১২:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
টেনিস মরসুমের দীর্ঘ ক্লান্তি ও শীর্ষ খেলোয়াড়দের অবসন্ন অবস্থা ২১০০ সালে বছরে ৫৭টি অতিরিক্ত ‘সুপারহট’ দিন—সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ছোট দেশগুলো কর্মস্থলে হয়রানির শিকারদের মধ্যে ৩৫% নিরব থাকে, ভয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয় না এআই সংগীতে বড় জোট: স্পটিফাই–সনি–ইউনিভার্সাল–ওয়ার্নারের নতুন পরীক্ষামূলক প্ল্যাটফর্ম আমেরিকার গণপরিবহনে ‘ভয়’-ই বড় বাধা—সমাধান পরিষ্কার: নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা, পরিচ্ছন্নতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৩৯) তিন দফা দাবিতে অনড় আন্দোলন—আমরণ অনশনের ঘোষণা দিলেন শিক্ষকরা চার দিন পর সামান্য ঘুরে দাঁড়াল ডিএসই, সিএসই-তে পতন অব্যাহত চীনকে পেছনে ফেলে বিশ্বের তৃতীয় শক্তিশালী বিমানবাহিনী ভারতের: নিউজউইক ভারতের ত্রিপুরায় তিন বাংলাদেশীকে গরু চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা

ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির মুখে ওষুধ কোম্পানিগুলো: দামে ছাড় দিতে বাধ্য ফাইজার

ট্রাম্পের চাপ এবং শুল্ক হুমকি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে ওষুধ কোম্পানিগুলোর ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছেন। উদ্দেশ্য হলো ওষুধের দাম কমানো এবং উৎপাদন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনা। আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ায় এ বছরের শুরুর দিকে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন শিল্প-সংশ্লিষ্ট লবিস্ট ও নির্বাহীরা।

ফাইজারের চুক্তি

মঙ্গলবার ফাইজার প্রথম কোম্পানি হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে চুক্তি করে। তারা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য মেডিকেডে ওষুধের দাম কমাবে এবং নতুন ওষুধেও ছাড় দেবে। এর বিনিময়ে শুল্ক থেকে ছাড় পাবে প্রতিষ্ঠানটি। চুক্তির পর ফাইজারের শেয়ারমূল্য বেড়ে যায়, একই সঙ্গে ইউরোপ ও আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোর শেয়ারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

ফাইজারের সিইও আলবার্ট বুরলা জানিয়েছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ৭০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবেন এবং দেশে বিক্রি হওয়া ওষুধের উৎপাদন দেশে ফের আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

Trump's latest 100 percent tariff on pharmaceuticals: What we know | Donald Trump News | Al Jazeera

আলোচনায় ভাটা ও নতুন শুল্ক

ট্রাম্প গত জুলাইয়ে শীর্ষ ১৭টি ওষুধ কোম্পানিকে দাম কমানোর জন্য ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন। কিন্তু আলোচনা অচলাবস্থায় পড়ায় তিনি গত সপ্তাহে ঘোষণা দেন যে, ১ অক্টোবর থেকে ব্র্যান্ডেড ওষুধ আমদানিতে ১০০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে। তবে যারা ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা নির্মাণ করছে, তারা এই শুল্ক থেকে ছাড় পাবে।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট আমেরিকানদের জন্য ওষুধের দাম কমাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং প্রয়োজনে শুল্ক আরোপ করবেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও প্রস্তুতি শুরু করেছে।

দ্রুত ছাড় আদায়ের চেষ্টা

সরকার চায় দ্রুত এমন চুক্তি, যা শিরোনাম হওয়ার মতো বড় সিদ্ধান্ত দেখাতে পারে। কিন্তু স্বাস্থ্যব্যবস্থার কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া হঠাৎ বড় অঙ্কের ছাড় দেওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন শিল্প নির্বাহীরা। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যব্যবস্থা বেসরকারি নির্ভর, যেখানে সরকারের পক্ষ থেকে নাগরিকদের জন্য এককভাবে দাম নিয়ে দরকষাকষি হয় না। ফলে আমেরিকানরা সাধারণত অন্যান্য ধনী দেশের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি দাম পরিশোধ করে।

