০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

মরক্কোতে তরুণদের বিক্ষোভ রণক্ষেত্রে পরিণত

মরক্কোতে তরুণদের বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। এতে অন্তত দুই জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছেন। বুধবার রাতে আগাদিরের কাছে লকলিয়া শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি স্থাপনায় হামলার সময় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অস্ত্র লুটের চেষ্টা ঠেকাতে গুলি চালাতে বাধ্য হয় নিরাপত্তা বাহিনী।

শুরুতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় সংস্কারের দাবিতে এই আন্দোলন হলেও এখন তা সহিংসতায় গড়িয়েছে।

আন্দোলনের উৎস ‘GenZ 212’

এই বিক্ষোভ শুরু হয় শনিবার থেকে। এর পেছনে রয়েছে ‘GenZ 212’ নামে এক ঢিলে-ঢালা যুবগোষ্ঠী। তারা টিকটক, ইনস্টাগ্রাম ও ডিসকর্ডের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আন্দোলনকে সংগঠিত করছে।

এ আন্দোলন এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার তরুণদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ থেকে অনুপ্রাণিত। মাত্র এক সপ্তাহে তাদের ডিসকর্ড সদস্য সংখ্যা ৩ হাজার থেকে বেড়ে ১ লাখ ৩০ হাজারে পৌঁছেছে।

Security forces prevent a protest demanding reforms in education and health from taking place in Rabat

নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতিক্রিয়া

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টিয়ার গ্যাস কাজে না আসায় ও নিরাপত্তা স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ ঠেকাতে অস্ত্র ব্যবহার করতে হয়। একই সঙ্গে একাধিক গাড়ি ও ভবনে আগুন ধরানো হয়। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন শহরে। শুধু সেদিনই ২৬৩ জন নিরাপত্তা সদস্য ও ২৩ জন সাধারণ মানুষ আহত হয়েছেন বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য।

শহরে শহরে সহিংসতা

রাবাতের কাছে সালেতে বুধবার রাতে যুবকেরা দোকান লুটপাট করে, ব্যাংকে আগুন দেয় ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। তাঞ্জিয়ের শহরেও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছোড়া হয়।

আগাদিরের আশপাশের ছোট শহরগুলোতে দ্বিতীয় রাতেও ভয়াবহ অস্থিরতা দেখা যায়। সিদি বিবি এলাকায় মুখোশধারী তরুণেরা ইউনিয়ন কার্যালয় জ্বালিয়ে দেয় ও প্রধান সড়ক অবরোধ করে। বিওগ্রা শহরে একটি ব্যাংক ভাঙচুর হয়, দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

মারাকেশেও সহিংস বিক্ষোভে একটি পুলিশ স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তারুদান্তে দোকানপাট ও গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় তরুণেরা।

Security forces prevent a protest demanding reforms in education and health from taking place in Rabat

শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভও ছিল

অন্যদিকে কাসাব্লাঙ্কা, ওজদা ও তাজা শহরে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে অংশগ্রহণকারীরা প্রধানমন্ত্রী আজিজ আখনুশের পদত্যাগ দাবি করেন এবং স্লোগান দেন— “জনগণ দুর্নীতির অবসান চায়।”

বেকারত্ব ও পটভূমি

জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্যমতে, মরক্কোতে সামগ্রিক বেকারত্বের হার ১২.৮ শতাংশ। যুবসমাজের মধ্যে এটি ৩৫.৮ শতাংশে পৌঁছেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকদের মধ্যেও বেকারত্ব প্রায় ১৯ শতাংশ।

এর আগে ২০১৬–১৭ সালে উত্তরাঞ্চলীয় রিফ এলাকায় যে সহিংস আন্দোলন হয়েছিল, তার পর এই বিক্ষোভ সবচেয়ে বড় সহিংসতায় পরিণত হয়েছে।

Security forces prevent a protest demanding reforms in education and health from taking place in Rabat

সরকারের অবস্থান

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আইনসিদ্ধ সীমার মধ্যে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অধিকার তারা স্বীকার করে। তবে উসকানি এড়িয়ে সংযমের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
অন্যদিকে ‘GenZ 212’ সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছে, তারা সহিংসতা সমর্থন করে না। তাদের সংঘাত নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে নয়, সরকারের সঙ্গে।

গ্রেপ্তার ও মামলা

এখন পর্যন্ত ৪০৯ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৯৩ জনকে আদালতে তোলা হবে। অধিকাংশকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হলেও তাদের বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও নিরাপত্তা বাহিনীকে আক্রমণের অভিযোগ আনা হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

