০২:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
তরুণদের মধ্যে ক্যান্সারের বৃদ্ধি: কারণ ও প্রভাব বিমানবন্দর অগ্নিকাণ্ডে রপ্তানিকারকদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ তৎপরতা যশোর এখন বাংলাদেশের শীতকালীন সবজির চারা উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র ওমানের দুর্ঘটনায় নিহত ৮ বাংলাদেশির মরদেহ চট্টগ্রামে পৌঁছেছে আট মাস পর ভারতে আটক ১২ বাংলাদেশি নাবিকের দেশে ফেরা নারী অধিকার ও শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্নে ইলা মিত্রের শতবর্ষে নওগাঁয় র‌্যালি যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে ভেনিজুয়েলা: সামরিক প্রস্তুতি ও দুর্বলতা ভিক্টোরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দুধ খামার বিক্রয়: লাভজনক সুযোগ এবং সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য গঠনমূলক পদক্ষপে ভারতের রুশ তেল কেনার বিষয়ে ট্রাম্পের দাবির প্রতিক্রিয়া ইরানে পুরানো ক্ষত পুনরুজ্জীবিত: মার্কিন ও ইসরাইলি আক্রমণে উদ্বেগের নতুন ঢেউ

আসামের জন্য সংগীতশিল্পী জুবিন গার্গের অর্থ কী ছিল

২৩ সেপ্টেম্বরসিঙ্গাপুরে জলক্রীড়ার এক দুর্ঘটনায় জুবিন গার্গের মৃত্যুর চার দিন পর তাঁর দেহ চিরনিদ্রায় শায়িত হয়। দুটি ময়নাতদন্তসহ চার দিন কেটে গেলেও আসামের মানুষ কোনো সমাপ্তি খুঁজে পাননি। তবু কেউ আসলে সেটি খুঁজছেনও না। কারণ এটি কেবল আরেকটি শুরুযেখানে জুবিন দা’ নামে পরিচিত যে ঘটনাপ্রবাহতা এখন অমর হয়ে উঠছে।

১৯৭২ সালে মেঘালয়ের তুরায় জুবিন বোরঠাকুর নামে জন্ম নেওয়া জুবিন গার্গ শুধু জনপ্রিয় গায়কই ছিলেন নাআরও বহুগুণ বেশি। ২০০৬ সালের গ্যাংস্টার’ চলচ্চিত্রের সেই বহুল জনপ্রিয় গান য়া আলি’-র গায়ক হিসেবেই তাঁকে সীমাবদ্ধ করে দেখা যায় না। আজআসামের বাইরে অনেকেই দুটি তথ্য শুনে বিস্মিত হন।

প্রথমতজুবিন প্রায় ৪০টি ভাষায় ৩৮,০০০-এরও বেশি গান গেয়েছেন। ৫২ বছর বয়সে যাঁর জীবনাবসানতাঁর এই বিশাল সংগীতভাণ্ডারই আলাদা স্বীকৃতির যোগ্য। কিন্তু এ যুগে কয়েকটি হিট বা জনপ্রিয় সংখ্যার বাইরে মানুষের আগ্রহ কমে গেছে।

A man with orange sunglasses and a hat standing in a street in front of a crowd.

কিন্তু নব্বইয়ের দশকের আসামে তা ছিল না। আসামের বিভিন্ন জায়গায় বড় হওয়াশিল্পমনা পরিবারে জন্ম নেওয়া জুবিন স্কুল-কলেজের দিনগুলোতেও ভরসা রেখেছিলেন সংগীতের ওপর। ১৯৯২ সালে তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম অনামিকা’ প্রকাশের পর রাতারাতি তিনি তারকা হয়ে ওঠেন। সহস্রাব্দের সূচনায় এসে তিনি অধিকাংশ আসামবাসীর কাছে আইকনে পরিণত হন। তিনি সংগীত ও চলচ্চিত্র প্রযোজনা শুরু করেনতখন মৃতপ্রায় অসমীয়া সিনেমাকে নতুন প্রাণ দেন। প্রেমভক্তিবেদনাআরও নানান বিষয়ে তিনি গান গেয়েছেন।

