১১:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
২১০০ সালে বছরে ৫৭টি অতিরিক্ত ‘সুপারহট’ দিন—সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ছোট দেশগুলো কর্মস্থলে হয়রানির শিকারদের মধ্যে ৩৫% নিরব থাকে, ভয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয় না এআই সংগীতে বড় জোট: স্পটিফাই–সনি–ইউনিভার্সাল–ওয়ার্নারের নতুন পরীক্ষামূলক প্ল্যাটফর্ম আমেরিকার গণপরিবহনে ‘ভয়’-ই বড় বাধা—সমাধান পরিষ্কার: নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা, পরিচ্ছন্নতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৩৯) তিন দফা দাবিতে অনড় আন্দোলন—আমরণ অনশনের ঘোষণা দিলেন শিক্ষকরা চার দিন পর সামান্য ঘুরে দাঁড়াল ডিএসই, সিএসই-তে পতন অব্যাহত চীনকে পেছনে ফেলে বিশ্বের তৃতীয় শক্তিশালী বিমানবাহিনী ভারতের: নিউজউইক ভারতের ত্রিপুরায় তিন বাংলাদেশীকে গরু চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা দক্ষিণ এশিয়ার প্রাণঘাতী শঙ্খিনী সাপ ( ব্যান্ডেড ক্রাইট): রঙিন সৌন্দর্যের আড়ালে লুকানো মারাত্মক বিষ

ন্যাটোর আকাশসীমায় রাশিয়ার অনুপ্রবেশ: ১০ বছর আগে তুরস্কের ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্তের প্রতিধ্বনি

গত মাসে রাশিয়ার একের পর এক ন্যাটো আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ মিত্র দেশগুলিকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে তুরস্কের ২০১৫ সালের দ্রুত এবং মারাত্মক পদক্ষেপের কথা। সে সময় তুরস্ক দক্ষিণ সীমান্তে প্রবেশ করা একটি রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছিল।

লিথুয়ানিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী দোভিলে সাকালিয়েনে সামাজিক মাধ্যমে বলেছেন, “তুরস্ক ১০ বছর আগে ন্যাটোর জন্য একটি উদাহরণ তৈরি করেছিল।” তিনি আজকের রুশ হুমকির মুখে আরও শক্ত অবস্থানের আহ্বান জানিয়েছেন।

২০১৫ সালের ঘটনা: যুদ্ধবিমান ভূপাতিত

২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর, সিরিয়া সীমান্তের কাছে তুরস্কের একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান রাশিয়ার সু-২৪ বিমান ভূপাতিত করে। জ্বলন্ত বিমানের দৃশ্য বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ন্যাটো ও রাশিয়ার মধ্যে এটাই ছিল প্রথম এমন সামরিক মুখোমুখি।

তুরস্ক জানায়, বারবার সতর্ক করার পর নিয়মিত নীতি অনুযায়ী তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছিল। রাশিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে এবং তৎক্ষণাৎ কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত করে। বাণিজ্য ও পর্যটন খাতে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়, যা তুরস্কের অর্থনীতিকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

ন্যাটো জরুরি বৈঠক ডেকে তুরস্কের ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি সংহতি জানালেও উত্তেজনা প্রশমনের দিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। ফলে তুরস্ক নিজেকে কিছুটা একা মনে করে, বিশেষত যখন সিরিয়া যুদ্ধে আঙ্কারা ও মস্কো বিপরীত পক্ষকে সমর্থন দিচ্ছিল।

A policeman stands guard in front of the Turkish embassy during a protest in reaction after a Russian war plane was shot down by Turkey, in Moscow

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব

রাশিয়ার অবরোধে তুরস্ক বড় ধাক্কা খায়। পরে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা করতে গিয়ে তুরস্ককে রাশিয়ার কাছে ক্ষমা চাইতে হয়।

