পুরুষ ও স্ত্রীলোক, বালক ও যুবা, সমুদয় লোকের শিক্ষার অবস্থা অনুসন্ধান করিয়া এই মীমাংসা হইল যে তৎকালে রাজসাহী জেলায় গড়ে শতকরা ৭.৭৫ জন বালক বালিকা শিক্ষা প্রাপ্ত হইতেছে এবং অবশিষ্ট শতকরা ৯২.২৫ জন বালক বালিকা শিক্ষা প্রাপ্ত হইতেছে না।১৯ ইহাতে স্পষ্ট অনুমিত হইবে যে অবস্থা ও কাল বিবেচনা করিয়া সে সময় রাজসাহীতে শিক্ষার অবস্থা ভাল ছিল না ও নিতান্ত মন্দ ছিল না। নিম্নশ্রেণি লোকদের মধ্যে যে একবারে শিক্ষা প্রচলিত ছিল না তাহাই বেশি অনুমিত হয়। “বাংলার সমুদয় জেলা মধ্যে আডাম সাহেবের রাজসাহী গড়ে একটি আদর্শ জেলা বলা যাইতে পারে।”২০ স্বর্গীয় কিশোরীচাঁদ মিত্র মহাশয় বলিয়াছেন যে “রাজসাহী একটি একবারে অনুন্নত জেলা নহে। আবার যে একেবারে মূর্খের জেলা তাহাও ভাল যাইতে পারে না। এই জেলায় পরিশ্রমী এবং বুদ্ধিমান লোকের বাস ছিল এবং বর্তমানেও আছে। এই জেলা বড় বড় প্রধান রাজা জমিদারগণের বাসস্থান বলিয়া গৌরব করে। ইহা একটি রেশম আদির প্রধান বাণিজ্য স্থান।”২১ রাজসাহী কেন বঙ্গের প্রত্যেক জেলায় শিক্ষা-বিস্তারের প্রয়োজন হইল। রাজসাহীতে শিক্ষা-বিস্তার না করিলে চুরি ডাকাইতি প্রভৃতির অত্যাচার হইতে প্রজাগণকে রক্ষা করা কঠিন; এবং রাজ্যও নিরাপদ নহে। “জ্ঞান কেবল শক্তি নহে কিন্তু রাজ্য রক্ষার একটি প্রধান উপায় এবং মূর্খতা দুর্বলতার একটি প্রধান উপাদান, যদারা রাজ্য বিপদে পতিত হয়।” এই সত্যের উপর নির্ভর করিয়া গবর্ণমেন্ট শিক্ষা-বিস্তার জন্য বিশেষ যত্নবান হইলেন।
রাজসাহীর ইতিহাস (পর্ব -৩০)
-
সারাক্ষণ রিপোর্ট - ০৭:১৬:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- 65
এইরূপ যুক্তি হইতে হইতে কিছুকাল অতীত হইল। এইকাল মধ্যে হেস্টিংসের সময় কলিকাতায় মাদ্রাসা স্থাপিত হয় এবং ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ‘এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল’ নামক প্রসিদ্ধ সভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ইহার চারি বৎসর পূর্বে অর্থাৎ ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে মিঃ মে নামক একজন মিশনরি প্রথমে চুঁচুড়ায় বাংলা স্কুল স্থাপিত করিবার সূত্রপাত করেন। বঙ্গদেশে শিক্ষা বিস্তারের এই সূত্রপাত হইল। বড়লাট লর্ড আমহার্স্ট সময়ে দেশে দেশে শিক্ষা বিস্তারের জন্য একটি কমিটি স্থাপিত হয়। তদপর বড়লাট বেন্টিঙ্ক বিখ্যাত লর্ড মেকলে সাহেবের সহায়তায় এ দেশীয় প্রণালীতে শিক্ষা বিস্তারের এরূপ ব্যবস্থা করেন যে, যাহাতে দেশীয় ভাষা অধিক শিক্ষা হয়। এই গবর্ণর জেনেরল বাহাদুরের আমলে দেশীয় লোকদের বিদ্যা শিক্ষা প্রণালী পরিবর্তিত ও সংশোধিত হয়। ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে বিলাতের মহাসভার আদেশ অনুসারে ভারতবাসীদের বিদ্যা শিক্ষার্থ এক লক্ষ টাকা ব্যয় নির্ধারিত হয়। এই টাকা মঞ্জুর হওয়ার পর স্থানে স্থানে সংস্কৃত, পারস্য ও আরবীয় ভাষা শিক্ষা দিবার জন্য বিদ্যালয় স্থাপিত হইতে লাগিল। এইরূপে কিছুকাল অতীত হইলে ইংরেজি ভাষা ও ইউরোপীয় বিদ্যার অনুশীলন জন্য সকলেরই অনুরাগ ক্রমে বৃদ্ধি হইতে লাগিল। এই বিষয় শিক্ষা কমিটির গোচর করা হইল। তদপর এ বিষয় গবর্ণর জেনেরল বাহাদুরের সভায় বাদানুবাদ হইয়া ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে এই স্থির হইল যে এদেশীয় লোকদের ইউরোপীয় বিদ্যা শিক্ষা দেওয়াই ব্রিটিশ গবর্ণমেন্টের প্রকৃত উদ্দেশ্য। সুতরাং ইতঃপূর্বে ভারতবাসীদের বিদ্যা শিক্ষার জন্য যে এক লক্ষ টাকা মঞ্জুর হইয়াছে, তাহা ইউরোপীয় শিক্ষার জন্য ব্যয় হইবে। কিন্তু এই নিয়ম হইবার পূর্বে সংস্কৃত, পারস্য ও আরবীয় ভাষা শিক্ষা দিবার জন্য যে সকল বিদ্যালয় স্থাপিত হইয়াছে, তাহাদের ব্যয় গবর্ণমেন্ট স্বতন্ত্র দিবেন। ভাশালী ঐরূপ শীদাস, সমকক্ষ না। সে পাঠীতে মোঘল বিধাতা।
জ নিজ ভাজত্বের হওয়া হইতে জমাদার, রও বরং তার পক্ষে দারগণের লুবাদারের য় প্রজাগণ ছিল কেন? এক শিক্ষিত ক্ত পাইবার প্রারম্ভেই এই প্রতিনিধির ত লাগিল। সের সময় ব বেঙ্গল’ এর জুলাই সূত্রপাত য়ে দেশে খ্যাত লর্ড ভরেন যে, ন দেশীয় বিলাতের রিত হয়।
বার জন্য ভাষা ও এই বিষয় র সভায় ীয় বিদ্যা দর বিদ্যা এইরূপ প্রণালীতে কলিকাতা ও তন্নিকটবর্তী স্থানীয় লোকদের সন্তানদিগের বিদ্যা শিক্ষারই সুবিধা হইল। জেলায় জেলায় গ্রামে গ্রামে প্রজাগণকে শিক্ষিত না করিতে পারিলে পূর্বের লিখিত অত্যাচার হইতে প্রজাগণকে রক্ষা করা কঠিন। অতএব ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে দেশীয় শিক্ষার প্রকৃত অবস্থা প্রত্যেক জেলায় কিরূপ জানিবার জন্য এবং প্রথমে কি উপায়ে দেশীয় শিক্ষা সর্বত্র বিস্তার করা যাইতে পারে, তজ্জন্য বড়লাট উইলিয়ম বেন্টিঙ্ক, মহাত্মা উইলিয়ম আডাম সাহেবকে গবর্ণমেন্ট পক্ষ হইতে কমিশনর নিযুক্ত করেন। ১৪ এই প্রথমে জেলায় জেলায় দেশীয় শিক্ষা বিস্তারের সূত্রপাত হইল এবং রাজসাহী প্রজাপুঞ্জের সৌভাগ্য প্রসন্ন হইবারও সূত্রপাত হইল। মহাত্মা আডাম এই কার্যের উপযুক্ত পাত্র ছিলেন। তাহার রিপোর্ট বড়লাট বাহাদুর সমীপে পৌঁছিলে, শিক্ষার সুব্যবস্থা