এই মালয় ক্যাম্পেনসহ সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষা যুদ্ধে ৬৭,০০০ (সাতষট্টি হাজার)-এর অধিক ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছিলেন।
স্বয়ং প্রফেসর করিম নিয়মিতভাবে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের খবরাদি সংগ্রহ করে রাখতেন। ভারতবর্ষে তখন সদ্য রেডিও-র প্রচলন হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা দাবি করল যে ছাত্রাবাসের স্টুডেন্ট হলে একটি রেডিও বসাতে হবে।
ঢাকার কুর্মিটোলা হেডকোয়ার্টার। সৌজন্যে: ইউএস ন্যাশনাল আর্কাইভস
এই মহাযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ঢাকার ছাত্রাবাসের ছাত্রদেরকে যুদ্ধ সংক্রান্ত খবরাদির জন্য প্রধানত সংবাদপত্রগুলোর উপর নির্ভর করতে হতো এবং এগুলো আবার প্রকাশিত হতো কোলকাতায়। এসব সংবাদপত্র ঢাকায় পৌঁছুতে বারো ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যেতো। কারণ, কোলকাতা থেকে ট্রেন যোগে প্রথমে আসত গোয়ালন্দে, গোয়ালন্দ থেকে লঞ্চ যোগে নারায়ণগঞ্জে, সবশেষে ট্রেন যোগে ঢাকায়। অর্থাৎ বিকালের আগে সংবাদপত্র পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা ছিল না।
এশিয়া ফ্রন্টে, ১৯৪২ সাল ছিল অ্যাংলো-আমেরিকান মিত্রবাহিনীর জন্য অত্যন্ত সংকটপূর্ণ বছর- এশিয়া মহাদেশের বিশাল এলাকা তখন জাপানের অধীনে, অপরদিকে মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, বার্মা ও সিঙ্গাপুরে অ্যাংলো-আমেরিকান মিত্রবাহিনীর অবমাননাকর পরাজয় ঘটে।
১৯৪২ সালের ১৪ জানুয়ারি জাপান ব্রিটিশরাজের বার্মা প্রদেশ আক্রমণ করে। জাপানের কাছে সিঙ্গাপুর আত্মসমর্পণ করে এবং সেই সঙ্গে, ১৯৪২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জাপানের কাছে ৬৪,০০০ (চৌষট্টি হাজার) ব্রিটিশ, ভারতীয় ও অস্ট্রেলিয়ান সেনাও আত্মসমর্পণ করেন। এই মালয় ক্যাম্পেনসহ সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষা যুদ্ধে ৬৭,০০০ (সাতষট্টি হাজার)-এর অধিক ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছিলেন।
২৭ ফেব্রুয়ারি জাপান বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ আক্রমণ করে। এটি ছিল ব্রিটিশ ভারতের বিরুদ্ধে জাপানের প্রথম আক্রমণ। ২৩ মার্চ জাপানিরা আন্দামান দখল করে নেয়।
১৯৪২ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে জাপানের বিমানবাহী নৌবহর এবং সাবমেরিনগুলো আক্ষরিক অর্থেই বঙ্গোপসাগরের জলরাশিতে কর্তৃত্ব ও পূর্ণ আধিপত্য নিশ্চিত করে, বঙ্গোপসাগরের জলরাশিতে মুক্ত বিচরণ এবং ইচ্ছামতো যেকোনো জাহাজ ডুবিয়ে দিতে থাকে।
(চলবে)