মরক্কোতে তরুণদের বিক্ষোভ রণক্ষেত্রে পরিণত

০৬:১৭:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫

মরক্কোতে তরুণদের বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। এতে অন্তত দুই জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়েছেন। বুধবার রাতে আগাদিরের কাছে লকলিয়া শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি স্থাপনায় হামলার সময় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অস্ত্র লুটের চেষ্টা ঠেকাতে গুলি চালাতে বাধ্য হয় নিরাপত্তা বাহিনী।

শুরুতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় সংস্কারের দাবিতে এই আন্দোলন হলেও এখন তা সহিংসতায় গড়িয়েছে।

আন্দোলনের উৎস ‘GenZ 212’

এই বিক্ষোভ শুরু হয় শনিবার থেকে। এর পেছনে রয়েছে ‘GenZ 212’ নামে এক ঢিলে-ঢালা যুবগোষ্ঠী। তারা টিকটক, ইনস্টাগ্রাম ও ডিসকর্ডের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আন্দোলনকে সংগঠিত করছে।

এ আন্দোলন এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার তরুণদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ থেকে অনুপ্রাণিত। মাত্র এক সপ্তাহে তাদের ডিসকর্ড সদস্য সংখ্যা ৩ হাজার থেকে বেড়ে ১ লাখ ৩০ হাজারে পৌঁছেছে।

Security forces prevent a protest demanding reforms in education and health from taking place in Rabat

নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতিক্রিয়া

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টিয়ার গ্যাস কাজে না আসায় ও নিরাপত্তা স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ ঠেকাতে অস্ত্র ব্যবহার করতে হয়। একই সঙ্গে একাধিক গাড়ি ও ভবনে আগুন ধরানো হয়। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন শহরে। শুধু সেদিনই ২৬৩ জন নিরাপত্তা সদস্য ও ২৩ জন সাধারণ মানুষ আহত হয়েছেন বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য।

শহরে শহরে সহিংসতা

রাবাতের কাছে সালেতে বুধবার রাতে যুবকেরা দোকান লুটপাট করে, ব্যাংকে আগুন দেয় ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। তাঞ্জিয়ের শহরেও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছোড়া হয়।

আগাদিরের আশপাশের ছোট শহরগুলোতে দ্বিতীয় রাতেও ভয়াবহ অস্থিরতা দেখা যায়। সিদি বিবি এলাকায় মুখোশধারী তরুণেরা ইউনিয়ন কার্যালয় জ্বালিয়ে দেয় ও প্রধান সড়ক অবরোধ করে। বিওগ্রা শহরে একটি ব্যাংক ভাঙচুর হয়, দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

মারাকেশেও সহিংস বিক্ষোভে একটি পুলিশ স্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তারুদান্তে দোকানপাট ও গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় তরুণেরা।

Security forces prevent a protest demanding reforms in education and health from taking place in Rabat

শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভও ছিল

অন্যদিকে কাসাব্লাঙ্কা, ওজদা ও তাজা শহরে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে অংশগ্রহণকারীরা প্রধানমন্ত্রী আজিজ আখনুশের পদত্যাগ দাবি করেন এবং স্লোগান দেন— “জনগণ দুর্নীতির অবসান চায়।”

বেকারত্ব ও পটভূমি

জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্যমতে, মরক্কোতে সামগ্রিক বেকারত্বের হার ১২.৮ শতাংশ। যুবসমাজের মধ্যে এটি ৩৫.৮ শতাংশে পৌঁছেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকদের মধ্যেও বেকারত্ব প্রায় ১৯ শতাংশ।

এর আগে ২০১৬–১৭ সালে উত্তরাঞ্চলীয় রিফ এলাকায় যে সহিংস আন্দোলন হয়েছিল, তার পর এই বিক্ষোভ সবচেয়ে বড় সহিংসতায় পরিণত হয়েছে।

Security forces prevent a protest demanding reforms in education and health from taking place in Rabat

সরকারের অবস্থান

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আইনসিদ্ধ সীমার মধ্যে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অধিকার তারা স্বীকার করে। তবে উসকানি এড়িয়ে সংযমের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
অন্যদিকে ‘GenZ 212’ সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছে, তারা সহিংসতা সমর্থন করে না। তাদের সংঘাত নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে নয়, সরকারের সঙ্গে।

গ্রেপ্তার ও মামলা

এখন পর্যন্ত ৪০৯ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৯৩ জনকে আদালতে তোলা হবে। অধিকাংশকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হলেও তাদের বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও নিরাপত্তা বাহিনীকে আক্রমণের অভিযোগ আনা হয়েছে।