হইবে। মহাত্মা আডাম দেখিলেন যে প্রত্যেক জেলার প্রত্যেক থানায় স্বয়ং যাইয়া দেশীয় শিক্ষা ও সামাজিক অবস্থার অনুসন্ধান করা নিতান্ত অসম্ভব। অতএব প্রত্যেক জেলার কোন একটি প্রধান থানা বা প্রধান নগরে স্বয়ং যাইয়া তথাকার দেশীয় শিক্ষা ও সামাজিক অবস্থার বিষয় সংগ্রহ করিয়া আদর্শ স্বরূপ সমস্ত জেলার শিক্ষার অবস্থা বুঝা যাইতে পারে। তাহার অনুসন্ধান এত পরিপক্ক ও গভীর ছিল যে প্রত্যেক জেলার শিক্ষার প্রকৃত অবস্থা স্থির করিতে সক্ষম হইয়াছিলেন। এই প্রণালী অনুসারে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে আডাম সাহেব স্বয়ং রাজসাহী আসিয়া নাটোরকে আদর্শ স্বরূপ নির্দেশ করিলেন। নাটোরে প্রথমে রাজসাহী জেলার সদর অফিস ছিল এবং এক্ষণে রাজসাহীর একটি প্রধান মহকুমা। অতএব নাটোরের অবস্থা জানিতে পারিলে রাজসাহী জেলার শিক্ষা ও সামাজিক অবস্থা বিশেষরূপ জানা যাইবে। এই সময়ে আডাম সাহেব রাজসাহী জেলা পরিদর্শনে আইসেন, সে সময়ে সেখানে কোন সুবন্দোবস্ত ইংরেজি স্কুল ছিল না। “আডাম সাহেব বলেন নাটোরে বাংলা স্কুল ১০টি এবং তাহাদের ছাত্রসংখ্যা ১৬৭; ছাত্রগণ ১০ হইতে ১৬ বৎসর বয়স সময় স্কুলে ভর্তি হয়। শিক্ষকগণ যুবক এবং সরল প্রকৃতির পুরুষ; কিন্তু দরিদ্র এবং অনভিজ্ঞ; তাহারা এই কার্যে সম্মান মনে করেন। “১৫ নাটোরে পারস্য ও আরবীয় ভাষাও শিক্ষা হইত। “নাটোরে পারস্য স্কুল চারিটি এবং তাহাদের ছাত্রসংখ্যা ২৩। ছাত্রগণ ৪ই হইতে ১৩ বৎসর বয়স সময় স্কুলে ভর্তি হয়। ১৭ বৎসর বয়সের পর আর স্কুলে থাকে না। বিদ্যা বুদ্ধিতে বাংলা স্কুলের শিক্ষক অপেক্ষা পারস্য স্কুলের শিক্ষক শ্রেষ্ঠ, কিন্তু ধর্মভাবে বাংলা স্কুলের শিক্ষকই শ্রেষ্ঠ। “১৬ পারস্য স্কুলের শিক্ষকের মাসিক আয় ৭টাকা। আরবীয় ভাষা শিক্ষা জন্য যে স্কুল ছিল, সে সমুদয়ে কোরান পড়ান হইত। এ শ্রেণির স্কুলের সংখ্যা ১১ এবং ছাত্র সংখ্যা ৪২। ছাত্রগণ ৭ হইতে ১৪ বৎসর বয়স সময় পর্যন্ত স্কুলে ভর্তি হয় এবং ১৮ বৎসর বয়সের পর আর স্কুলে থাকে না। ইহাদের শিক্ষকগণ অনুপযুক্ত। বাংলা স্কুল অপেক্ষা পারস্য স্কুলের শিক্ষায় বৃহৎ এবং উদার ভাব লক্ষিত হয়। “১৭
আডাম সাহেবের সময়ে ব্রাহ্মাণ পণ্ডিত ও সাধারণ হিন্দুদের মধ্যে স্ত্রী শিক্ষা প্রচলিত ছিল না, কিন্তু জমিদারেরা পুত্রের ন্যায় কন্যাকে শিক্ষা দিতেন। অনেক সময়ে কন্যাকেও জমিদারি কার্য নির্বাহ করিবার জন্য লেখাপড়া করিতে হইত। রাণী সূর্যমণি, তারাঠাকুরঝি প্রভৃতি লেখাপড়া মন্দ শিক্ষা করেন নাই।১৮
জনপ্রিয় সংবাদ




















