০১:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
সম্পর্কের উষ্ণতা ধরে রাখা উচিৎ, পারিবারিক সীমারেখা রক্ষা করে উৎসব উদযাপনের জ্ঞান শৈশবের গভীর ক্ষত থেকে লেখা এক রন্ধনশিল্পীর আত্মস্বীকারোক্তি মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৬৪) ক্ষমতার নৃত্য: ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস বলরুম প্রকল্পে দানের আড়ালে ব্যবসায়িক স্বার্থের খেলা জোহরান মামদানির সিরিয়ান স্ত্রী রামা দুয়াজি সম্পর্কে এই বিষয়গুলো কি জানেন? পুঁজিবাজারে পতনের ধারা অব্যাহত: সপ্তাহ শেষে ডিএসই ও সিএসই লাল সূচকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যু সংবিধান উপেক্ষা করে গণভোটের তাড়াহুড়ো জনমনে সন্দেহ জাগাচ্ছে: আমীর খসরু শেয়ারবাজারে পতন: সপ্তাহ শেষে লাল সংকেতে ডিএসই ও সিএসই ব্যাংক একীভূতকরণে বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ: পদত্যাগ দাবি ও আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

রাজসাহীর ইতিহাস (পর্ব -৩১)

লর্ড হার্ডিঞ্জের পর লর্ড ডালহাউসি গবর্ণর জেনেরলের পদে নিযুক্ত হইয়া ভারতবর্ষে আগমন করেন। তাহার ভারতবর্ষে আগমনের পর হইতেই পুরুষ ও স্ত্রীলোকদের শিক্ষা এবং দেশীয় ভাষায় প্রজাপুঞ্জকে শিক্ষা দিবার জন্য তিনি যত্নবান হইলেন। “এইরূপে গবর্ণর জেনেরল এ-দেশীয় লোকের বিদ্যা শিক্ষার্থ নানা উদ্যোগ করিতেছেন, এমন সময়ে ১৮৫৪ অব্দের জুলাই মাসে তদানীন্তন অনুশাসনী সভার অধিপতি মহোদয় স্যর চার্লস উডের নিকট হইতে একখানি পত্রিকা প্রাপ্ত হইলেন। এই সুপ্রসিদ্ধ লিপিখানি যে ভারতবর্ষীয় লোকের পক্ষে বিদ্যা শিক্ষার সনন্দপত্র বলিয়া বর্ণিত হইয়া থাকে, তাহা যথার্থ। এই পত্রে ইহা উপদিষ্ট আছে যে, প্রত্যেক প্রেসিডেন্সিতে এক একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হইবে এবং দেশস্থ সমুদায় কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত হইয়া, নানাবিধ পরীক্ষার্থ ছাত্রদিগকে শিক্ষা দান করিবে। ছাত্রদিগের বিদ্যার পুরস্কার দিবার ও কৃতিত্বের তারতম্য অবধারণ করিবার নিমিত্ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ বি,এ, এবং এম, এ, বি, এল এবং ডি, এল; এম, বি এবং এম, ডি প্রভৃতি উপাধি প্রদান করিবেন। উক্ত পত্রিকায় ইহা আরও নির্দিষ্ট আছে যে, সাধারণের শিক্ষা বিধানার্থ সরকার হইতে অর্থ সাহায্য বিতরণ করিবার প্রথা প্রবর্তিত হইবে। সাহায্য দান প্রণালী দুইটি মহৎ উদ্দেশ্য সাধন