Illustration shows U.S. dollar banknotes and medicines

ফাইজারের ছাড়ের প্রভাব

শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফাইজারের ছাড় আসলে কতটা প্রভাব ফেলবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। অন্য কোম্পানিগুলোকে শর্ত মেনে চলতে হবে কি না, সে বিষয়েও প্রশ্ন রয়ে গেছে।

জনসন অ্যান্ড জনসন, রোশ এবং সানোফির মতো কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে শত শত বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এতে ট্রাম্প রাজনৈতিক সুবিধা পাচ্ছেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে এসব বিনিয়োগ পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল।

সরাসরি ভোক্তার কাছে বিক্রি

কিছু কোম্পানি ওষুধ সরাসরি ভোক্তাদের কাছে বিক্রির নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে। জুলাইয়ে ব্রিস্টল-মায়ার্স ও ফাইজার ঘোষণা করে, তারা তাদের জনপ্রিয় ব্লাড থিনার ‘এলিকুইস’ সরাসরি রোগীদের কাছে দেবে। এতে তালিকাভুক্ত মূল্যের তুলনায় ৪৩ শতাংশ ছাড় থাকবে। সম্প্রতি অ্যাস্ট্রাজেনেকা-ও তাদের ডায়াবেটিস ও হাঁপানির ওষুধের ক্ষেত্রে একই ধরনের পরিকল্পনা জানিয়েছে।

Indian Drug-Makers Expect Minimal Hit To Generics, May Plan Change In Business Strategy Amid Trump Tariff Risks | India News - News18

আন্তর্জাতিক প্রভাব ও সমালোচনা

কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র ওষুধের দাম কমাতে চাপ সৃষ্টি করলে এবং অন্য দেশগুলোকে বেশি দাম দিতে বাধ্য করলে উল্টো যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে দাম বেড়ে যেতে পারে। কারণ এতে বিদেশি বাজার সরে যেতে পারে।

আরএ (RA) ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের পার্টনার পিটার কোলচিনস্কি বলেছেন, কোম্পানিগুলোকে সর্বত্র একই দাম নিতে বাধ্য করলে শেষ পর্যন্ত আমেরিকানরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ককে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ওষুধ শিল্পকে দাম কমাতে ও দেশে বিনিয়োগে চাপ দিচ্ছে। ফাইজারের সঙ্গে চুক্তি এই প্রক্রিয়ার প্রথম বড় পদক্ষেপ, তবে শিল্প বিশেষজ্ঞরা মনে করেন দীর্ঘমেয়াদে কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া টেকসই সমাধান সম্ভব নয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

টেনিস মরসুমের দীর্ঘ ক্লান্তি ও শীর্ষ খেলোয়াড়দের অবসন্ন অবস্থা

ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির মুখে ওষুধ কোম্পানিগুলো: দামে ছাড় দিতে বাধ্য ফাইজার

০৪:৪৪:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫

ট্রাম্পের চাপ এবং শুল্ক হুমকি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে ওষুধ কোম্পানিগুলোর ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছেন। উদ্দেশ্য হলো ওষুধের দাম কমানো এবং উৎপাদন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনা। আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ায় এ বছরের শুরুর দিকে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন শিল্প-সংশ্লিষ্ট লবিস্ট ও নির্বাহীরা।

ফাইজারের চুক্তি

মঙ্গলবার ফাইজার প্রথম কোম্পানি হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে চুক্তি করে। তারা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য মেডিকেডে ওষুধের দাম কমাবে এবং নতুন ওষুধেও ছাড় দেবে। এর বিনিময়ে শুল্ক থেকে ছাড় পাবে প্রতিষ্ঠানটি। চুক্তির পর ফাইজারের শেয়ারমূল্য বেড়ে যায়, একই সঙ্গে ইউরোপ ও আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোর শেয়ারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

ফাইজারের সিইও আলবার্ট বুরলা জানিয়েছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ৭০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবেন এবং দেশে বিক্রি হওয়া ওষুধের উৎপাদন দেশে ফের আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

Trump's latest 100 percent tariff on pharmaceuticals: What we know | Donald Trump News | Al Jazeera

