তাঁহারা একেবারে দেবীসিংহকে বিনা প্রহরীতে রাখা সঙ্গত মনে করিলেন না, অথচ অপরাধীর ন্যায় প্রহরী নিযুক্ত করিলেও সাধারণ লোকে তাঁহার অবমাননা করা হইয়াছে মনে করিবে; এই সমস্যার সিদ্ধান্তের জন্য তাঁহারা মধ্যপথ অবলম্বন করিলেন। তাঁহারা দেবী সিংহকে প্রহরিবেষ্টিত হইয়া থাকিতে আদেশ দিলেন বটে, কিন্তু তাহাদের বন্দুক ও বেয়নেট নিম্নাভিমুখে রাখিবার আজ্ঞা প্রদান করিয়া পাঠাইলেন।
তাহার পর কমিশনারগণ প্যাটারসনকে আপনাদের নিকট হইতে দূরে থাকিতে অনুরোধ করিলেন; কিন্তু দেবীসিংহকে সর্ব্বদা আপনাদিগের মধ্যে রাখিয়া অনুসন্ধান চালাইতে লাগিলেন। এই অনু- সন্ধানের ফলে যাহা হইবার তাহাই হইল। দেবীসিংহ দেওয়ানী আদালতে অভিযুক্ত না হইয়া, ফৌজদারী বিচারালয়ে সমর্পিত হইলেন।এই সময়ে মহম্মদ রেজা খাঁ ফৌজদারী আদালতের বিচারক ছিলেন। তাঁহারই প্রতি দেবীসিংহের বিচারের ভার পতিত হয়।
মহম্মদ রেজা-খাঁর সহিত দেবীসিংহের কিরূপ বাধ্যবাধকতা ছিল, তাহা পূর্ব্বে উল্লিখিত। হইয়াছে; পুতরাং তাঁহার বিচারে দেবীসিংহ অপরাধমুক্ত হইয়া নিষ্কৃতি পাইলেন। কোম্পানীর রাজত্বে লোকে সুবিচার দেখিয়া অবাক হইল। নরহস্ত। পরস্বাপহারক শয়তান মুক্তি পাইল। ন্যায় ও ধৰ্ম্ম মলিনমুখে বঙ্গভূমি হইতে চিরবিদায় গ্রহণ করিলেন! উক্ত কমিশনের ফলে দেবী সিংহ নিষ্কৃতি পাইলেন বটে, কিন্তু তাঁহার দেওয়ান হররাম একেবারে নিষ্কৃতি পায় নাই। ‘তাহার প্রতি এক বৎসরের কারাবাসের দণ্ডাজ্ঞা দিয়া, রঙ্গপুর ও দিনাজপুর প্রদেশ হইতে তাহাকে বহিষ্কৃত করা হয়।
কমিশনারদের তদন্তে কতকগুলি নিরীহ প্রজাও’ বিদ্রোহী হইয়াছিল বলিয়া নির্ব্বাসিত হয়। দেবীসিংহ ও হররাম যে সমস্ত জমিদারী নীলাম করাইয়া আপনারা কিনিয়া লইয়াছিলেন, তৎসমুদায়ের কতক কতক প্রত্যর্পণ করা হয়। হররাম যাহাদিগকে শারীরিক যন্ত্রণা দিয়া অর্থ আদায় করিয়াছিল, তাহাদিগকে কিছু কিছু অর্থ প্রদান করা হয়।’ দশশালা বন্দোবস্তের সময় আরও অনেক রহস্য প্রকাশিত হইয়া পড়ে। দশশালা বন্দোবস্তের বিবরণে দেখা যায় যে, দেবীসিংহের দেওয়ান (সম্ভবতঃ হররাম) টেপার চৌধুরাণীদের বাটীতে স্ত্রী-পদাতিক পাঠাইয়া বলপূর্ব্বক রাজস্ব বৃদ্ধি করিয়া লয়।