ভারতে সুইস ওয়াইন ও চকলেট আরও সস্তা হতে চলেছে, কারণ বুধবার থেকে চারটি ইউরোপীয় দেশের সঙ্গে করা একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তি কার্যকর হয়েছে।
ভারত ২০২৪ সালের মার্চে ইউরোপীয় ফ্রি ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন (ইএফটিএ)-এর সঙ্গে ট্রেড অ্যান্ড ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (টেপা) স্বাক্ষর করে। এই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো হলো সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, আইসল্যান্ড এবং লিচেনস্টাইন।
চুক্তির অধীনে ভারত এসব দেশ থেকে আমদানি হওয়া ৮০–৮৫ শতাংশ পণ্যের ওপর শুল্ক শূন্যে নামিয়ে আনবে। অপরদিকে ভারতীয় রপ্তানিকারকেরা ইএফটিএ বাজারে ৯৯ শতাংশ পণ্য শুল্কমুক্তভাবে পাঠাতে পারবেন।
চুক্তির অংশ হিসেবে আগামী ১৫ বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ ও ১০ লাখ প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।
এটি ভারতের প্রথম বাণিজ্য চুক্তি, যেখানে বাজারে প্রবেশাধিকার সরাসরি বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতির সঙ্গে যুক্ত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ভারতের কৌশলগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। শুধু শুল্ক কমানো নয়, বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিও এখন থেকে চুক্তির অংশ হচ্ছে।
ভারতের জন্য সুইস চকলেট ও ওয়াইন সস্তা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে ইএফটিএ দেশগুলো আগামী পাঁচ থেকে ১০ বছরে ওষুধ, রং, টেক্সটাইল এবং লোহাইস্পাতের মতো পণ্যের ওপর ভারতের শূন্য শুল্ক সুবিধা পাবে।
গত বছর ইএফটিএ দেশগুলো থেকে ভারতের আমদানি ছিল ৩২.৪ বিলিয়ন ডলার, যার বেশিরভাগই এসেছিল সুইজারল্যান্ড থেকে। এর মধ্যে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলারের আমদানি ছিল সোনা। তবে এই চুক্তির অধীনে সোনার শুল্ক অপরিবর্তিত থাকবে।
অন্যদিকে, ভারতের ইএফটিএ দেশগুলোতে রপ্তানি ছিল মাত্র ২ বিলিয়ন ডলার, যার ৯৮ শতাংশই ছিল শিল্পপণ্য। কিন্তু এসব শিল্পপণ্য আগে থেকেই শূন্য শুল্কে প্রবেশ করছিল। ফলে ভারত এখানে অতিরিক্ত কোনো সুবিধা পাবে না বলে জানিয়েছেন দিল্লিভিত্তিক থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের (জিটিআরআই) অজয় শ্রীবাস্তব।
তিনি বলেন, “যদি কোনো লাভ হয়ও, সেটা শুল্ক হ্রাসের কারণে নয়, বরং ভাবমূর্তি গঠনের কারণে হতে পারে। কারণ এটি ভারতের ইউরোপের সঙ্গে প্রথম বাণিজ্য চুক্তি।” তার মতে, এর মাধ্যমে বিশ্বকে বার্তা দেওয়া হবে যে “ভারত উদারীকরণের পথে অগ্রসর হতে আগ্রহী।”
চুক্তিটি কার্যকর হলো এমন সময়ে যখন যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা চলছে।
ভারত একই সঙ্গে আরও কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে, যাতে মার্কিন শুল্কের প্রভাব সামলানো যায়।
গত জুলাইয়ে ভারত যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষর করেছে, যা ২০২৬ সালের মধ্যে কার্যকর হবে। এছাড়া ভারত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও এফটিএ আলোচনার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
বর্তমানে প্রায় ৬,০০০ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোম্পানি ভারতে কার্যক্রম চালাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্লক ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার, যেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩৫ বিলিয়ন ডলারে, যা গত এক দশকে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।