নিজের গানে এক বিশেষ হামিং-এর ঢং তিনি জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। নীরবে হলেও নিশ্চিতভাবেজুবিন আসামকে দিয়েছিলেন এক নতুন কণ্ঠযেখানে বিদ্রোহ বা বিচ্ছিন্নতাবাদের বদলে স্থিতি ও আধুনিকতা এসেছেজাত-পাতের বদলে শিক্ষাদারিদ্র্যের বদলে আশার সঞ্চার হয়েছে। প্রতিটি পরিবর্তনের ছিল তাঁর একটি করে গানযা মানুষের মনে স্পর্শ করত এবং ধীরে ধীরে তাদের বদলে দিত। কিন্তু মানুষ যেমন দ্বন্দ্বে ভরাতেমনি ছিলেন জুবিনও।

Zubeen Garg dies at 52 Fans pay tribute to Assamese icons musical legacy - India Today

ভূপেন হাজরিকা ও খাগেন মহন্তদের প্রজন্ম যে পুরনো’ ধারাটি প্রতিনিধিত্ব করতসেই প্রজন্ম লম্বা চুলকর্তৃত্ব-বিরোধী ভঙ্গি আর বিপজ্জনকভাবে মুক্তচেতা এক তরুণকে সহজে আইডল হিসেবে মানতে পারেনি। আসলে তিনি তো প্রকাশ্যে কর্তৃপক্ষকে চ্যালেঞ্জ করেছেনঅনুষ্ঠানেও মদ্যপান করেছেনঅশালীন ভাষা ব্যবহার করেছেন। তবে কী বদলেছিলযা তাঁকে আইকনে পরিণত করলসবকিছুকেবল জুবিন বাদে। খ্যাতিঅর্থঅসীম সুযোগযা সবচেয়ে মহৎকেও দুর্নীতিগ্রস্ত করতে পারেসবই তাঁর দিকে এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু জুবিন একই রয়ে গিয়েছিলেন।

এতেই আসে দ্বিতীয় তথ্যযা আজ অনেককে বিস্মিত করছে এবং জুবিনকে নিয়ে কৌতূহলী করে তুলছে। তাঁর শেষযাত্রায় সব শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে সর্বজনীন শোক প্রকাশ করেছেন। অনেকে ২০১১ সালে ভূপেন হাজরিকার শেষযাত্রার সঙ্গে তুলনা টেনেছেন। তবে বিষয়টি ভিড়ের আকার নয়শোকের গভীরতা ও আবেগের উচ্ছ্বাসই এখানে আলাদা করে ধরা পড়েছে।

আসামের লাখো মানুষের কাছে জুবিন-উত্তর’ পৃথিবী ভাবাই দুষ্কর। তাঁর মৃত্যুর পর আসামে একটি বিশেষ সামাজিক-সাংস্কৃতিক ঘটনাপ্রবাহ উন্মোচিত হচ্ছেযা গড়ে উঠছে তিনটি শক্তির সমবায়ে: আসামের মানুষরাজ্য সরকার এবং শিল্পীর নিজস্ব উত্তরাধিকার।

How Singer Zubeen Garg Got His Name

আসামের মানুষ তাঁর অকালপ্রয়াণে স্তব্ধ। যদি জুবিন তাঁর জীবনকে পূর্ণতা পর্যন্ত বাঁচতে পারতেনহয়তো আজকের এই বিরাট তরঙ্গটি এত প্রকট হতো না। মানুষের মাটিভাষাসংস্কৃতি ও পরিচয়ের সঙ্গে জড়ানো আবেগের শক্তি তিনি পৃথিবীকে দেখিয়েছেন। তাঁর বিখ্যাত পঙ্‌ক্তি—“আমার কোনো জাত নেইকোনো ধর্ম নেইআমি আগে মানুষ”—কথাটির যেন চাক্ষুষ প্রতিচ্ছবি দেখা গেলযখন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ঢল নামিয়ে একসঙ্গে কেঁদে উঠলেন। গণ-শোকের শক্তি গভীরএটি সমাজ বদলে দিতে পারে। আসাম সরকার বিষয়টি বুঝেছিল এবং তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে সেই আবেগকে মর্যাদা দিয়েছে। সবাই অন্তর্ভুক্ত বলে অনুভব করেছেনবোঝা হয়েছে বলে মনে করেছেন। তাঁরা ধাক্কাটা সামলানোর সময় পেয়েছেন এবং জুবিন-উত্তর’ পৃথিবী নিয়ে একসঙ্গে ভাবারকল্পনা করার অবকাশ পেয়েছেন।

