এইরূপ অনেক অত্যাচার প্রকাশ পাইয়াছিল। দেবীসিংহ যেরূপ লোমহর্ষণ অত্যাচার করিয়াছিলেন, তাহাতে তাঁহার কিছুমাত্র দণ্ড হয় নাই। তিনি যে অপরিমিত সম্পত্তি উপার্জন করিয়াছিলেন, দরিদ্র প্রজাদিগের সর্ব্বস্ব অপহরণ করিয়া যে পুঞ্জীকৃত অর্থরাশিতে আপনার ভাণ্ডার পূর্ণ করিয়াছিলেন, তাহারই। কিছু কিছু ব্যয় হইয়াছিল মাত্র।
কোম্পানীর কর্মচারীদিগকে বশীভূত করিবার জন্য তাঁহাকে কিঞ্চিন্মাত্র অর্থ ব্যয় করিতে হয় বটে, তথাপি অবশিষ্ট যে সমস্ত সম্পত্তি ছিল, তাহাতেই তিনি তৎকালে সম্পত্তিশালী লোকদিগের মধ্যে গণনীয় হইয়া অবশেষে রাজোপাধিতে ভূষিত হন। কোম্পানীর বিচারে তিনি মুক্তিলাভ করিয়াছিলেন বটে, কিন্তু যাঁহার সর্ব্বদর্শী চক্ষুর সমক্ষে একটি সামান্য তৃণও উপেক্ষিত হয় না, তাঁহার বিচারে যে. তিনি অব্যাহতি পান নাই, তাহা মুক্তকণ্ঠে বলিতে পারা যায়। যৎকালে দেবীসিংহের বিচার শেষ হয়, তাহার পূর্ব্ব হইতে লর্ড কর্ণ-ওয়ালিসের রাজত্ব আরম্ভ হইয়াছিল।
ওয়ারেন হেষ্টিংস ইংলণ্ড যাত্রা করিয়াছিলেন। দেবীসিংহ নিষ্কৃতি পাইয়া, কোম্পানীর আর কোন কার্য্যে নিযুক্ত হন নাই; অন্ততঃ কর্ণওয়ালিসের সময় তাঁহার সে আশাও ছিল না। তিনি যে বিপুল অর্থ ও জমিদারী প্রভৃতি হস্তগত করিয়া-ছিলেন, তাহাতেই তাঁহার শেষ জীবন অতিবাহিত হয়। মুর্শিদা-বাদের নশীপুর তাঁহার বাসস্থান ছিল; তথায় তিনি জীবনের শেষ ভাগ যাপন করেন। ১৮০৫ খৃঃ অব্দে তাঁহার মৃত্যু হয়।
অদ্যাপি তাঁহার বংশধরগণ নশীপুরে অবস্থিতি করিতেছেন। দেবীসিংহের দুই পত্নী ছিলেন; জ্যেষ্ঠার নাম মন্নু কিশোরী ও কনিষ্ঠার নাম কৃষ্ণা। উভয়েই নিঃসন্তান হওয়ায়, দেবীসিংহ স্বীয় কনিষ্ঠ ভ্রাতা বাহাদুর সিংহের দ্বিতীয় পুত্র বলবন্ত সিংহকে দত্তক পুত্র গ্রহণ করেন। বলবন্ত সিংহের পুত্র গোপাল সিংহ হইতে দেবীসিংহের বংশ-ধারা অনন্ত কালসাগরে মিশিয়া যায়।