ঘটনার পর তুরস্ক প্রথমে ন্যাটোর সহায়তা খুঁজলেও ব্যয়বহুল হওয়ায় মার্কিন ‘প্যাট্রিয়ট মিসাইল’ কেনেনি। পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থান ও মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ার ফলে তুরস্ক রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কেনে। এর কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান প্রকল্প থেকে তুরস্ককে বাদ দেওয়া হয়।

তবুও প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও ভ্লাদিমির পুতিন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। তুরস্ক পশ্চিমাদের রাশিয়া-বিরোধী নিষেধাজ্ঞায় যোগ দেয়নি বরং রাশিয়া-ইউক্রেন আলোচনার আয়োজক হয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতি: ন্যাটোর কঠোর প্রতিক্রিয়া

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখন চতুর্থ বছরে। ইউরোপের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অস্থির হয়ে উঠেছে এবং সম্প্রতি ন্যাটো দেশগুলির দিকে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।

  • • ১০ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ডের আকাশে রুশ ড্রোন প্রবেশ করলে সেটি ভূপাতিত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক এটিকে “বড় ধরনের উসকানি” হিসেবে বর্ণনা করেন।

Editorial: with NATO, or without?

  • • ১৯ সেপ্টেম্বর এস্তোনিয়ার আকাশসীমা ১২ মিনিট লঙ্ঘন করে রুশ সামরিক বিমান।
  • • ডেনমার্ক ও নরওয়ে বারবার ড্রোন দেখা যাওয়ার পর সাময়িকভাবে আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়।

রাশিয়া অবশ্য hostile উদ্দেশ্যের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

তবে এসব ঘটনার জেরে ন্যাটো দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। এখন ন্যাটোর যুদ্ধবিমান কয়েক মিনিটের মধ্যেই আকাশে উড়ছে এবং সদস্যরা প্রতিষ্ঠাতা চুক্তির অনুচ্ছেদ ৪ অনুযায়ী রাজনৈতিক পরামর্শ বৈঠক করছে।

তুলনামূলক বিশ্লেষণ

২০১৫ সালে তুরস্কের মতো মারাত্মক পদক্ষেপ, অর্থাৎ একটি রুশ চালক-সহ বিমান ভূপাতিত করার পথে এখনো ন্যাটো হাঁটেনি। কারণ প্রেসিডেন্ট পুতিন সতর্ক করেছেন, এমন কোনো পদক্ষেপ বিপজ্জনক মাত্রার সংঘাতে রূপ নিতে পারে।

তবে এবারের পার্থক্য হলো, ন্যাটো একক কণ্ঠে এবং বেশি প্রস্তুতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে, যা তুরস্কের আগের অভিজ্ঞতার তুলনায় অনেক বেশি শক্ত অবস্থানকে প্রতিফলিত করে।

জনপ্রিয় সংবাদ

২১০০ সালে বছরে ৫৭টি অতিরিক্ত ‘সুপারহট’ দিন—সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ছোট দেশগুলো

ন্যাটোর আকাশসীমায় রাশিয়ার অনুপ্রবেশ: ১০ বছর আগে তুরস্কের ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্তের প্রতিধ্বনি

০৪:৫৩:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫

গত মাসে রাশিয়ার একের পর এক ন্যাটো আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ মিত্র দেশগুলিকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে তুরস্কের ২০১৫ সালের দ্রুত এবং মারাত্মক পদক্ষেপের কথা। সে সময় তুরস্ক দক্ষিণ সীমান্তে প্রবেশ করা একটি রুশ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছিল।

লিথুয়ানিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী দোভিলে সাকালিয়েনে সামাজিক মাধ্যমে বলেছেন, “তুরস্ক ১০ বছর আগে ন্যাটোর জন্য একটি উদাহরণ তৈরি করেছিল।” তিনি আজকের রুশ হুমকির মুখে আরও শক্ত অবস্থানের আহ্বান জানিয়েছেন।

২০১৫ সালের ঘটনা: যুদ্ধবিমান ভূপাতিত

২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর, সিরিয়া সীমান্তের কাছে তুরস্কের একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান রাশিয়ার সু-২৪ বিমান ভূপাতিত করে। জ্বলন্ত বিমানের দৃশ্য বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ন্যাটো ও রাশিয়ার মধ্যে এটাই ছিল প্রথম এমন সামরিক মুখোমুখি।

