০৬:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

আফগানিস্তানে দুই দিন পর ইন্টারনেট চালু

ব্ল্যাকআউট শেষে স্বস্তি

আফগানিস্তানে দুই দিন ইন্টারনেট ও টেলিকম পরিষেবা বন্ধ রাখার পর আবার সংযোগ ফিরে আসায় দেশজুড়ে মানুষ আনন্দ প্রকাশ করেছে। তালেবান সরকারের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা ডেকে এনেছিল।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ধীরে ধীরে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হচ্ছে। ইন্টারনেট পর্যবেক্ষণ সংস্থা নেটব্লকস জানিয়েছে, আংশিকভাবে সংযোগ পুনরায় চালু হয়েছে। তালেবান সরকারের একটি সূত্র বিবিসিকে নিশ্চিত করেছে, প্রধানমন্ত্রী সরাসরি নির্দেশ দিয়ে ইন্টারনেট চালু করেছেন।

৪৮ ঘণ্টার অচলাবস্থা

দুই দিনের এই ব্ল্যাকআউটে ব্যবসা-বাণিজ্য, ফ্লাইট এবং জরুরি সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। নারী ও শিশুদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল।

বুধবার সন্ধ্যায় কাবুলের রাস্তায় মানুষ নেমে আসেন ইন্টারনেট ফিরে আসার খবর ছড়িয়ে দিতে। এক বাসিন্দা বলেন, “সবাই ফোন হাতে নিয়ে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলছে। নারী, পুরুষ এমনকি তালেবান সদস্যরাও ফোনে কথা বলছে। শহরে এখন ভিড় বেড়েছে।”

UN urges Taliban to restore internet as Afghanistan goes dark

তালেবানদের বক্তব্য ও সীমাবদ্ধতা

কাতারে তালেবান মুখপাত্র সুহাইল শাহীন জানান, বুধবার বিকেল নাগাদ “সব ধরনের যোগাযোগ” পুনরায় চালু হয়েছে। তবে সরকার কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেয়নি কেন সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছিল।

গত মাসে উত্তর প্রদেশ বালখের গভর্নরের মুখপাত্র বলেছিলেন, “অসৎ কার্যকলাপ রোধের জন্য” ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছে।

২০২১ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে তালেবান কঠোর শরিয়া আইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী বিভিন্ন বিধিনিষেধ জারি করেছে। ১২ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ বন্ধ, নারীদের চাকরির ক্ষেত্র সীমিত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নারী লেখকদের লেখা বই সরিয়ে নেওয়া তারই অংশ।

মানবিক সংকটের শঙ্কা

জাতিসংঘ বলেছে, সোমবার থেকে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আফগানিস্তান কার্যত বাইরের বিশ্বের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। এতে অর্থনীতি অস্থিতিশীল হওয়ার ঝুঁকি ছিল এবং চলমান মানবিক সংকট আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারত।

কাবুলে ব্যাংক ও বিপণি কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়, অর্থবাজারে বিদেশ থেকে অর্থ প্রেরণ থেমে যায়। এতে বিদেশে থাকা আত্মীয়রা স্বজনদের কাছে টাকা পাঠাতে পারেননি। ভ্রমণ সংস্থাগুলো আংশিক খোলা থাকলেও ফ্লাইট বাতিল হয়ে যায়।

An Afghan man fans grilled chicken at his market stall in Kabul, Afghanistan after an internet shutdown was lifted

এক দোকানদার বলেন, “এটা ধীরে ধীরে মৃত্যুর মতো। কোনো আশা নেই। অগ্রগতির সুযোগ নেই। বাক স্বাধীনতা নেই। সন্তানের ভবিষ্যতের আশাবাদ নেই। ব্যবসায় স্থিতিশীলতা নেই। পড়াশোনা থেকেও কোনো লাভ নেই।”

সংযোগ ফিরে আসায় উল্লাস

তবে বুধবার সংযোগ ফিরে আসার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ও আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। ডেলিভারি কর্মী সোহারাব আহমাদি বলেন, “এটা যেন ঈদুল আজহার আনন্দ, যেন নামাজে যাওয়ার প্রস্তুতি। আমাদের মন থেকে আনন্দ উপচে পড়ছে।”

২৪ বছর বয়সী মাহ, যিনি ২০২১ সালে আফগানিস্তান ছেড়ে যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা শুরু করেছেন, জানান ইন্টারনেট ফিরে আসার পর তিনি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে কেঁদে ফেলেন। “আমার মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পেরে আমি কেঁদে ফেলি, আমি খুশি হয়েছিলাম। অন্তত তার কণ্ঠ শুনতে পারছি,” বলেন তিনি।

তবে মাহ যোগ করেন, “আফগানিস্তানে এখন কী হবে কেউ জানে না। কারণ কিছুই নিয়ন্ত্রণে নেই।”

