০৮:২৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
নাৎসি জার্মানি থেকে অবাধ্যের পাঠ স্যালাড পার্টির আয়োজন: সহজ, সৃজনশীল এবং ব্যয় সাশ্রয়ী উপায়ে অতিথিদের পরিবেশন টিভির পাঠ ইনস্টাগ্রামে: ‘পিজি-১৩’ ইন্টারনেটের স্বপ্ন ভাঙছে ‘থিয়েটার একটি অভিজাত শিল্প যা কেবল প্রিভিলেজড মানুষের জন্য’ ডায়ান কিটনের মৃত্যু: পরিবার জানাল নিউমোনিয়া, শিল্পজগতে শ্রদ্ধা হাজারো সান্নিধ্যের মাস্টার: জাপানের হট স্প্রিং কালচার: সারাক্ষণ রিপোর্ট কেভিন ফেডারলাইনের বই নিয়ে ব্রিটনির পাল্টা—‘আঘাতকর, ক্লান্তিকর’ প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩০৮) জাপানে সেলিব্রিটি ডিপফেক: প্রথম গ্রেপ্তার, নতুন নজির ফ্রেডি মর্কুরির অপ্রকাশিত গানের অগ্রণী খসড়া বইয়ে উন্মোচিত হবে সঙ্গীতজ্ঞের অসাধারণ মন

ভারতের অভ্যন্তরীণ শহরে জাপানি প্রবাসীদের জন্য হোটেল স্বর্গে পরিণত হয়েছে

শিল্প নগরীতে জাপানি আবাসনের উত্থান

গুজরাটের ভিথালাপুর শহরে জাপানি গাড়ি নির্মাতাদের কর্মীদের কারণে হোটেল ব্যবসা নতুন মাত্রা পেয়েছে। এখানে একসময় কৃষিজমি ছিল, কিন্তু এখন জাপানি প্রকৌশলী ও ব্যবস্থাপকদের জন্য হোটেলগুলোতে রামেন, টেম্পুরা ও সুশির আয়োজন চলছে।

বিদেশি বিনিয়োগ ও অটোমোবাইল শিল্পের প্রসার

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উৎপাদন খাত বৃদ্ধির নীতির কারণে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। প্রায় দশ বছর আগে হোন্ডা এখানে মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করে, আর আট বছর আগে সুজুকি গাড়ি কারখানা গড়ে তোলে, যা গত আগস্টে প্রথম ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরি শুরু করে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন জাপানি যন্ত্রাংশ ও ইলেকট্রনিক্স সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। সরকারি তথ্যে দেখা যায়, ২০২৫ সালের মার্চে শেষ হওয়া অর্থবছরে জাপান থেকে সরাসরি বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ২.৫ বিলিয়ন ডলার, যা চার বছরে ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি।

Japanese citizens sitting in the lobby of the AJU Imperial hotel in Vithalapur village

হোটেল শিল্পে নতুন রূপ

কারখানার কাছাকাছি মিজুকি রিয়োকান ও মিদোরিসহ কয়েকটি হোটেল এখন জাপানি কর্মীদের দীর্ঘমেয়াদি থাকার জায়গা। এমনকি আন্তর্জাতিক চেইন হায়াতও এ বছর একটি ১০৮ কক্ষের হোটেল খোলার পরিকল্পনা করছে। ভিথালাপুরে এখন একে একে গড়ে উঠছে ‘ওসাকা প্যালেস’ ও ‘এজেইউ ইম্পেরিয়াল’ এর মতো হোটেল, যেখানে অতিথিদের জন্য জাপানি ভাষায় সাইনেজ, অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা মাছ দিয়ে সুশি, আর টোটো ওয়াশলেট টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে।