কালাগুরু বিষ্ণুপ্রসাদ রাভারূপকোঁৱৰ জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা ও ভূপেন হাজরিকাএই বিংশ শতকের সাংস্কৃতিক মহীরূহদের পরজুবিনের মধ্য দিয়ে আসাম নতুন এক পরিচয় খুঁজে পেয়েছে। পথের মানুষের কাছে যেমন তিনি প্রিয় ছিলেনতেমনি অভিজাত অঙ্গনেও। বলিউডে ক্যারিয়ারের শিখরে থেকেও তিনি আসামে ফিরে এসেছিলেনকারণ তাঁর বিশ্বাস ছিল—“রাজাকে নিজের রাজ্য ছেড়ে যাওয়া উচিত নয়।” উলফার হুমকি সত্ত্বেও তিনি বিহু উৎসবে হিন্দি গান গেয়েছেন। আজ সেই উলফাই তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।

Remembering Zubeen Garg, the Ya Ali singer and Assam cultural icon who lives on - India Today

আজ আসাম নিজেকেই কিছুটা হারিয়েছে। তবু আগের চেয়ে হয়তো আরও পরিপূর্ণকারণ এই গায়কের উত্তরাধিকার তাঁর জীবনের সহজ যোগফলের চেয়েও বৃহৎ। তাঁর গানগুলো নতুন অর্থ পাবেনতুন শ্রোতা খুঁজে নেবেমানুষ তাঁর ভেতরের নানাদিক আবিষ্কার করবে। তাঁর কাজের পরিধিব্যাপ্তি ও বৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণা হবেযা শিল্প-সংস্কৃতি থেকে সমাজতত্ত্বমনোবিজ্ঞানএমনকি রাজনীতিতেও সঞ্চারিত হবে। প্রতি বছর তাঁর জীবন ও কাজকে ঘিরে আয়োজন হবে। কে জানেমরণোত্তর আরও কত সম্মান-স্বীকৃতি তিনি পেতে পারেন। কিন্তু জুবিন দা’—সম্ভবত তিনি এসবের তোয়াক্কা করতেন না।

লেখক: শ্রাবণা বড়ুয়াসহযোগী অধ্যাপক ও পরিচালকএনকেসিসিইএএসজিন্দাল স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স। এখানে ব্যক্ত মতামত একান্তই তাঁর নিজের।

জনপ্রিয় সংবাদ

তরুণদের মধ্যে ক্যান্সারের বৃদ্ধি: কারণ ও প্রভাব

আসামের জন্য সংগীতশিল্পী জুবিন গার্গের অর্থ কী ছিল

০৫:০৬:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

২৩ সেপ্টেম্বরসিঙ্গাপুরে জলক্রীড়ার এক দুর্ঘটনায় জুবিন গার্গের মৃত্যুর চার দিন পর তাঁর দেহ চিরনিদ্রায় শায়িত হয়। দুটি ময়নাতদন্তসহ চার দিন কেটে গেলেও আসামের মানুষ কোনো সমাপ্তি খুঁজে পাননি। তবু কেউ আসলে সেটি খুঁজছেনও না। কারণ এটি কেবল আরেকটি শুরুযেখানে জুবিন দা’ নামে পরিচিত যে ঘটনাপ্রবাহতা এখন অমর হয়ে উঠছে।

১৯৭২ সালে মেঘালয়ের তুরায় জুবিন বোরঠাকুর নামে জন্ম নেওয়া জুবিন গার্গ শুধু জনপ্রিয় গায়কই ছিলেন নাআরও বহুগুণ বেশি। ২০০৬ সালের গ্যাংস্টার’ চলচ্চিত্রের সেই বহুল জনপ্রিয় গান য়া আলি’-র গায়ক হিসেবেই তাঁকে সীমাবদ্ধ করে দেখা যায় না। আজআসামের বাইরে অনেকেই দুটি তথ্য শুনে বিস্মিত হন।

প্রথমতজুবিন প্রায় ৪০টি ভাষায় ৩৮,০০০-এরও বেশি গান গেয়েছেন। ৫২ বছর বয়সে যাঁর জীবনাবসানতাঁর এই বিশাল সংগীতভাণ্ডারই আলাদা স্বীকৃতির যোগ্য। কিন্তু এ যুগে কয়েকটি হিট বা জনপ্রিয় সংখ্যার বাইরে মানুষের আগ্রহ কমে গেছে।

A man with orange sunglasses and a hat standing in a street in front of a crowd.

