আমন্ত্রণ ঘিরে জল্পনা
২০২৫ সালের ১৫ থেকে ১৭ জুন কানাডার আলবার্টার কানানাস্কিসে জি-৭ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তবে ভারত এতে অংশ নেবে কি না তা এখনো অনিশ্চিত, কারণ আয়োজক দেশ কানাডা এখনো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানায়নি।
যদি এবার আমন্ত্রণ না আসে, তবে ২০১৯ সালের পর এটাই হবে প্রথমবার—২০২০ সালে মহামারির কারণে বাতিল হওয়া সম্মেলন ছাড়া—যখন মোদি জি-৭ বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত নিয়মিতভাবে জি-৭-এর আউটরিচ সেশনে অংশ নিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ভারতের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা প্রমাণ করে।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের টানাপোড়েন
এ বছরের বৈঠকটি ভারত-কানাডা সম্পর্কে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আয়োজক দেশ হিসেবে কানাডার হাতে রয়েছে পূর্ণ ক্ষমতা—ভারতকে আমন্ত্রণ জানাবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার।
২০২৩ সালে কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অভিযোগ করেছিলেন, খালিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত এক কানাডিয়ান নাগরিক হত্যার ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। ভারত এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রত্যাখ্যান করে। এরপর থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক ব্যাপকভাবে খারাপ হয়।
কূটনৈতিক টানাপোড়েনের প্রভাব
২০২৩ সালের শেষ দিকে উভয় দেশই তাদের কূটনৈতিক উপস্থিতি কমিয়ে আনে। ভারত তার হাইকমিশনার ও কয়েকজন শীর্ষ কূটনীতিককে ফিরিয়ে নেয়, আর কানাডা সমান সংখ্যক প্রতিনিধিকে দিল্লি থেকে প্রত্যাহার করে। এর ফলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও খারাপের দিকে যায়।
তবে যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। সম্প্রতি দুই দেশের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আবারও আলোচনায় বসেছেন এবং নতুন হাইকমিশনার নিয়োগের বিষয়েও প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়েছে।
সম্ভাব্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত
কানাডার নতুন লিবারেল পার্টির নেতা মার্ক কার্নির নির্বাচিত হওয়া দিল্লিতে কিছুটা আশার সঞ্চার করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি হয়তো সম্পর্ক পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখবেন। তবে ভারতীয় কর্মকর্তাদের মতে, কানাডার নতুন প্রশাসন এখনো ভারতের মূল উদ্বেগ—কানাডায় প্রো খালিস্তানি গোষ্ঠীর কার্যকলাপ—সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
মোদির পূর্ববর্তী অংশগ্রহণ
প্রধানমন্ত্রী মোদি সর্বশেষ ২০২৩ সালে ইতালিতে অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। সেটিই ছিল তার পঞ্চমবার উপস্থিতি। তবে এ বছর কানাডার সঙ্গে চলমান সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে তার যাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জি-৭ সম্মেলনে ভারতের উপস্থিতি কেবল বৈশ্বিক কূটনীতির বিষয় নয়, বরং ভারত-কানাডা সম্পর্কের ভবিষ্যতের প্রতিফলন। আপাতত মোদির কানাডা যাওয়া অনিশ্চিত হলেও, উভয় দেশই যে যোগাযোগের পথ পুরোপুরি বন্ধ করেনি, তা ভবিষ্যতে নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।