সাংস্কৃতিক চ্যালেঞ্জ ও ধর্মীয় বিধিনিষেধ

গুজরাটে অনেকেই কঠোরভাবে নিরামিষ জীবনযাপন করেন। জৈন ও হিন্দু সংস্কৃতির কারণে মাংস বা সামুদ্রিক খাবার খাওয়া ভালো চোখে দেখা হয় না। এছাড়া, গুজরাট হলো ভারতের কয়েকটি রাজ্যের মধ্যে একটি যেখানে মদ বিক্রি নিষিদ্ধ। কেবল বিদেশিদের জন্য বিশেষ অনুমতিতে সীমিত পরিমাণে মদ কেনার সুযোগ আছে।

A menu with Japanese language is pictured on a counter at the AJU Imperial hotel in Vithalapur village

প্রবাসীদের অভিযোজন সমস্যা

প্রথমদিকে জাপানি কর্মীরা পাশের শহরে সাধারণ বাসায় থাকার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু মাংস ও মাছ সহজে না পাওয়ায় সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। ফলে এখন তারা হোটেলেই থাকেন। এজেইউ ইম্পেরিয়ালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকাশ যাদব বলেন, “আমরা চাই মানুষ যেন বাড়ির মতো পরিবেশ ও খাবার পান যাতে তারা কাজে মনোযোগ দিতে পারেন।” এই হোটেলে একই সময়ে প্রায় একশ প্রবাসী থাকেন।

মদ সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা

তবে গুজরাটে বিদেশিদের জন্য মদ সংগ্রহ জটিল। অনুমতি পেতে দীর্ঘ প্রক্রিয়া পেরোতে হয় এবং নিয়মিত নবায়ন করতে হয়। মাসে সীমিত পরিমাণ কেনার সুযোগ থাকে। প্রকাশ যাদব জানান, তিনি ২০১৯ সাল থেকে হোটেলে লাইসেন্সপ্রাপ্ত মদের দোকান খোলার অনুমতি পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। এর আগে পর্যন্ত অতিথিদের মাসিক মদের চাহিদা মেটাতে তিন ঘণ্টা দূরের আহমেদাবাদে যেতে হয়।

Two wall clocks displaying Indian and Japanese time zones hang along with a Japanese painting, inside Mizuki Ryokan hotel in Vithalapur village

ভিথালাপুরের হোটেলগুলো শুধু থাকার জায়গা নয়, বরং জাপানি প্রবাসীদের জন্য এক ধরনের নিরাপদ আশ্রয়, যেখানে তারা খাবার, সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রায় নিজেদের দেশের স্বাদ খুঁজে পান। তবে গুজরাটের কড়া মদ নিষেধাজ্ঞা তাদের জীবনে এখনো একটি বড় প্রতিবন্ধক রয়ে গেছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

নাৎসি জার্মানি থেকে অবাধ্যের পাঠ

ভারতের অভ্যন্তরীণ শহরে জাপানি প্রবাসীদের জন্য হোটেল স্বর্গে পরিণত হয়েছে

০৬:২৪:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫

শিল্প নগরীতে জাপানি আবাসনের উত্থান

গুজরাটের ভিথালাপুর শহরে জাপানি গাড়ি নির্মাতাদের কর্মীদের কারণে হোটেল ব্যবসা নতুন মাত্রা পেয়েছে। এখানে একসময় কৃষিজমি ছিল, কিন্তু এখন জাপানি প্রকৌশলী ও ব্যবস্থাপকদের জন্য হোটেলগুলোতে রামেন, টেম্পুরা ও সুশির আয়োজন চলছে।

বিদেশি বিনিয়োগ ও অটোমোবাইল শিল্পের প্রসার

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উৎপাদন খাত বৃদ্ধির নীতির কারণে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। প্রায় দশ বছর আগে হোন্ডা এখানে মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করে, আর আট বছর আগে সুজুকি গাড়ি কারখানা গড়ে তোলে, যা গত আগস্টে প্রথম ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরি শুরু করে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন জাপানি যন্ত্রাংশ ও ইলেকট্রনিক্স সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। সরকারি তথ্যে দেখা যায়, ২০২৫ সালের মার্চে শেষ হওয়া অর্থবছরে জাপান থেকে সরাসরি বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ২.৫ বিলিয়ন ডলার, যা চার বছরে ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি।