জনপ্রিয় সংবাদ

আফগানিস্তানে দুই দিন পর ইন্টারনেট চালু

০৫:১৯:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫

ব্ল্যাকআউট শেষে স্বস্তি

আফগানিস্তানে দুই দিন ইন্টারনেট ও টেলিকম পরিষেবা বন্ধ রাখার পর আবার সংযোগ ফিরে আসায় দেশজুড়ে মানুষ আনন্দ প্রকাশ করেছে। তালেবান সরকারের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা ডেকে এনেছিল।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ধীরে ধীরে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হচ্ছে। ইন্টারনেট পর্যবেক্ষণ সংস্থা নেটব্লকস জানিয়েছে, আংশিকভাবে সংযোগ পুনরায় চালু হয়েছে। তালেবান সরকারের একটি সূত্র বিবিসিকে নিশ্চিত করেছে, প্রধানমন্ত্রী সরাসরি নির্দেশ দিয়ে ইন্টারনেট চালু করেছেন।

৪৮ ঘণ্টার অচলাবস্থা

দুই দিনের এই ব্ল্যাকআউটে ব্যবসা-বাণিজ্য, ফ্লাইট এবং জরুরি সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। নারী ও শিশুদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল।

বুধবার সন্ধ্যায় কাবুলের রাস্তায় মানুষ নেমে আসেন ইন্টারনেট ফিরে আসার খবর ছড়িয়ে দিতে। এক বাসিন্দা বলেন, “সবাই ফোন হাতে নিয়ে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলছে। নারী, পুরুষ এমনকি তালেবান সদস্যরাও ফোনে কথা বলছে। শহরে এখন ভিড় বেড়েছে।”

UN urges Taliban to restore internet as Afghanistan goes dark

তালেবানদের বক্তব্য ও সীমাবদ্ধতা

কাতারে তালেবান মুখপাত্র সুহাইল শাহীন জানান, বুধবার বিকেল নাগাদ “সব ধরনের যোগাযোগ” পুনরায় চালু হয়েছে। তবে সরকার কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেয়নি কেন সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছিল।

গত মাসে উত্তর প্রদেশ বালখের গভর্নরের মুখপাত্র বলেছিলেন, “অসৎ কার্যকলাপ রোধের জন্য” ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছে।

২০২১ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে তালেবান কঠোর শরিয়া আইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী বিভিন্ন বিধিনিষেধ জারি করেছে। ১২ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ বন্ধ, নারীদের চাকরির ক্ষেত্র সীমিত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নারী লেখকদের লেখা বই সরিয়ে নেওয়া তারই অংশ।

মানবিক সংকটের শঙ্কা

জাতিসংঘ বলেছে, সোমবার থেকে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আফগানিস্তান কার্যত বাইরের বিশ্বের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। এতে অর্থনীতি অস্থিতিশীল হওয়ার ঝুঁকি ছিল এবং চলমান মানবিক সংকট আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারত।

কাবুলে ব্যাংক ও বিপণি কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়, অর্থবাজারে বিদেশ থেকে অর্থ প্রেরণ থেমে যায়। এতে বিদেশে থাকা আত্মীয়রা স্বজনদের কাছে টাকা পাঠাতে পারেননি। ভ্রমণ সংস্থাগুলো আংশিক খোলা থাকলেও ফ্লাইট বাতিল হয়ে যায়।

An Afghan man fans grilled chicken at his market stall in Kabul, Afghanistan after an internet shutdown was lifted

এক দোকানদার বলেন, “এটা ধীরে ধীরে মৃত্যুর মতো। কোনো আশা নেই। অগ্রগতির সুযোগ নেই। বাক স্বাধীনতা নেই। সন্তানের ভবিষ্যতের আশাবাদ নেই। ব্যবসায় স্থিতিশীলতা নেই। পড়াশোনা থেকেও কোনো লাভ নেই।”

সংযোগ ফিরে আসায় উল্লাস

তবে বুধবার সংযোগ ফিরে আসার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ও আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। ডেলিভারি কর্মী সোহারাব আহমাদি বলেন, “এটা যেন ঈদুল আজহার আনন্দ, যেন নামাজে যাওয়ার প্রস্তুতি। আমাদের মন থেকে আনন্দ উপচে পড়ছে।”

২৪ বছর বয়সী মাহ, যিনি ২০২১ সালে আফগানিস্তান ছেড়ে যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা শুরু করেছেন, জানান ইন্টারনেট ফিরে আসার পর তিনি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে কেঁদে ফেলেন। “আমার মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পেরে আমি কেঁদে ফেলি, আমি খুশি হয়েছিলাম। অন্তত তার কণ্ঠ শুনতে পারছি,” বলেন তিনি।

তবে মাহ যোগ করেন, “আফগানিস্তানে এখন কী হবে কেউ জানে না। কারণ কিছুই নিয়ন্ত্রণে নেই।”