পাকিস্তানকে ভণ্ডামির অভিযোগ
জাতিসংঘে পাকিস্তানকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেছে ভারত। ভারতের কূটনীতিক মোহাম্মদ হুসেইন জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের (UNHRC) বৈঠকে বলেন, মানবাধিকার নিয়ে অন্যকে নীতি শেখানোর আগে পাকিস্তানকে নিজের ভেতরে সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন মোকাবিলা করা উচিত। তিনি মন্তব্য করেন, পাকিস্তানের ভণ্ডামি ও প্রচারণা মানবাধিকার ইস্যুকে আরও দুর্বল করে তুলছে।
এই বক্তব্যের প্রেক্ষাপট ছিল পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে বিমান হামলায় অন্তত ২৩ বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনা। হুসেইন জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তান বারবার মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, অথচ অন্য দেশের সমালোচনায় ব্যস্ত।
আন্তর্জাতিকভাবে পাকিস্তানের মানবাধিকার চিত্র
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরাও পাকিস্তানের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গবেষক জশ বোওস উল্লেখ করেন, ২০২৫ সালের মার্কিন USCIRF ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে ব্লাসফেমি মামলায় ৭০০-এর বেশি মানুষ কারাবন্দি রয়েছে—যা আগের বছরের তুলনায় ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি।
তিনি আরও জানান, বেলুচ ন্যাশনাল মুভমেন্টের মানবাধিকার শাখা ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে ৭৮৫টি গুম এবং ১২১টি হত্যার ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। একই সময়ে পশতুন জিরগা জানায়, অন্তত ৪ হাজার পশতুন এখনো নিখোঁজ।
মানবাধিকারকর্মী আরিফ আজাকিয়া বলেন, বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে দীর্ঘদিন ধরে সামরিক অভিযান চলছে। সেখানে প্রায়শই বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম এবং নির্যাতনের খবর পাওয়া যায়। নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যরা নিয়মিত প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছেন।
জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ভারতের পাল্টা জবাব
এর আগে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বক্তব্যেরও জবাব দিয়েছে ভারত। ভারতের কূটনীতিক পেতাল গাহলট জানান, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আবারও সন্ত্রাসবাদকে মহিমান্বিত করেছেন, যা তাদের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রে রয়েছে।
গাহলট আরও স্মরণ করিয়ে দেন, পাকিস্তান বহু বছর ধরে সন্ত্রাসবাদ রপ্তানি করে আসছে। তারা ওসামা বিন লাদেনকে এক দশক আশ্রয় দিয়েছিল, অথচ একই সময়ে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে অংশীদার হওয়ার ভান করেছে। পাকিস্তানের মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন, দেশটি দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ শিবির চালিয়েছে।
কাশ্মীর প্রসঙ্গ ও নাটকীয় অভিযোগ
শরিফ ভারতকে অভিযুক্ত করেন যে, পাহালগাম হামলায় ভারত নাকি বেসামরিক নাগরিকদের টার্গেট করেছে এবং পাকিস্তানি বাহিনী ভারতীয় জেট গুলি করে নামিয়েছে। এ অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভাঁওতাবাজি বলে প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত।
গাহলট বলেন, পাকিস্তানের মিথ্যা ও নাটক কোনোভাবেই সত্যকে আড়াল করতে পারবে না। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ২০২৫ সালের ২৫ এপ্রিল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তান একটি পাকিস্তানি-সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠীকে দায়মুক্তি দিয়েছে, যারা জম্মু ও কাশ্মীরে পর্যটক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল।
ভারত জাতিসংঘে পাকিস্তানের মানবাধিকার পরিস্থিতি, সংখ্যালঘু নিপীড়ন ও সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার বিষয়গুলো তুলে ধরে কঠোর সমালোচনা করেছে। আন্তর্জাতিক মহল থেকেও পাকিস্তানের ভেতরের মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা দিক সামনে আনা হয়েছে। ভারতের বক্তব্যে স্পষ্ট বার্তা ছিল—ভণ্ডামি ও মিথ্যা প্রচারণা দিয়ে পাকিস্তান আর বিশ্বের চোখ ফাঁকি দিতে পারবে না।