Japanese citizens sitting in the lobby of the AJU Imperial hotel in Vithalapur village

হোটেল শিল্পে নতুন রূপ

কারখানার কাছাকাছি মিজুকি রিয়োকান ও মিদোরিসহ কয়েকটি হোটেল এখন জাপানি কর্মীদের দীর্ঘমেয়াদি থাকার জায়গা। এমনকি আন্তর্জাতিক চেইন হায়াতও এ বছর একটি ১০৮ কক্ষের হোটেল খোলার পরিকল্পনা করছে। ভিথালাপুরে এখন একে একে গড়ে উঠছে ‘ওসাকা প্যালেস’ ও ‘এজেইউ ইম্পেরিয়াল’ এর মতো হোটেল, যেখানে অতিথিদের জন্য জাপানি ভাষায় সাইনেজ, অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা মাছ দিয়ে সুশি, আর টোটো ওয়াশলেট টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে।

সাংস্কৃতিক চ্যালেঞ্জ ও ধর্মীয় বিধিনিষেধ

গুজরাটে অনেকেই কঠোরভাবে নিরামিষ জীবনযাপন করেন। জৈন ও হিন্দু সংস্কৃতির কারণে মাংস বা সামুদ্রিক খাবার খাওয়া ভালো চোখে দেখা হয় না। এছাড়া, গুজরাট হলো ভারতের কয়েকটি রাজ্যের মধ্যে একটি যেখানে মদ বিক্রি নিষিদ্ধ। কেবল বিদেশিদের জন্য বিশেষ অনুমতিতে সীমিত পরিমাণে মদ কেনার সুযোগ আছে।

A menu with Japanese language is pictured on a counter at the AJU Imperial hotel in Vithalapur village

প্রবাসীদের অভিযোজন সমস্যা

প্রথমদিকে জাপানি কর্মীরা পাশের শহরে সাধারণ বাসায় থাকার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু মাংস ও মাছ সহজে না পাওয়ায় সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। ফলে এখন তারা হোটেলেই থাকেন। এজেইউ ইম্পেরিয়ালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকাশ যাদব বলেন, “আমরা চাই মানুষ যেন বাড়ির মতো পরিবেশ ও খাবার পান যাতে তারা কাজে মনোযোগ দিতে পারেন।” এই হোটেলে একই সময়ে প্রায় একশ প্রবাসী থাকেন।

মদ সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা

তবে গুজরাটে বিদেশিদের জন্য মদ সংগ্রহ জটিল। অনুমতি পেতে দীর্ঘ প্রক্রিয়া পেরোতে হয় এবং নিয়মিত নবায়ন করতে হয়। মাসে সীমিত পরিমাণ কেনার সুযোগ থাকে। প্রকাশ যাদব জানান, তিনি ২০১৯ সাল থেকে হোটেলে লাইসেন্সপ্রাপ্ত মদের দোকান খোলার অনুমতি পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। এর আগে পর্যন্ত অতিথিদের মাসিক মদের চাহিদা মেটাতে তিন ঘণ্টা দূরের আহমেদাবাদে যেতে হয়।

Two wall clocks displaying Indian and Japanese time zones hang along with a Japanese painting, inside Mizuki Ryokan hotel in Vithalapur village

ভিথালাপুরের হোটেলগুলো শুধু থাকার জায়গা নয়, বরং জাপানি প্রবাসীদের জন্য এক ধরনের নিরাপদ আশ্রয়, যেখানে তারা খাবার, সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রায় নিজেদের দেশের স্বাদ খুঁজে পান। তবে গুজরাটের কড়া মদ নিষেধাজ্ঞা তাদের জীবনে এখনো একটি বড় প্রতিবন্ধক রয়ে গেছে।