কিন্তু নব্বইয়ের দশকের আসামে তা ছিল না। আসামের বিভিন্ন জায়গায় বড় হওয়াশিল্পমনা পরিবারে জন্ম নেওয়া জুবিন স্কুল-কলেজের দিনগুলোতেও ভরসা রেখেছিলেন সংগীতের ওপর। ১৯৯২ সালে তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম অনামিকা’ প্রকাশের পর রাতারাতি তিনি তারকা হয়ে ওঠেন। সহস্রাব্দের সূচনায় এসে তিনি অধিকাংশ আসামবাসীর কাছে আইকনে পরিণত হন। তিনি সংগীত ও চলচ্চিত্র প্রযোজনা শুরু করেনতখন মৃতপ্রায় অসমীয়া সিনেমাকে নতুন প্রাণ দেন। প্রেমভক্তিবেদনাআরও নানান বিষয়ে তিনি গান গেয়েছেন।

নিজের গানে এক বিশেষ হামিং-এর ঢং তিনি জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। নীরবে হলেও নিশ্চিতভাবেজুবিন আসামকে দিয়েছিলেন এক নতুন কণ্ঠযেখানে বিদ্রোহ বা বিচ্ছিন্নতাবাদের বদলে স্থিতি ও আধুনিকতা এসেছেজাত-পাতের বদলে শিক্ষাদারিদ্র্যের বদলে আশার সঞ্চার হয়েছে। প্রতিটি পরিবর্তনের ছিল তাঁর একটি করে গানযা মানুষের মনে স্পর্শ করত এবং ধীরে ধীরে তাদের বদলে দিত। কিন্তু মানুষ যেমন দ্বন্দ্বে ভরাতেমনি ছিলেন জুবিনও।

Zubeen Garg dies at 52 Fans pay tribute to Assamese icons musical legacy - India Today

ভূপেন হাজরিকা ও খাগেন মহন্তদের প্রজন্ম যে পুরনো’ ধারাটি প্রতিনিধিত্ব করতসেই প্রজন্ম লম্বা চুলকর্তৃত্ব-বিরোধী ভঙ্গি আর বিপজ্জনকভাবে মুক্তচেতা এক তরুণকে সহজে আইডল হিসেবে মানতে পারেনি। আসলে তিনি তো প্রকাশ্যে কর্তৃপক্ষকে চ্যালেঞ্জ করেছেনঅনুষ্ঠানেও মদ্যপান করেছেনঅশালীন ভাষা ব্যবহার করেছেন। তবে কী বদলেছিলযা তাঁকে আইকনে পরিণত করলসবকিছুকেবল জুবিন বাদে। খ্যাতিঅর্থঅসীম সুযোগযা সবচেয়ে মহৎকেও দুর্নীতিগ্রস্ত করতে পারেসবই তাঁর দিকে এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু জুবিন একই রয়ে গিয়েছিলেন।

এতেই আসে দ্বিতীয় তথ্যযা আজ অনেককে বিস্মিত করছে এবং জুবিনকে নিয়ে কৌতূহলী করে তুলছে। তাঁর শেষযাত্রায় সব শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে সর্বজনীন শোক প্রকাশ করেছেন। অনেকে ২০১১ সালে ভূপেন হাজরিকার শেষযাত্রার সঙ্গে তুলনা টেনেছেন। তবে বিষয়টি ভিড়ের আকার নয়শোকের গভীরতা ও আবেগের উচ্ছ্বাসই এখানে আলাদা করে ধরা পড়েছে।

