বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের অগ্রগতি
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ দ্রুত নিজেদের ডিজিটাল মুদ্রা চালু করছে। চীন ইতিমধ্যে ডিজিটাল ইউয়ান ব্যবহার করছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডিজিটাল ইউরোর জন্য কাঠামো তৈরি করেছে, আর ভারত থেকে ব্রাজিল পর্যন্ত বহু দেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা গড়ে তুলছে। এ উদ্যোগগুলোর লক্ষ্য হলো মার্কিন ডলারের প্রভাব কমানো, অর্থনৈতিক লেনদেনে মার্কিন নিয়ন্ত্রণ দুর্বল করা এবং বিশ্বব্যাপী ক্ষমতার ভারসাম্য পুনর্বিন্যাস করা।
মার্কিন সিদ্ধান্ত ও আইনি প্রক্রিয়া
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও কংগ্রেস বর্তমানে শক্তিশালী ক্রিপ্টো লবির প্রভাবে দুটি বড় আইনের মুখোমুখি।
GENIUS আইন (জুলাইয়ে পাসকৃত):
এই আইন বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে স্টেবলকয়েন ইস্যুর সুযোগ দিয়েছে, যা ডলারের সাথে মূল্য সমন্বিত এক ধরনের ক্রিপ্টো।
ডিজিটাল অ্যাসেট মার্কেট ক্লারিটি আইন:
কংগ্রেসে চলমান এই আইন ফেডারেল রিজার্ভকে সরকারিভাবে কোনো ডিজিটাল মুদ্রা ইস্যু বা পরীক্ষার ক্ষমতা থেকে বিরত রাখবে, যদি না কংগ্রেস অনুমোদন দেয়। একই সঙ্গে এর তত্ত্বাবধান সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (SEC) থেকে কমোডিটি ফিউচারস ট্রেডিং কমিশন (CFTC)-এ সরানো হবে, যা ক্রিপ্টো শিল্পের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল হিসেবে পরিচিত।
এটি কার্যকর হলে, যুক্তরাষ্ট্র হবে একমাত্র বড় অর্থনীতি, যা স্বেচ্ছায় সরকার-নিয়ন্ত্রিত ডিজিটাল মুদ্রা থেকে সরে দাঁড়াবে।
ঝুঁকি ও সীমাবদ্ধতা
স্টেবলকয়েনকে যদিও ডলারের সঙ্গে বাঁধা হয়েছে, তবে এগুলো আসলে বেসরকারি টোকেন, রাষ্ট্রীয় অর্থ নয়। ফলে এগুলো কখনোই মুদ্রানীতি নিয়ন্ত্রণ বা সংকট মোকাবিলার কার্যকর উপায় হতে পারবে না।
- ব্যাংক বা ২০০৮ সালের মানি মার্কেট ফান্ড সংকটের মতোই আস্থা হারালে স্টেবলকয়েন ভেঙে পড়তে পারে।
- GENIUS আইন অনুযায়ী, ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুরোপুরি রিজার্ভ রাখতে হবে, তবে সুদ দেওয়ার অনুমতি নেই। এতে ব্যাংকিং লবির লাভ হলেও ব্যবহারকারীদের সীমাবদ্ধতা তৈরি হবে।
- প্রতিটি কোম্পানি ভিন্ন নিয়মে চলবে, ফলে ব্যবহারকারীদের একাধিক ইস্যুকারীদের জটিল ব্যবস্থার মধ্যে থাকতে হবে।
- এগুলোতে কোনো রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি নেই; কোম্পানি ব্যর্থ হলে আমানত হারানোর ঝুঁকি রয়েছে।
কেন প্রয়োজন সরকারি ডিজিটাল ডলার
একটি রাষ্ট্রীয় ডিজিটাল ডলার হলে:
- লেনদেন হবে তাৎক্ষণিক, ২৪ ঘণ্টা, খুব কম খরচে।
- ব্যাংক বা কার্ড নেটওয়ার্কের মতো মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজন পড়বে না।
- কোনো কোম্পানি ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে না।
- বিদেশি লেনদেনে অতিরিক্ত ফি দিতে হবে না।
- সংকটকালে সরকার সরাসরি নাগরিকদের কাছে অর্থ বা সহায়তা পৌঁছে দিতে পারবে।
এমন একটি ব্যবস্থার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সাশ্রয়ী ব্যাংকিং সুবিধা পাবে, সরকারের প্রতি আস্থা বাড়বে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব আরও শক্তিশালী হবে।
রাজনৈতিক অচলাবস্থা
তবে ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক টানাপোড়েন বিষয়টিকে আটকে দিয়েছে।
- ডেমোক্র্যাটরা নাগরিক স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার কারণে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
- রিপাবলিকানরা ‘অতিরিক্ত সরকারি নিয়ন্ত্রণ’-এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
- ক্রিপ্টো সমর্থকেরা মনে করছেন বেসরকারি স্টেবলকয়েন দ্রুত বিকাশ ঘটাতে পারবে এবং সহজে পেপ্যাল বা কয়েনবেসের মতো প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হবে।
কিন্তু ইতিহাস দেখিয়েছে—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন জাতীয় স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেয়, তখন মহাসড়ক নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট কিংবা ফেডারেল রিজার্ভের মতো অবকাঠামো তৈরি করেছে। ডিজিটাল মুদ্রাও হতে পারত সেই ধারাবাহিকতার পরবর্তী ধাপ।
যুক্তরাষ্ট্র যদি রাষ্ট্রীয় ডিজিটাল মুদ্রা থেকে সরে দাঁড়ায়, তবে তা হবে অতীতের নিয়মের ওপর নির্ভর করার এক বড় ভুল। প্রতিদ্বন্দ্বীরা যখন অগ্রসর হচ্ছে, তখন আমেরিকার এই দ্বিধা ভবিষ্যতে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে দেশের প্রভাব কমিয়ে আনতে পারে।