আলোচনায় ভাটা ও নতুন শুল্ক

ট্রাম্প গত জুলাইয়ে শীর্ষ ১৭টি ওষুধ কোম্পানিকে দাম কমানোর জন্য ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন। কিন্তু আলোচনা অচলাবস্থায় পড়ায় তিনি গত সপ্তাহে ঘোষণা দেন যে, ১ অক্টোবর থেকে ব্র্যান্ডেড ওষুধ আমদানিতে ১০০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে। তবে যারা ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা নির্মাণ করছে, তারা এই শুল্ক থেকে ছাড় পাবে।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট আমেরিকানদের জন্য ওষুধের দাম কমাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং প্রয়োজনে শুল্ক আরোপ করবেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও প্রস্তুতি শুরু করেছে।

দ্রুত ছাড় আদায়ের চেষ্টা

সরকার চায় দ্রুত এমন চুক্তি, যা শিরোনাম হওয়ার মতো বড় সিদ্ধান্ত দেখাতে পারে। কিন্তু স্বাস্থ্যব্যবস্থার কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া হঠাৎ বড় অঙ্কের ছাড় দেওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন শিল্প নির্বাহীরা। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যব্যবস্থা বেসরকারি নির্ভর, যেখানে সরকারের পক্ষ থেকে নাগরিকদের জন্য এককভাবে দাম নিয়ে দরকষাকষি হয় না। ফলে আমেরিকানরা সাধারণত অন্যান্য ধনী দেশের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি দাম পরিশোধ করে।

Illustration shows U.S. dollar banknotes and medicines

ফাইজারের ছাড়ের প্রভাব

শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফাইজারের ছাড় আসলে কতটা প্রভাব ফেলবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। অন্য কোম্পানিগুলোকে শর্ত মেনে চলতে হবে কি না, সে বিষয়েও প্রশ্ন রয়ে গেছে।

জনসন অ্যান্ড জনসন, রোশ এবং সানোফির মতো কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে শত শত বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এতে ট্রাম্প রাজনৈতিক সুবিধা পাচ্ছেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে এসব বিনিয়োগ পরিকল্পনা আগে থেকেই ছিল।

সরাসরি ভোক্তার কাছে বিক্রি

কিছু কোম্পানি ওষুধ সরাসরি ভোক্তাদের কাছে বিক্রির নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে। জুলাইয়ে ব্রিস্টল-মায়ার্স ও ফাইজার ঘোষণা করে, তারা তাদের জনপ্রিয় ব্লাড থিনার ‘এলিকুইস’ সরাসরি রোগীদের কাছে দেবে। এতে তালিকাভুক্ত মূল্যের তুলনায় ৪৩ শতাংশ ছাড় থাকবে। সম্প্রতি অ্যাস্ট্রাজেনেকা-ও তাদের ডায়াবেটিস ও হাঁপানির ওষুধের ক্ষেত্রে একই ধরনের পরিকল্পনা জানিয়েছে।

Indian Drug-Makers Expect Minimal Hit To Generics, May Plan Change In Business Strategy Amid Trump Tariff Risks | India News - News18

আন্তর্জাতিক প্রভাব ও সমালোচনা

কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র ওষুধের দাম কমাতে চাপ সৃষ্টি করলে এবং অন্য দেশগুলোকে বেশি দাম দিতে বাধ্য করলে উল্টো যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে দাম বেড়ে যেতে পারে। কারণ এতে বিদেশি বাজার সরে যেতে পারে।

আরএ (RA) ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের পার্টনার পিটার কোলচিনস্কি বলেছেন, কোম্পানিগুলোকে সর্বত্র একই দাম নিতে বাধ্য করলে শেষ পর্যন্ত আমেরিকানরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ককে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ওষুধ শিল্পকে দাম কমাতে ও দেশে বিনিয়োগে চাপ দিচ্ছে। ফাইজারের সঙ্গে চুক্তি এই প্রক্রিয়ার প্রথম বড় পদক্ষেপ, তবে শিল্প বিশেষজ্ঞরা মনে করেন দীর্ঘমেয়াদে কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া টেকসই সমাধান সম্ভব নয়।