করিতেছে। ইহা দ্বারা অপর সাধারণের মধ্যে অনেক পরিমাণে জ্ঞান জ্যোতি বিকীর্ণ করিবার সোপান হইয়াছে এবং স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া কিরূপে একটি মহৎকার্য সম্পন্ন করিতে হয়, তদ্বিষয়ে এ দেশীয় লোক ক্রমশ শিক্ষা পাইতেছেন। গত ত্রিশ বৎসরের মধ্যে বঙ্গদেশের যাদৃশী শ্রীবৃদ্ধি হইয়াছে, কোন পরাধীন রাজ্যে কখন এত অল্পকালের মধ্যে সেরূপ উন্নতি দৃষ্ট হয় নাই। ইউরোপীয় বিদ্যাশিক্ষা যে এই অদৃষ্টপূর্ব অভ্যুদয়ের প্রধান কারণ, তাতে সন্দেহ হইতে পারে না।”২৪ এইরূপ সাহায্য দান প্রণালী রাজসাহীর শিক্ষা বিস্তারের বেগ অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি হইয়া রাজা জমিদারগণ ও সাধারণ লোক সমূহকে আরও উৎসাহিত করিল। এই প্রণালীতে কেবল যে রাজসাহীর রাজা জমিদার প্রভৃতি উৎসাহিত হইয়াছিল এমত নহে, সমগ্র বঙ্গদেশেই রাজা জমিদার প্রভৃতি উৎসাহিত হইয়া শিক্ষাবিস্তারের জন্য যত্নবান হন। ১৮৫৫ এবং ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে সাহায্য দান প্রণালী কার্যে পরিণত হয়। সে সময়ে সমগ্র বাংলা দেশে ১৪৫ বিদ্যালয় এবং তাহাতে ১৩,২২৯ ছাত্র শিক্ষাপ্রাপ্ত হইত। কিন্তু সাহায্যদান প্রণালী প্রচলিত হইবার পর ১৮৬৬-৬৭ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৪৫ হইতে ২,৯০৭ এবং ছাত্র সংখ্যা ১৩,২২৯ হইতে ১২১১০৮ বৃদ্ধি হয়। কিন্তু রাজসাহীতে নিম্নশ্রেণির স্কুল ৬২ এবং তাহাতে ১৯৮৪ জন ছাত্র শিক্ষাপ্রাপ্ত হইতেছিল। ইতিপূর্বে জমিদারগণের উপর যে গুরুতর দোষ অর্পিত হইয়াছিল, তাহা অনেক পরিমাণে এ সময় খণ্ডন হইল। সাহায্য-দান প্রণালী প্রচলিত হইবার পর বাবু মথুরানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় নামক একজন ডেপুটি কালেক্টর রাজসাহীতে অনেকদিন ছিলেন। তিনি রাজসাহী জেলা স্কুল কমিটির সম্পাদক ছিলেন এবং তাহার সরল ও অমায়িক স্বভাবগুণে জেলার রাজা জমিদারগণ তাহাকে বিশেষ শ্রদ্ধা ও ভক্তি করিতেন। রাজসাহীর রাজা ও জমিদারগণের শিক্ষা বিস্তারের পরামর্শদাতা মথুরবাবুই ছিলেন। তাহাকে জিজ্ঞাসা না করিয়া কোন রাজা, জমিদার নূতন স্কুল স্থাপনে অগ্রসর হইতেন না। সুতরাং রাজসাহীর অনেক ইংরেজি ও বাংলা স্কুল অদ্যাপি মথুরবাবুর যত্নের সাক্ষ্য প্রদান করিতেছে। এই সাহায্যদান প্রণালীতে উচ্চ এবং মধ্যশ্রেণি প্রজাপুঞ্জকে শিক্ষা প্রদান করিবার যথেষ্ট সুবিধা হয়, কিন্তু এই প্রণালীতে নিম্নশ্রেণি প্রজাপুঞ্জকে শিক্ষাপ্রদানের কোন বিশেষ সুবিধা হইল না।
জনপ্রিয় সংবাদ

