০২:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
শেক্‌সপিয়ারের নীরব স্ত্রীকে কেন্দ্র করে হ্যামনেট: শোকের গল্পে নতুন ভাষা ইভি আমদানি বাড়ায় মানদণ্ড কঠোর করছে ভিয়েতনাম মুদ্রাস্ফীতি কমলেও সুদহার নিয়ে সতর্ক শ্রীলঙ্কা মরুভূমিতে হঠাৎ বন্যা: ওমানে প্রাণঘাতী বৃষ্টির নতুন বাস্তবতা চীনের বিনিয়োগে ঐতিহাসিক মোড়, তিন দশকের ধারাবাহিকতা ভাঙার মুখে অর্থনীতি ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দিয়ে সেভেন সিস্টার্স আলাদা করে দেব সাংবাদিক আনিস আলমগীরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী মামলা প্রত্যাহারের দাবি সম্পাদক পরিষদের সিনিয়র সাংবাদিক আনিস আলমগীর পাঁচ দিনের রিমান্ডে সমালোচনা করা যাবে না- এই বার্তাই কি দেওয়া হলো আনিস আলমগীরের ঘটনায় ড. ইউনূস চাইলে সারা দেশকে কারাগার বানাতে পারেন: আদালতে সাংবাদিক আনিস আলমগীর

ট্রাম্প এবং ফার্মাসিউটিক্যাল খাত

ওষুধের দাম কমানোর উদ্যোগ

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে বিরাট প্রভাব ফেলছে। সম্প্রতি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চিকিৎসা খাতে “অত্যাচার” মতো দাম কমানোর উদ্দেশ্যে কিছু পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন। ২০২৫ সালের ১ অক্টোবর ট্রাম্প “TrumpRx” নামে একটি সরকারি ওয়েবসাইট চালু করেন, যেখানে রোগীরা বড় ছাড়ে ওষুধ পেতে পারেন। তিনি জানিয়েছেন, ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোকে তাদের দাম বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে কম দামে টানতে হবে, না হলে তারা ‘প্রতিরোধের সব উপকরণ’ ব্যবহার করবেন।

ফাইজার কোম্পানি এই উদ্যোগে সাড়া দিয়েছে এবং তাদের শেয়ারের দাম বেড়ে গেছে, অন্য কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামও বেড়েছে। তবে, ট্রাম্পের প্রশাসন বিদেশি কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করছে আমেরিকায় কারখানা নির্মাণের জন্য, এবং অক্টোবর ১ তারিখ থেকে বিদেশি ব্র্যান্ডেড ওষুধের ওপর ১০০% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যদি সেগুলো আমেরিকায় কারখানা নির্মাণ না করে।


ট্রাম্পের পরিকল্পনায় সম্ভাব্য প্রভাব

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই উদ্যোগে অনেক প্রশ্ন উঠেছে, বিশেষত ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর জন্য। বহু বছর ধরে আমেরিকায় ওষুধের দাম অনেক বেশি, তবে ট্রাম্পের “সবচেয়ে পছন্দের দেশ” (MFN) পদ্ধতি আন্তর্জাতিক ফার্মা মডেলকে বিপর্যস্ত করতে পারে। এটি হয়তো আমেরিকায় কম দামের ওষুধ আনবে না, তবে ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পকে আরও সংকটে ফেলতে পারে।

এছাড়া, ট্রাম্পের পরিকল্পনা যদি কার্যকর হয়, তবে তা উন্নত দেশে ওষুধের দাম কমাতে না পারলে আমেরিকার জন্য সমস্যা হতে পারে। এদিকে, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেভিড রিকস সতর্ক করেছেন যে, এই পরিকল্পনা ইউরোপের ধীর উদ্ভাবন পদ্ধতির দিকে আমেরিকাকে নিয়ে যেতে পারে, যার ফলে আমেরিকায় দাম বেশি থেকে যাবে।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ ওষুধের দাম

আমেরিকান রাজনীতিবিদরা দীর্ঘদিন ধরে ওষুধের দামের ওপর আলোচনা করছেন। র‍্যান্ড করপোরেশন নামক চিন্তাধারা প্রতিষ্ঠান এক গবেষণায় জানিয়েছে, আমেরিকায় ওষুধের দাম অন্য সমৃদ্ধ দেশগুলোর তুলনায় তিন গুণ বেশি। অন্যদিকে, আমেরিকা বিশ্বব্যাপী ফার্মাসিউটিক্যাল লাভের ৭০% অর্জন করে, তবে এটি পৃথিবীজুড়ে ওষুধ বিক্রির প্রায় অর্ধেকের সমান। আমেরিকার বাজারে দাম নির্ধারণের পদ্ধতি অনেক জটিল, যেখানে প্রস্তুতকারকরা স্বাস্থ্যবীমা, নিয়োগকর্তা এবং ফার্মেসি সুবিধা ব্যবস্থাপকদের মাধ্যমে কাজ করেন।


ট্রাম্পের পরিকল্পনায় বিপত্তি এবং সম্ভাব্য ফলাফল

ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো ট্রাম্পের MFN পরিকল্পনাকে সম্ভাব্য বিপদের মুখে ফেলতে পারে, যা তাদের ভবিষ্যতের উদ্ভাবন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। গবেষকরা অনুমান করছেন যে, যদি কোম্পানির আয় ১০% কমে, তবে তা উদ্ভাবন কমাতে পারে, বিশেষ করে নতুন ড্রাগ অনুমোদন এবং ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করার ক্ষেত্রে।

ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো এই নতুন উদ্যোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করতে শুরু করেছে, তবে এই চাপের মধ্যে তারা তাদের গবেষণা ও উন্নয়ন কাজ কমিয়ে ফেলতে পারে, যার ফলে নতুন ওষুধের উৎপাদন বিলম্বিত হতে পারে।


ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিবর্তন অনেক উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। যদিও এটি জনগণের জন্য কম দামের ওষুধ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কী হবে তা সময়ই বলবে। এছাড়া, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির আয়ের উপর এর প্রভাব, এবং নতুন ওষুধের বাজারে আসা নিয়ে যেসব শঙ্কা তৈরি হয়েছে, তা সামনে অনেক প্রশ্ন তৈরি করবে।


জনপ্রিয় সংবাদ

শেক্‌সপিয়ারের নীরব স্ত্রীকে কেন্দ্র করে হ্যামনেট: শোকের গল্পে নতুন ভাষা

ট্রাম্প এবং ফার্মাসিউটিক্যাল খাত

১২:৫৭:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫

ওষুধের দাম কমানোর উদ্যোগ

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে বিরাট প্রভাব ফেলছে। সম্প্রতি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চিকিৎসা খাতে “অত্যাচার” মতো দাম কমানোর উদ্দেশ্যে কিছু পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন। ২০২৫ সালের ১ অক্টোবর ট্রাম্প “TrumpRx” নামে একটি সরকারি ওয়েবসাইট চালু করেন, যেখানে রোগীরা বড় ছাড়ে ওষুধ পেতে পারেন। তিনি জানিয়েছেন, ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোকে তাদের দাম বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে কম দামে টানতে হবে, না হলে তারা ‘প্রতিরোধের সব উপকরণ’ ব্যবহার করবেন।

ফাইজার কোম্পানি এই উদ্যোগে সাড়া দিয়েছে এবং তাদের শেয়ারের দাম বেড়ে গেছে, অন্য কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামও বেড়েছে। তবে, ট্রাম্পের প্রশাসন বিদেশি কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করছে আমেরিকায় কারখানা নির্মাণের জন্য, এবং অক্টোবর ১ তারিখ থেকে বিদেশি ব্র্যান্ডেড ওষুধের ওপর ১০০% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যদি সেগুলো আমেরিকায় কারখানা নির্মাণ না করে।


ট্রাম্পের পরিকল্পনায় সম্ভাব্য প্রভাব

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই উদ্যোগে অনেক প্রশ্ন উঠেছে, বিশেষত ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর জন্য। বহু বছর ধরে আমেরিকায় ওষুধের দাম অনেক বেশি, তবে ট্রাম্পের “সবচেয়ে পছন্দের দেশ” (MFN) পদ্ধতি আন্তর্জাতিক ফার্মা মডেলকে বিপর্যস্ত করতে পারে। এটি হয়তো আমেরিকায় কম দামের ওষুধ আনবে না, তবে ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পকে আরও সংকটে ফেলতে পারে।

এছাড়া, ট্রাম্পের পরিকল্পনা যদি কার্যকর হয়, তবে তা উন্নত দেশে ওষুধের দাম কমাতে না পারলে আমেরিকার জন্য সমস্যা হতে পারে। এদিকে, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেভিড রিকস সতর্ক করেছেন যে, এই পরিকল্পনা ইউরোপের ধীর উদ্ভাবন পদ্ধতির দিকে আমেরিকাকে নিয়ে যেতে পারে, যার ফলে আমেরিকায় দাম বেশি থেকে যাবে।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ ওষুধের দাম

আমেরিকান রাজনীতিবিদরা দীর্ঘদিন ধরে ওষুধের দামের ওপর আলোচনা করছেন। র‍্যান্ড করপোরেশন নামক চিন্তাধারা প্রতিষ্ঠান এক গবেষণায় জানিয়েছে, আমেরিকায় ওষুধের দাম অন্য সমৃদ্ধ দেশগুলোর তুলনায় তিন গুণ বেশি। অন্যদিকে, আমেরিকা বিশ্বব্যাপী ফার্মাসিউটিক্যাল লাভের ৭০% অর্জন করে, তবে এটি পৃথিবীজুড়ে ওষুধ বিক্রির প্রায় অর্ধেকের সমান। আমেরিকার বাজারে দাম নির্ধারণের পদ্ধতি অনেক জটিল, যেখানে প্রস্তুতকারকরা স্বাস্থ্যবীমা, নিয়োগকর্তা এবং ফার্মেসি সুবিধা ব্যবস্থাপকদের মাধ্যমে কাজ করেন।


ট্রাম্পের পরিকল্পনায় বিপত্তি এবং সম্ভাব্য ফলাফল

ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো ট্রাম্পের MFN পরিকল্পনাকে সম্ভাব্য বিপদের মুখে ফেলতে পারে, যা তাদের ভবিষ্যতের উদ্ভাবন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। গবেষকরা অনুমান করছেন যে, যদি কোম্পানির আয় ১০% কমে, তবে তা উদ্ভাবন কমাতে পারে, বিশেষ করে নতুন ড্রাগ অনুমোদন এবং ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করার ক্ষেত্রে।

ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো এই নতুন উদ্যোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করতে শুরু করেছে, তবে এই চাপের মধ্যে তারা তাদের গবেষণা ও উন্নয়ন কাজ কমিয়ে ফেলতে পারে, যার ফলে নতুন ওষুধের উৎপাদন বিলম্বিত হতে পারে।


ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিবর্তন অনেক উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। যদিও এটি জনগণের জন্য কম দামের ওষুধ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কী হবে তা সময়ই বলবে। এছাড়া, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির আয়ের উপর এর প্রভাব, এবং নতুন ওষুধের বাজারে আসা নিয়ে যেসব শঙ্কা তৈরি হয়েছে, তা সামনে অনেক প্রশ্ন তৈরি করবে।