০৫:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

ইসরায়েলি বুলডোজার পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের আশাকে ছিন্নভিন্ন করছে

সারসংক্ষেপ

  • • ইসরায়েল নতুন বাইপাস সড়ক নির্মাণ করছে, ফিলিস্তিনি গ্রামগুলোকে বিচ্ছিন্ন করছে
  • • নতুন সড়কগুলোকে ভূমি দখলের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে
  • • পরিকল্পনাটি দুই-রাষ্ট্র সমাধানকে হুমকির মুখে ফেলছে
  • • নেতানিয়াহুর ঘোষণা: ‘কখনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হবে না’

ফিলিস্তিনি গ্রাম ঘিরে সড়ক নির্মাণ

পশ্চিম তীরে রামাল্লাহর কাছে বেইত উর আল-ফৌকা গ্রামে আশরাফ সামারা দেখলেন, ভারী সশস্ত্র প্রহরায় থাকা ইসরায়েলি বুলডোজারগুলো নতুন সড়ক তৈরি করছে। এই সড়কগুলো ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের জন্য তৈরি হলেও ফিলিস্তিনিদের চলাচলের পথ আরও কঠিন করে তুলছে।

সামারা, যিনি গ্রামের কাউন্সিল সদস্য, বললেন, এই কাজের উদ্দেশ্য হচ্ছে স্থানীয়দের জমি ব্যবহারে বাধা দেওয়া। তাঁর মতে, এটি গ্রামগুলোকে আটকে ফেলার পরিকল্পনা, যাতে তারা নিজেদের এলাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকে।

Israeli bulldozers in West Bank carve up hopes for Palestinian state | Reuters

চলাচলে নতুন বাধা

প্রতিটি নতুন বাইপাস সড়ক ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের যাতায়াত সহজ করলেও ফিলিস্তিনিদের জন্য বাধা বাড়াচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিরা এই সড়ক ব্যবহার করতে পারেন না। এর ফলে তাদের কর্মস্থল, শহর বা কৃষিজমিতে পৌঁছানো আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

ইউরোপীয় স্বীকৃতি বনাম বসতি সম্প্রসারণ

সেপ্টেম্বরে ব্রিটেন ও ফ্রান্সসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিলেও বাস্তবে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ দ্রুততর হয়েছে। গাজা যুদ্ধ চলাকালে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার এর গতি বাড়িয়েছে।

আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে অধিকাংশ দেশ ও ফিলিস্তিনিরা এসব বসতিকে অবৈধ মনে করে, যদিও ইসরায়েল তা অস্বীকার করে।

ভূমি দখলের কৌশল

শান্তি-সমর্থক ইসরায়েলি সংগঠন ‘পিস নাউ’-এর সদস্য হাগিত ওফরান বললেন, এসব নতুন সড়ক হচ্ছে ভূমি দখলের উপায়। তিনি জানান, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাসের আক্রমণের পর থেকে ইসরায়েল পশ্চিম তীরে সড়ক নির্মাণে সাত বিলিয়ন শেকেল (প্রায় ২.১১ বিলিয়ন ডলার) বরাদ্দ দিয়েছে।

Israeli bulldozers in West Bank crush Palestinian state hopes

ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর পশ্চিম তীর দখল করে এবং তারপর থেকেই বসতি গড়ে তুলতে থাকে। বছরের পর বছর ধরে ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণে থাকা সড়ক ও অবকাঠামো নেটওয়ার্ক বসতিগুলোকে গভীরভাবে যুক্ত করেছে।

মানবাধিকার সংগঠন বি’তসেলেম ২০০৪ সালে তাদের প্রতিবেদনে একে বলেছিল “ইসরায়েলের বৈষম্যমূলক সড়ক ব্যবস্থা”। সংগঠনটির মতে, এসব সড়ক ফিলিস্তিনিদের শহর বিকাশ থামাতেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

নেতানিয়াহুর অবস্থান

ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা ঘোষণার আগেই নেতানিয়াহু বলেছিলেন, “কখনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হবে না।” গত মাসে তিনি পশ্চিম তীরের মা’লে আদুমিম বসতি থেকে জেরুজালেম পর্যন্ত নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেন। তাঁর অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচও দাবি করেন, এই প্রকল্প ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণাকে “কবর দেবে।”

Israeli Bulldozers Destroy Palestinian Structures in West Bank village

ট্রাম্পের পরিকল্পনা ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যে পরিকল্পনা দিয়েছেন, তাতে একটি সম্ভাব্য ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের পথনকশা রয়েছে। তবে এর শর্তগুলো এত কঠিন যে বিশ্লেষকদের মতে এর বাস্তবায়ন অনিশ্চিত।

ওফরান বলেন, সরকার বর্তমানে এমন অবকাঠামো তৈরি করছে যা ভবিষ্যতে এক মিলিয়ন বসতি স্থাপনকারীকে পশ্চিম তীরে আনতে সক্ষম হবে। তাঁর মতে, “সড়ক ছাড়া তারা কিছুই করতে পারবে না। কিন্তু একবার সড়ক হলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই বসতি স্থাপনকারীরা সেখানে চলে আসবে।”