সম্পর্কের উষ্ণতা ধরে রাখা উচিৎ, পারিবারিক সীমারেখা রক্ষা করে উৎসব উদযাপনের জ্ঞান

রাজসাহীর ইতিহাস (পর্ব -৩১)

০৪:৫১:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
লর্ড হার্ডিঞ্জের পর লর্ড ডালহাউসি গবর্ণর জেনেরলের পদে নিযুক্ত হইয়া ভারতবর্ষে আগমন করেন। তাহার ভারতবর্ষে আগমনের পর হইতেই পুরুষ ও স্ত্রীলোকদের শিক্ষা এবং দেশীয় ভাষায় প্রজাপুঞ্জকে শিক্ষা দিবার জন্য তিনি যত্নবান হইলেন। “এইরূপে গবর্ণর জেনেরল এ-দেশীয় লোকের বিদ্যা শিক্ষার্থ নানা উদ্যোগ করিতেছেন, এমন সময়ে ১৮৫৪ অব্দের জুলাই মাসে তদানীন্তন অনুশাসনী সভার অধিপতি মহোদয় স্যর চার্লস উডের নিকট হইতে একখানি পত্রিকা প্রাপ্ত হইলেন। এই সুপ্রসিদ্ধ লিপিখানি যে ভারতবর্ষীয় লোকের পক্ষে বিদ্যা শিক্ষার সনন্দপত্র বলিয়া বর্ণিত হইয়া থাকে, তাহা যথার্থ। এই পত্রে ইহা উপদিষ্ট আছে যে, প্রত্যেক প্রেসিডেন্সিতে এক একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হইবে এবং দেশস্থ সমুদায় কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত হইয়া, নানাবিধ পরীক্ষার্থ ছাত্রদিগকে শিক্ষা দান করিবে। ছাত্রদিগের বিদ্যার পুরস্কার দিবার ও কৃতিত্বের তারতম্য অবধারণ করিবার নিমিত্ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ বি,এ, এবং এম, এ, বি, এল এবং ডি, এল; এম, বি এবং এম, ডি প্রভৃতি উপাধি প্রদান করিবেন। উক্ত পত্রিকায় ইহা আরও নির্দিষ্ট আছে যে, সাধারণের শিক্ষা বিধানার্থ সরকার হইতে অর্থ সাহায্য বিতরণ করিবার প্রথা প্রবর্তিত হইবে। সাহায্য দান প্রণালী দুইটি মহৎ উদ্দেশ্য সাধন করিতেছে। ইহা দ্বারা অপর সাধারণের মধ্যে অনেক পরিমাণে জ্ঞান জ্যোতি বিকীর্ণ করিবার সোপান হইয়াছে এবং স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া কিরূপে একটি মহৎকার্য সম্পন্ন করিতে হয়, তদ্বিষয়ে এ দেশীয় লোক ক্রমশ শিক্ষা পাইতেছেন। গত ত্রিশ বৎসরের মধ্যে বঙ্গদেশের যাদৃশী শ্রীবৃদ্ধি হইয়াছে, কোন পরাধীন রাজ্যে কখন এত অল্পকালের মধ্যে সেরূপ উন্নতি দৃষ্ট হয় নাই। ইউরোপীয় বিদ্যাশিক্ষা যে এই অদৃষ্টপূর্ব অভ্যুদয়ের প্রধান কারণ, তাতে সন্দেহ হইতে পারে না।”২৪ এইরূপ সাহায্য দান প্রণালী রাজসাহীর শিক্ষা বিস্তারের বেগ অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি হইয়া রাজা জমিদারগণ ও সাধারণ লোক সমূহকে আরও উৎসাহিত করিল। এই প্রণালীতে কেবল যে রাজসাহীর রাজা জমিদার প্রভৃতি উৎসাহিত হইয়াছিল এমত নহে, সমগ্র বঙ্গদেশেই রাজা জমিদার প্রভৃতি উৎসাহিত হইয়া শিক্ষাবিস্তারের জন্য যত্নবান হন। ১৮৫৫ এবং ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে সাহায্য দান প্রণালী কার্যে পরিণত হয়। সে সময়ে সমগ্র বাংলা দেশে ১৪৫ বিদ্যালয় এবং তাহাতে ১৩,২২৯ ছাত্র শিক্ষাপ্রাপ্ত হইত। কিন্তু সাহায্যদান প্রণালী প্রচলিত হইবার পর ১৮৬৬-৬৭ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৪৫ হইতে ২,৯০৭ এবং ছাত্র সংখ্যা ১৩,২২৯ হইতে ১২১১০৮ বৃদ্ধি হয়। কিন্তু রাজসাহীতে নিম্নশ্রেণির স্কুল ৬২ এবং তাহাতে ১৯৮৪ জন ছাত্র শিক্ষাপ্রাপ্ত হইতেছিল। ইতিপূর্বে জমিদারগণের উপর যে গুরুতর দোষ অর্পিত হইয়াছিল, তাহা অনেক পরিমাণে এ সময় খণ্ডন হইল। সাহায্য-দান প্রণালী প্রচলিত হইবার পর বাবু মথুরানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় নামক একজন ডেপুটি কালেক্টর রাজসাহীতে অনেকদিন ছিলেন। তিনি রাজসাহী জেলা স্কুল কমিটির সম্পাদক ছিলেন এবং তাহার সরল ও অমায়িক স্বভাবগুণে জেলার রাজা জমিদারগণ তাহাকে বিশেষ শ্রদ্ধা ও ভক্তি করিতেন। রাজসাহীর রাজা ও জমিদারগণের শিক্ষা বিস্তারের পরামর্শদাতা মথুরবাবুই ছিলেন। তাহাকে জিজ্ঞাসা না করিয়া কোন রাজা, জমিদার নূতন স্কুল স্থাপনে অগ্রসর হইতেন না। সুতরাং রাজসাহীর অনেক ইংরেজি ও বাংলা স্কুল অদ্যাপি মথুরবাবুর যত্নের সাক্ষ্য প্রদান করিতেছে। এই সাহায্যদান প্রণালীতে উচ্চ এবং মধ্যশ্রেণি প্রজাপুঞ্জকে শিক্ষা প্রদান করিবার যথেষ্ট সুবিধা হয়, কিন্তু এই প্রণালীতে নিম্নশ্রেণি প্রজাপুঞ্জকে শিক্ষাপ্রদানের কোন বিশেষ সুবিধা হইল না।