প্রাণের কথা খুলিয়া প্রজারা শান্তিলাভ করিয়াছিল, যাঁহার ন্যায়ানুমোদিত। অনুসন্ধানে প্রজাদিগের তাপদগ্ধহৃদয়ে কিঞ্চিৎ সুবিচারের আশা হইয়াছিল,. এক্ষণে সেই প্যাটারসনকে সামান্য অপরাধীর ন্যায় সাক্ষ্য সংগ্রহে উপস্থিত হইতে দেখিয়া, তাহারা ভীত ও হতাশ হইয়া পড়িল। এক সময়ে যিনি শাসনকর্তৃরূপে গমন করিয়াছিলেন, এক্ষণে তাঁহার দুর্দশা দেখিয়া প্রজাগণ ভীত হইয়া, তাঁহার পক্ষে সাক্ষ্য দিতেও সাহস করিতে পারিল না।
তাহার পর হেষ্টিংস সাহেব কতিপয় অল্পদিনের নিযুক্ত কর্মচারীকে কমিশনার নিযুক্ত করিয়া, প্যাটারসনের অপরাধের তদন্তের জন্য পাঠাইলেন। যিনি এক সময়ে কমিশনার নিযুক্ত হইয়া, অনু-সন্ধানে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন, এক্ষণে আবার তাঁহার উপর কমিশনার নিযুক্ত হইল! কমিশনারগণ রঙ্গপুরে গমন করিয়া, অনেক দিন মুখ-বন্ধেই কাটাইলেন। তাহার পর তাঁহারা পরামর্শ করিয়া, দেবীসিংহকে লিখিয়া পাঠাইলেন, “তুমি তোমার উকীল না পাঠাইলে, অনুসন্ধানের সুবিধা হইবে না।” দেবীসিংহ উকীল পাঠাইতে অস্বীকার করিলেন।
কমিশনারগণ তাহাতে আপনাদিগের কর্তব্য পালন না করিয়া দেবী ‘সিংহকে স্বয়ং উপস্থিত হইতে আদেশ পাঠাইলেন। দেবীসিংহ তাহাই ইচ্ছা করিতেছিলেন। তিনি এইরূপ মনে করিয়াছিলেন যে, রঙ্গপুরে উপ-স্থিত হইতে পারিলে, নিজের সমস্ত ঘটনা অন্ধকারাবৃত করিতে পারিবেন। তাঁহার সে আশা পূর্ণ হইল! দেবীসিংহ কলিকাতায় যেরূপভাবে থাকিতেন, রঙ্গপুরেও সেইরূপ-ভাবে উপস্থিত হইলেন।
পূর্ব্বে যে সকল প্রহরীদ্বারা বেষ্টিত হইয়া, তিনি রঙ্গপুর হইতে কলিকাতায় গমন করিয়াছিলেন, এক্ষণে তাহারা তাঁহার সম্মানের অঙ্গ হইয়া তাঁহার সহিত পুনর্ব্বার রঙ্গপুরে আসিল। রঙ্গপুরের লোকেরা দেবী সিংহকে আবার দেশের শাসনকর্তার ন্যায় আসিতে দেখিয়া, নিতান্ত ক্ষুব্ধ ও শঙ্কিত হইল। প্যাটারসন দেবীসিংহকে ঐরূপভাবে থাকিতে দেখিয়া এবং প্রজাদিগের মনে ভীতির সঞ্চার বুঝিতে পারিয়া, কলিকাতা কাউন্সিলে লিখিয়া পাঠাইলেন। কাউন্সিলের সভ্যগণ বিষম সমস্যায় পড়িলেন।