ঢাকায় অবস্থানরত মার্কিন সৈনিকের কেউ একজন হয়তো সাতসকালে প্লেনে করে চলে যেতেন সোজা চুংকিং-এ
প্রফেসর করিম জোর দিয়ে বলেন যে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সুবাদে ঢাকা সত্যিকারের আন্তর্জাতিক শহরে পরিণত হয়েছিল। তাঁর স্পষ্ট মনে আছে যে ঢাকা হল ও ফজলুল হক হলের মাঝখানে একটি পুকুর ছিল; আর সেই পুকুরটির ছিল সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো সিঁড়ির ধাপ।
সিঁড়ির ধাপগুলোতে বসে প্রফেসর করিম ও তাঁর বন্ধুরা মার্কিন সৈনিকদের সঙ্গে কতো যে আড্ডা দিয়েছেন, বলবার নয়! অজান্তেই, তাঁদের এই আড্ডাগুলো আন্তর্জাতিক মেজাজের রূপ নিতই নিত। যেমন: সেসময়ে চীনের “কুমিংটন” (চাইনিজ ন্যাশনাল পার্টি) ও কমিউনিস্টদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ চলছিল। দক্ষিণ চীনের মেগাসিটি চুংকিং-এ ছিল চীনের জাতীয়তাবাদি সরকারের প্রধান অফিস।
ঢাকায় অবস্থানরত মার্কিন সৈনিকের কেউ একজন হয়তো সাতসকালে প্লেনে করে চলে যেতেন সোজা চুংকিং-এ; সেখানে দিনভর যুদ্ধটুদ্ধ করে সেদিনই আবার ফিরে আসতেন ঢাকায়; সে-ই সন্ধ্যায় পুকুরের ধাপে- প্রফেসর করিম ও তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে বসে চা খেতে খেতে যুদ্ধের কাহিনি শোনাতেন। বলতেন: “জানো, আজ সকালে প্লেনে করে চুংকিং-এ গিয়েছিলাম?”
“চুংকিং বিমানবন্দরে নামার পর কমিউনিস্টদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ফিসফিস করে মাও সে তুং এবং অন্যান্য কমিউনিস্টদের নাম ধরে ডাকাডাকি করেছি! সেসময়ে চুংকিং-এর সব কমিউনিস্টরা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গিয়েছিলেন। তাদের সদাই ভয় ছিল পাছে না তাদের গোপনীয়তা ফাঁস না হয়ে যায়; তাই তাদের মধ্যে প্রচলিত হুঁশিয়ারি ছিল যে- ‘যে মার্কিন সেনা কথা বলে না তার থেকে সাবধান।’
(চলবে)