দুর্গাপূজা ঘিরে প্রতিবছর রাজধানী থেকে শুরু করে জেলা শহরের বাজারগুলো থাকে জমজমাট। নতুন পোশাক, শাড়ি, অলঙ্কার আর নানা রকম সাজসজ্জার পণ্য কেনার জন্য ভিড় পড়ে যায় নামি-দামি দোকানে। কিন্তু এ বছর সেই চিত্র নেই। রাজধানীর বেইলি রোড, শাড়ি পাড়া, আডং কিংবা সোপুরা সিল্ক—সব জায়গায়ই দোকানদাররা বসে আছেন ক্রেতার আশায়, অথচ ভিড় নেই বললেই চলে।
বাজার ঘুরে দেখা গেল
গত সপ্তাহে রাজধানীর বেইলি রোড ঘুরে দেখা যায়, শাড়ির দোকানগুলোতে গ্রাহক সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে কম। একসময় যেখানে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ভিড়ে হাঁটাচলা করা মুশকিল হয়ে যেত, সেখানে এখন দোকানগুলো প্রায় ফাঁকা। একই চিত্র মৌচাক মার্কেটের মতো মধ্যবিত্তের নির্ভরশীল বাজারেও।
মিরপুরের বাসিন্দা গৃহিণী মধুমিতা দাস জানালেন, “আগে পূজার আগে অন্তত দুই-তিনটা শাড়ি কিনতাম। এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এত বেড়েছে যে শাড়ির জন্য আলাদা টাকা রাখা সম্ভব হয়নি।”

দোকানদারদের হতাশা
বেইলি রোডের এক শাড়ির দোকানদার হতাশ গলায় বললেন, “পূজার আগে এমন অবস্থা কোনোদিন দেখিনি। আগে যেখানে দিনে লাখ টাকার বেশি বিক্রি হতো, এ বছর দিনে ২০-২৫ হাজার টাকাও উঠছে না।”
আড়ং-এর এক কর্মকর্তা বলেন, “মধ্যবিত্ত ক্রেতারাই আমাদের প্রধান ভরসা। কিন্তু তাদের আয় কমে যাওয়ায় বিক্রি অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে।”
মানসিক ও অর্থনৈতিক কারণ
ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু অর্থনৈতিক টানাপোড়েনই নয়, গত এক বছরের সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা তাদের মনে ছায়া ফেলেছে। আনন্দের উৎসবকে ঘিরে যে প্রফুল্লতা থাকা দরকার, তা খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকে।

পলাশী বাজারে দেখা মিলল এক চাকরিজীবী অরিন্দম সাহার। তিনি বললেন, “আমার চাকরি চলে গেছে তিন মাস আগে। এখন সংসার চালানোই কষ্টকর। পূজার বাজার করা একেবারেই সম্ভব নয়।”
জেলা শহরেও একই চিত্র
শুধু রাজধানী নয়, জেলা শহরগুলোর পূজাবাজারও মন্দা। কুমিল্লা, যশোর ও রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। তারা বলছেন, এমন পরিস্থিতি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়বে।
দুর্গাপূজা সাধারণত আনন্দ, কেনাকাটা আর মিলনমেলার উৎসব হলেও এ বছর অর্থনৈতিক সংকট, চাকরি হারানো আর মানসিক অবসাদে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ কেনাকাটার আগ্রহ হারিয়েছেন। ফলে বাজারেও পড়েছে সেই আঁচ। দোকানদাররা আশঙ্কা করছেন, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নত না হলে পূজার উচ্ছ্বাস আর বাজারের রঙিন চিত্র হয়তো আর ফিরবে না।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















