙ্গে আবার মিলিত হবে।”
পরের বছর স্ত্রী, সন্তান ও মা ভারতে পৌঁছান। দশ বছর পর ফুর্বা তার সন্তানদের সঙ্গে দেখা করেন।

নতুন জীবন

এখন ফুর্বা ও তার স্ত্রী ভারতে রাস্তায় টিব্বতি মোমো ও নুডলস বিক্রি করেন। জীবন সহজ নয়, কিন্তু পাহাড়ঘেরা পরিবেশ তাকে নিজের মাতৃভূমির কথা মনে করিয়ে দেয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

ঝিনাইদহে ঘন কুয়াশায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস দুর্ঘটনা নিহত এক, আহত তিন

এক অনুগত তিব্বতি কিভাবে চীনকে ফাঁকি দিলেন

১১:৫৯:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রলোভন ও প্রতিরোধ

২০১২ সালের শরতে তিব্বতের লারিমা গ্রামে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি কর্মকর্তারা বাড়ি আর খাবারের বিনিময়ে মানুষকে প্রলোভন দেখান। শর্ত ছিল—বৌদ্ধ ধর্ম ত্যাগ করতে হবে, প্রার্থনার মালা ফেলে দিতে হবে, আর দালাই লামার বিরোধিতা করতে হবে।
অনেকেই ভান করে পার্টির অনুগত হয়েছেন বলে সুবিধা নিয়েছিলেন। কিন্তু ফুর্বা সেরিং তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি সামান্য অনুদান নেন, তবে মাও সেতুং ও অন্য নেতাদের ছবি ঝুলানোর নির্দেশ মানেননি। ছবিটি তিনি নদীর ধারে পুড়িয়ে ফেলেন।

গ্রেপ্তার ও নির্যাতন

কিছুদিন পরই পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ফুর্বা। ৩০ বছর বয়সে স্থানীয় থানায় তাকে ধাতব পাইপ দিয়ে পেটানো হয়। পুলিশ তার কাছে দালাই লামার ছবি দেখিয়ে বিদ্রুপ করে, আর জ্বলন্ত মাওয়ের ছবি দেখিয়ে প্রশ্ন করে—পার্টি নেতারা কি ‘আবর্জনা’? ফুর্বা ক্ষোভে বলে ওঠেন, “হ্যাঁ।”
তাকে দ্বিতীয় রাতে আবারও মারধর করা হয়। কিন্তু একজন স্থানীয় তিব্বতি পুলিশ গোপনে হাতকড়ি খোলার সরঞ্জাম ফেলে যান। ফুর্বা তা ব্যবহার করে পালাতে সক্ষম হন। দেয়াল টপকে তিনি অন্ধকার রাতে পালিয়ে যান।

পরিবারের শাস্তি

ফুর্বার পালানোর খেসারত দেন তার স্ত্রী, সেরিং লামো। পুলিশ তাকে দেড় বছরের বেশি সময় বিনা পারিশ্রমিকে ঝাড়ু দেওয়া, কাঠ কাটা, বরফ সরানো, টয়লেট পরিষ্কারের কাজে বাধ্য করে। সন্তানদের নিয়েই তাকে এসব কাজ করতে হতো। শেষমেশ তিনি গ্রাম ছেড়ে দূরের পাহাড়ি এলাকায় শ্রমিক হিসেবে কাজ খুঁজতে যান।

পালিয়ে থাকা জীবন

ফুর্বা পর্বতে আত্মগোপন করে বেঁচে ছিলেন। পরিবার থেকেই তিনি শুনেছিলেন কিভাবে তাদের পূর্বপুরুষেরা চীনের দখলে নিপীড়িত হয়েছেন। সেই ইতিহাস তার প্রতিরোধকে আরও দৃঢ় করেছিল। তার ভাইয়েরা খাবার-দাবার সরবরাহ করতেন, কিন্তু ২০১৪ সালে পুলিশ দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করে। মাসের পর মাস নির্যাতনের পরও তারা ফুর্বার অবস্থান জানাননি। ফুর্বা পাহাড়ে একাকী কাটাতে থাকেন, ফল-মূল, ভেষজ আর মাঝে মাঝে নেকড়ের ফেলে যাওয়া মৃতদেহ থেকে মাংস সংগ্রহ করে বেঁচে থাকেন।

পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলন

২০১৮ সালে ফুর্বা গোলগ এলাকায় পৌঁছে আত্মীয়দের মাধ্যমে মায়ের খোঁজ পান। সেখানেই জানতে পারেন যে তার মা পুলিশকে ঘুষ দিয়ে তার পালানোর সুযোগ করে দিয়েছিলেন। স্ত্রীকেও হঠাৎ গিয়ে দেখেন ফুর্বা। তবে আবার আত্মগোপন করতে হয় তাকে। কিছুদিন পর তার ভাইয়েরাও চার বছরের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান।

শেষ পর্যন্ত নির্বাসন

পরিবারের সবাই ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ায় ফুর্বারা সিদ্ধান্ত নেন—তিব্বতে থেকে আর মুক্তি সম্ভব নয়। ২০২২ সালে ফুর্বা নেপাল হয়ে ভারতে পৌঁছান। ধর্মশালায় নির্বাসিত দালাই লামার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। দালাই লামা তাকে আশীর্বাদ দিয়ে বলেন, “তুমি তোমার পরিবারের সঙ্গে আবার মিলিত হবে।”
পরের বছর স্ত্রী, সন্তান ও মা ভারতে পৌঁছান। দশ বছর পর ফুর্বা তার সন্তানদের সঙ্গে দেখা করেন।

নতুন জীবন

এখন ফুর্বা ও তার স্ত্রী ভারতে রাস্তায় টিব্বতি মোমো ও নুডলস বিক্রি করেন। জীবন সহজ নয়, কিন্তু পাহাড়ঘেরা পরিবেশ তাকে নিজের মাতৃভূমির কথা মনে করিয়ে দেয়।