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসরায়েলি বুলডোজার পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের আশাকে ছিন্নভিন্ন করছে

০৫:১৩:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫

সারসংক্ষেপ

  • • ইসরায়েল নতুন বাইপাস সড়ক নির্মাণ করছে, ফিলিস্তিনি গ্রামগুলোকে বিচ্ছিন্ন করছে
  • • নতুন সড়কগুলোকে ভূমি দখলের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে
  • • পরিকল্পনাটি দুই-রাষ্ট্র সমাধানকে হুমকির মুখে ফেলছে
  • • নেতানিয়াহুর ঘোষণা: ‘কখনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হবে না’

ফিলিস্তিনি গ্রাম ঘিরে সড়ক নির্মাণ

পশ্চিম তীরে রামাল্লাহর কাছে বেইত উর আল-ফৌকা গ্রামে আশরাফ সামারা দেখলেন, ভারী সশস্ত্র প্রহরায় থাকা ইসরায়েলি বুলডোজারগুলো নতুন সড়ক তৈরি করছে। এই সড়কগুলো ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের জন্য তৈরি হলেও ফিলিস্তিনিদের চলাচলের পথ আরও কঠিন করে তুলছে।

সামারা, যিনি গ্রামের কাউন্সিল সদস্য, বললেন, এই কাজের উদ্দেশ্য হচ্ছে স্থানীয়দের জমি ব্যবহারে বাধা দেওয়া। তাঁর মতে, এটি গ্রামগুলোকে আটকে ফেলার পরিকল্পনা, যাতে তারা নিজেদের এলাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকে।

Israeli bulldozers in West Bank carve up hopes for Palestinian state | Reuters

চলাচলে নতুন বাধা

প্রতিটি নতুন বাইপাস সড়ক ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের যাতায়াত সহজ করলেও ফিলিস্তিনিদের জন্য বাধা বাড়াচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিরা এই সড়ক ব্যবহার করতে পারেন না। এর ফলে তাদের কর্মস্থল, শহর বা কৃষিজমিতে পৌঁছানো আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

ইউরোপীয় স্বীকৃতি বনাম বসতি সম্প্রসারণ

সেপ্টেম্বরে ব্রিটেন ও ফ্রান্সসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিলেও বাস্তবে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ দ্রুততর হয়েছে। গাজা যুদ্ধ চলাকালে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার এর গতি বাড়িয়েছে।

আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে অধিকাংশ দেশ ও ফিলিস্তিনিরা এসব বসতিকে অবৈধ মনে করে, যদিও ইসরায়েল তা অস্বীকার করে।

ভূমি দখলের কৌশল

শান্তি-সমর্থক ইসরায়েলি সংগঠন ‘পিস নাউ’-এর সদস্য হাগিত ওফরান বললেন, এসব নতুন সড়ক হচ্ছে ভূমি দখলের উপায়। তিনি জানান, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হামাসের আক্রমণের পর থেকে ইসরায়েল পশ্চিম তীরে সড়ক নির্মাণে সাত বিলিয়ন শেকেল (প্রায় ২.১১ বিলিয়ন ডলার) বরাদ্দ দিয়েছে।

Israeli bulldozers in West Bank crush Palestinian state hopes

ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর পশ্চিম তীর দখল করে এবং তারপর থেকেই বসতি গড়ে তুলতে থাকে। বছরের পর বছর ধরে ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণে থাকা সড়ক ও অবকাঠামো নেটওয়ার্ক বসতিগুলোকে গভীরভাবে যুক্ত করেছে।

মানবাধিকার সংগঠন বি’তসেলেম ২০০৪ সালে তাদের প্রতিবেদনে একে বলেছিল “ইসরায়েলের বৈষম্যমূলক সড়ক ব্যবস্থা”। সংগঠনটির মতে, এসব সড়ক ফিলিস্তিনিদের শহর বিকাশ থামাতেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

নেতানিয়াহুর অবস্থান

ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা ঘোষণার আগেই নেতানিয়াহু বলেছিলেন, “কখনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হবে না।” গত মাসে তিনি পশ্চিম তীরের মা’লে আদুমিম বসতি থেকে জেরুজালেম পর্যন্ত নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেন। তাঁর অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচও দাবি করেন, এই প্রকল্প ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ধারণাকে “কবর দেবে।”

Israeli Bulldozers Destroy Palestinian Structures in West Bank village

ট্রাম্পের পরিকল্পনা ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যে পরিকল্পনা দিয়েছেন, তাতে একটি সম্ভাব্য ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের পথনকশা রয়েছে। তবে এর শর্তগুলো এত কঠিন যে বিশ্লেষকদের মতে এর বাস্তবায়ন অনিশ্চিত।

ওফরান বলেন, সরকার বর্তমানে এমন অবকাঠামো তৈরি করছে যা ভবিষ্যতে এক মিলিয়ন বসতি স্থাপনকারীকে পশ্চিম তীরে আনতে সক্ষম হবে। তাঁর মতে, “সড়ক ছাড়া তারা কিছুই করতে পারবে না। কিন্তু একবার সড়ক হলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই বসতি স্থাপনকারীরা সেখানে চলে আসবে।”