আসামের লাখো মানুষের কাছে জুবিন-উত্তর’ পৃথিবী ভাবাই দুষ্কর। তাঁর মৃত্যুর পর আসামে একটি বিশেষ সামাজিক-সাংস্কৃতিক ঘটনাপ্রবাহ উন্মোচিত হচ্ছেযা গড়ে উঠছে তিনটি শক্তির সমবায়ে: আসামের মানুষরাজ্য সরকার এবং শিল্পীর নিজস্ব উত্তরাধিকার।

How Singer Zubeen Garg Got His Name

আসামের মানুষ তাঁর অকালপ্রয়াণে স্তব্ধ। যদি জুবিন তাঁর জীবনকে পূর্ণতা পর্যন্ত বাঁচতে পারতেনহয়তো আজকের এই বিরাট তরঙ্গটি এত প্রকট হতো না। মানুষের মাটিভাষাসংস্কৃতি ও পরিচয়ের সঙ্গে জড়ানো আবেগের শক্তি তিনি পৃথিবীকে দেখিয়েছেন। তাঁর বিখ্যাত পঙ্‌ক্তি—“আমার কোনো জাত নেইকোনো ধর্ম নেইআমি আগে মানুষ”—কথাটির যেন চাক্ষুষ প্রতিচ্ছবি দেখা গেলযখন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ঢল নামিয়ে একসঙ্গে কেঁদে উঠলেন। গণ-শোকের শক্তি গভীরএটি সমাজ বদলে দিতে পারে। আসাম সরকার বিষয়টি বুঝেছিল এবং তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে সেই আবেগকে মর্যাদা দিয়েছে। সবাই অন্তর্ভুক্ত বলে অনুভব করেছেনবোঝা হয়েছে বলে মনে করেছেন। তাঁরা ধাক্কাটা সামলানোর সময় পেয়েছেন এবং জুবিন-উত্তর’ পৃথিবী নিয়ে একসঙ্গে ভাবারকল্পনা করার অবকাশ পেয়েছেন।

কালাগুরু বিষ্ণুপ্রসাদ রাভারূপকোঁৱৰ জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা ও ভূপেন হাজরিকাএই বিংশ শতকের সাংস্কৃতিক মহীরূহদের পরজুবিনের মধ্য দিয়ে আসাম নতুন এক পরিচয় খুঁজে পেয়েছে। পথের মানুষের কাছে যেমন তিনি প্রিয় ছিলেনতেমনি অভিজাত অঙ্গনেও। বলিউডে ক্যারিয়ারের শিখরে থেকেও তিনি আসামে ফিরে এসেছিলেনকারণ তাঁর বিশ্বাস ছিল—“রাজাকে নিজের রাজ্য ছেড়ে যাওয়া উচিত নয়।” উলফার হুমকি সত্ত্বেও তিনি বিহু উৎসবে হিন্দি গান গেয়েছেন। আজ সেই উলফাই তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।

Remembering Zubeen Garg, the Ya Ali singer and Assam cultural icon who lives on - India Today

আজ আসাম নিজেকেই কিছুটা হারিয়েছে। তবু আগের চেয়ে হয়তো আরও পরিপূর্ণকারণ এই গায়কের উত্তরাধিকার তাঁর জীবনের সহজ যোগফলের চেয়েও বৃহৎ। তাঁর গানগুলো নতুন অর্থ পাবেনতুন শ্রোতা খুঁজে নেবেমানুষ তাঁর ভেতরের নানাদিক আবিষ্কার করবে। তাঁর কাজের পরিধিব্যাপ্তি ও বৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণা হবেযা শিল্প-সংস্কৃতি থেকে সমাজতত্ত্বমনোবিজ্ঞানএমনকি রাজনীতিতেও সঞ্চারিত হবে। প্রতি বছর তাঁর জীবন ও কাজকে ঘিরে আয়োজন হবে। কে জানেমরণোত্তর আরও কত সম্মান-স্বীকৃতি তিনি পেতে পারেন। কিন্তু জুবিন দা’—সম্ভবত তিনি এসবের তোয়াক্কা করতেন না।

লেখক: শ্রাবণা বড়ুয়াসহযোগী অধ্যাপক ও পরিচালকএনকেসিসিইএএসজিন্দাল স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স। এখানে ব্যক্ত মতামত একান্তই তাঁর নিজের।