তুরস্ক জানায়, বারবার সতর্ক করার পর নিয়মিত নীতি অনুযায়ী তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছিল। রাশিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে এবং তৎক্ষণাৎ কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত করে। বাণিজ্য ও পর্যটন খাতে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়, যা তুরস্কের অর্থনীতিকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

ন্যাটো জরুরি বৈঠক ডেকে তুরস্কের ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি সংহতি জানালেও উত্তেজনা প্রশমনের দিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। ফলে তুরস্ক নিজেকে কিছুটা একা মনে করে, বিশেষত যখন সিরিয়া যুদ্ধে আঙ্কারা ও মস্কো বিপরীত পক্ষকে সমর্থন দিচ্ছিল।

A policeman stands guard in front of the Turkish embassy during a protest in reaction after a Russian war plane was shot down by Turkey, in Moscow

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব

রাশিয়ার অবরোধে তুরস্ক বড় ধাক্কা খায়। পরে সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা করতে গিয়ে তুরস্ককে রাশিয়ার কাছে ক্ষমা চাইতে হয়।

ঘটনার পর তুরস্ক প্রথমে ন্যাটোর সহায়তা খুঁজলেও ব্যয়বহুল হওয়ায় মার্কিন ‘প্যাট্রিয়ট মিসাইল’ কেনেনি। পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থান ও মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ার ফলে তুরস্ক রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কেনে। এর কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান প্রকল্প থেকে তুরস্ককে বাদ দেওয়া হয়।

তবুও প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও ভ্লাদিমির পুতিন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। তুরস্ক পশ্চিমাদের রাশিয়া-বিরোধী নিষেধাজ্ঞায় যোগ দেয়নি বরং রাশিয়া-ইউক্রেন আলোচনার আয়োজক হয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতি: ন্যাটোর কঠোর প্রতিক্রিয়া

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখন চতুর্থ বছরে। ইউরোপের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অস্থির হয়ে উঠেছে এবং সম্প্রতি ন্যাটো দেশগুলির দিকে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।

  • • ১০ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ডের আকাশে রুশ ড্রোন প্রবেশ করলে সেটি ভূপাতিত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক এটিকে “বড় ধরনের উসকানি” হিসেবে বর্ণনা করেন।

Editorial: with NATO, or without?

  • • ১৯ সেপ্টেম্বর এস্তোনিয়ার আকাশসীমা ১২ মিনিট লঙ্ঘন করে রুশ সামরিক বিমান।
  • • ডেনমার্ক ও নরওয়ে বারবার ড্রোন দেখা যাওয়ার পর সাময়িকভাবে আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়।

রাশিয়া অবশ্য hostile উদ্দেশ্যের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

তবে এসব ঘটনার জেরে ন্যাটো দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। এখন ন্যাটোর যুদ্ধবিমান কয়েক মিনিটের মধ্যেই আকাশে উড়ছে এবং সদস্যরা প্রতিষ্ঠাতা চুক্তির অনুচ্ছেদ ৪ অনুযায়ী রাজনৈতিক পরামর্শ বৈঠক করছে।

তুলনামূলক বিশ্লেষণ

২০১৫ সালে তুরস্কের মতো মারাত্মক পদক্ষেপ, অর্থাৎ একটি রুশ চালক-সহ বিমান ভূপাতিত করার পথে এখনো ন্যাটো হাঁটেনি। কারণ প্রেসিডেন্ট পুতিন সতর্ক করেছেন, এমন কোনো পদক্ষেপ বিপজ্জনক মাত্রার সংঘাতে রূপ নিতে পারে।

তবে এবারের পার্থক্য হলো, ন্যাটো একক কণ্ঠে এবং বেশি প্রস্তুতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে, যা তুরস্কের আগের অভিজ্ঞতার তুলনায় অনেক বেশি শক্ত অবস্থানকে প্রতিফলিত করে।